ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

পশ্চিমা সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করলে তাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫

পশ্চিমা সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ করলে তাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পরমাণু স্থাপনায় সাম্প্রতিক ইসরায়েলি ও মার্কিন হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্ট কানাডীয় আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী দিমিত্রি লাসকারিস। তেহরান টাইমসকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "ইসরায়েল যদি পশ্চিমা সমর্থন ছাড়া এককভাবে ইরান আক্রমণ করত, তবে তাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত।"

লাসকারিস দাবি করেন, এই হামলা ছিল না শুধুই ইসরায়েলের পক্ষ থেকে, বরং এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের যৌথ পরিকল্পিত আগ্রাসন, যেখানে ইসরায়েল ছিল কেবলমাত্র একটি 'প্রক্সি শক্তি'। তার মতে, ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা ছিল যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ।

তিনি আরও বলেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হলেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও আইএইএ (IAEA) কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈত নীতির অংশ হিসেবে এই অপরাধগুলোকে আড়াল করা হয়েছে।

লাসকারিস বলেন, "ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংস করতে, পরমাণু কর্মসূচি থামাতে এবং দেশকে বিভক্ত করতে। কিন্তু তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। ইরান বরং আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছে।"

তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম এসব ব্যর্থতাকে ‘জয়’ হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা সত্যের পুরো বিপরীত। “এটা যেন কালোকে সাদা বলা,” বলেন লাসকারিস।

তিনি বলেন, আইএইএ ও জাতিসংঘ পশ্চিমা শক্তির দ্বারা প্রভাবিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট। “আইএইএর বর্তমান নেতৃত্ব ইসরায়েলকে গোপনে তথ্য সরবরাহ করেছে, যা ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যায় ব্যবহার হয়েছে,” বলেন তিনি।

তার পরামর্শ, ইরানকে আইএইএর সঙ্গে সমস্ত সহযোগিতা স্থগিত করা উচিত, এবং আন্তর্জাতিক মহলে আইনি লড়াই অব্যাহত রাখা উচিত।

যদিও তিনি নিজে পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে, তবুও লাসকারিস মনে করেন, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ইরানের জন্য একটি পারমাণবিক প্রতিরোধ শক্তি থাকা “বিবেচ্য” হতে পারে।
"যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলোর হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকলেও তারা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের কোনও বাস্তব উদ্যোগ নেয়নি।"

চীন ও রাশিয়া কড়া ভাষায় হামলার নিন্দা জানালেও তারা এখনো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি বলে উল্লেখ করেন লাসকারিস। তার মতে, “তারা যদি সত্যিই আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, তাহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত।”

“ইরানি জনগণ শুধু গর্বিতই নয়, তারা নিজেদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অসম সাহস দেখিয়েছে,” বলেন লাসকারিস।
তার মতে, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ভুল ধারণা ছিল যে, ইরানি জনগণ বিভক্ত ও দুর্বল। অথচ এই হামলার মুখে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে রক্ষা করেছে।

ইসরায়েলের কথিত ‘লেবানন মডেল’ প্রসঙ্গে লাসকারিস বলেন, “এটি একটি প্রতারণামূলক কৌশল। তারা চায় ইরান চুপ থাকবে, আর নিজেরা ইচ্ছেমতো আক্রমণ চালিয়ে যাবে। কিন্তু ইরান তা মেনে নেবে না।”

তিনি আশঙ্কা করেন, ইসরায়েল ভবিষ্যতেও ইরানে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিতে পারে, শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যাচেষ্টা করতে পারে এবং গোপন হামলা চালাতে পারে।

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পশ্চিমা বিশ্বের যুদ্ধনীতি, মিডিয়ার পক্ষপাত, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা—সব মিলিয়ে বর্তমান বৈশ্বিক শৃঙ্খলা মারাত্মক প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

শিহাব

×