
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে বড় পরিবর্তন এনেছে এনসিইআরটি (ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং)। অষ্টম শ্রেণির জন্য সদ্য প্রকাশিত সমাজবিজ্ঞান বই ‘এক্সপ্লোরিং সোসাইটি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড বিয়ন্ড’-এ মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস চিত্রিত হয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে—যেখানে সম্রাট আকবরকে চেনানো হয়েছে একযোগে ‘সহনশীল’ এবং ‘বর্বর’ হিসেবে।
বইটিতে মোগল সম্রাট বাবরকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘সংস্কৃতিমনস্ক বুদ্ধিজীবী শাসক’ হিসেবে, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ‘নিষ্ঠুর বিজেতা’, যিনি শহরের সব বাসিন্দাকে হত্যা করেছিলেন, শিশু ও নারীদের দাসে পরিণত করেছিলেন, এমনকি মৃত মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তোরণ নির্মাণ করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্রাট আকবরকে দেখানো হয়েছে ‘সহনশীলতা ও বর্বরতার দ্বৈত প্রতিমূর্তি’ হিসেবে। বলা হয়েছে, তার শাসনামলে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অমুসলিমদের সংখ্যা কমে যায় এবং চিতোরগড় অভিযানে তিনি ৩০ হাজার নিরস্ত্র মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আওরঙ্গজেব সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তিনি ছিলেন ‘নির্দয় সামরিক শাসক’, যিনি একের পর এক মন্দির ও গুরুদ্বার ধ্বংস করেছেন।
এই পাঠ্যবইয়ের একটি বিশেষ অধ্যায়ের শিরোনাম *‘নোট অন সাম ডার্কার পিরিয়ডস ইন হিস্ট্রি’*, যেখানে যুদ্ধ, সহিংসতা ও ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্মসূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, "অতীতের এই ঘটনার জন্য আজ কাউকে দায়ী করা উচিত নয়, বরং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন।"
বইয়ে ‘জিজিয়া কর’ সম্পর্কেও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এটি ছিল এক ধরনের বৈষম্যমূলক কর, যা অমুসলিমদের ওপর চাপানো হতো। কর না দিতে চেয়ে অনেক অমুসলিম ধর্মান্তর হতে বাধ্য হতেন।
তবে বইয়ের পুরো ইতিহাস শুধু মোগলদের নিপীড়নের দিক নিয়ে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এতে মারাঠা, অহম, রাজপুত, শিখ, জাট, ভিল, গোন্ড, সাঁওতাল ও কোচ জাতিগোষ্ঠীর বীরত্বগাথাও তুলে ধরা হয়েছে। ছত্রপতি শিবাজি, তারাবাঈ, আহিল্যাবাঈ হোলকারদের দুরদর্শী নেতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যারা ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
বিশেষভাবে ছত্রপতি শিবাজিকে চিত্রিত করা হয়েছে ‘দুর্দান্ত কুশলী নেতা’ হিসেবে, যিনি "অন্য ধর্মকে সম্মান করতেন এবং হিন্দু মূল্যবোধের ধ্বজা তুলে ধরেছিলেন।"
এনসিইআরটির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যসূচির অন্যতম প্রধান মাইকেল ড্যানিনো এই পরিবর্তনকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, "মোগলদের দানব হিসেবে তুলে ধরার কোনো ইচ্ছা ছিল না। বরং ইতিহাসকে পূর্ণাঙ্গভাবে জানানোই লক্ষ্য।"
এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বি এল ভার্মা বলেন, "মোগলরা দীর্ঘ সময় ভারতে রাজত্ব করেছে। নতুন প্রজন্মের জানা উচিত, সেই সময়কালে কী ঘটেছিল। আমাদের সত্য গ্রহণ করতে হবে।"
ছামিয়া