ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

সকালে গোসল না করলে কী ঘটে শরীরে? বিজ্ঞান কী বলে?

প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ১৭ জুলাই ২০২৫

সকালে গোসল না করলে কী ঘটে শরীরে? বিজ্ঞান কী বলে?

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা বা নাস্তার আগেই অনেকেই গোসল করে নেওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করেছেন। আবার কেউ কেউ ব্যস্ততা, ঠান্ডা বা আলস্যের কারণে গোসল এড়িয়ে যান। কিন্তু আপনি জানেন কি, প্রতিদিন সকালে গোসল না করলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে? বিজ্ঞান বলছে, শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্যই নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও সকালের গোসল অত্যন্ত জরুরি। এখন দেখা যাক, যদি আপনি প্রতিদিন সকালে গোসল না করেন, তাহলে শরীরে কী কী প্রভাব পড়ে।

প্রথমেই বলা যায়, গোসল না করলে শরীরের ত্বকে ঘাম, ধুলোবালি ও মৃত কোষ জমে যায়। রাতে ঘুমের সময় আমাদের শরীর থেকে ঘাম বের হয় এবং ত্বকের উপরিভাগে তৈলাক্ত ভাব তৈরি হয়। এই ঘাম ও তেল যদি সকালে পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে ত্বকের রন্ধ্রগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ব্রণ, চুলকানি, ফুসকুড়ি বা ছত্রাকজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের তৈলাক্ত ত্বক বা সংবেদনশীল ত্বক রয়েছে, তাদের জন্য সকালে গোসল করা আরও বেশি প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত, সকালে গোসল না করলে শরীরে দুর্গন্ধ হতে পারে। রাতে ঘুমের পর শরীরে জমে থাকা ঘাম ও তেল ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ত্বকে বাসা বাঁধে এবং দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। গোসল না করলে এই ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে যায় না, ফলে সারাদিন আপনি অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন এবং সামাজিক পরিস্থিতিতেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে পারেন।

তৃতীয়ত, সকালের গোসল আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে চাঙ্গা করে তোলে। গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে ওঠে। এর ফলে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি ও কাজের উদ্যম বাড়ে। সকালের গোসল আমাদের মন-মেজাজও ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি আনে এবং হতাশা বা দুশ্চিন্তার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।

চতুর্থত, যাদের হাঁপানি, সর্দি-কাশি বা ধুলাবালির অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা যদি সকালে গোসল না করেন, তাহলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, রাতে শরীরে জমে থাকা ধুলা, ঘাম ও অ্যালার্জেন ধুয়ে না গেলে তা শ্বাসতন্ত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সকালের গোসল এইসব অ্যালার্জেন দূর করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার রাখে।

পঞ্চমত, সকালের গোসল শরীরের বিপাক ক্রিয়া (মেটাবলিজম) সক্রিয় করে তোলে। গোসলের পর শরীর এক ধরনের সতেজতা অনুভব করে, যা সারাদিনের কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করেন বা কঠিন পরিশ্রমের কাজে যুক্ত, তাদের জন্য গোসল এক ধরনের পুনরুজ্জীবনের মতো কাজ করে। এটি পেশির ক্লান্তি কমায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।

অনেকেই মনে করেন রাতে গোসল করলেই যথেষ্ট। যদিও রাতে গোসল করলে দিনের ধুলো-ময়লা পরিষ্কার হয় এবং ঘুম ভালো হয়, কিন্তু সকালের গোসলের উপকারিতা সম্পূর্ণ আলাদা। এটি শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং শরীর-মনকে কর্মক্ষম করে তোলে।

তবে এই কথাও সত্যি, ঠান্ডা আবহাওয়ায় বা অসুস্থ অবস্থায় প্রতিদিন গোসল করা সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখ, হাত, গলা ও শরীরের খোলা অংশ গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে মুছে নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবু নিয়মিত গোসলের অভ্যাস শরীর ও মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

সকালের গোসল একটি সহজ অভ্যাস হলেও এর সুফল অনেক। এটি শরীর ও মনের জন্য প্রাকৃতিক থেরাপির মতো কাজ করে। বিজ্ঞানও এই অভ্যাসকে সমর্থন করে। তাই যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, দিনে মাত্র ১০ মিনিট সময় বের করে গোসল করে নেওয়া আপনার জীবনকে আরও সুস্থ, সতেজ ও উজ্জ্বল করে তুলতে পারে।

এম.কে.

×