ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

৯০% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির হুমকি ইরানের, পশ্চিমা বিশ্বে চরম উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৭ জুলাই ২০২৫

৯০% ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির হুমকি ইরানের, পশ্চিমা বিশ্বে চরম উদ্বেগ

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তির আধিপত্য রুখতে ইরানের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠছে পারমাণবিক প্রযুক্তি। এবার তেহরান জানিয়ে দিয়েছে, তারা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পথে এগোবে—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পূর্বশর্ত। একইসাথে, জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ-এর সঙ্গে করা এনপিটি (NPT) চুক্তি থেকেও সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। এই ঘোষণায় ইউরোপ ও মার্কিন বলয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসনেও থামানো যায়নি ইরানের অবস্থান। সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ইরানকে ঘিরে আবারো আগ্রাসন চালানো হলে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।” এবার শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল নয়, ইউরোপকেও আক্রমণের পরোক্ষ হুমকি দিল তেহরান।

সম্প্রতি ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন নোয়েল ব্যারট জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ইরান লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেন, আগামী আগস্টের মধ্যে সমঝোতা না হলে জাতিসংঘের সহায়তায় ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ফরাসি হুমকির প্রেক্ষিতেই ইরান ঘোষণা দেয়, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশে উন্নীত করবে।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল। একইসাথে ইরানের আইআরজিসি (Islamic Revolutionary Guard Corps) নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ জানায়, যদি পশ্চিমাদের হুমকি অব্যাহত থাকে, তাহলে ইরান এনপিটি চুক্তি থেকেও বেরিয়ে আসার পদক্ষেপ নিতে পারে। যা সরাসরি পরমাণু অস্ত্র তৈরির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকী বলেন, “পশ্চিমারা একটি ঐতিহাসিক ভুল করতে যাচ্ছে। তারা যদি আবারো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তবে ইউরোপের ভূমিকা ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে শেষ হয়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, ইউরোপ যদি নিষেধাজ্ঞা দেয়, ইরান সেটিকে সামরিক হামলার শামিল বলেই বিবেচনা করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইরান একটি পারমাণবিক চুক্তি করে। এর আওতায় ইরানের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় এবং বিনিময়ে তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে সম্মত হয়। তবে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে সেই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর থেকেই চুক্তিটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং ইরান ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে মনোযোগী হয়।

ইরানের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে এই সংকটকে ঘিরে আবারও একটি বৈশ্বিক কূটনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেখ ফরিদ 

×