
ছবি: প্রতীকী
অনেকেই আছেন যাঁরা প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে ভয় বা অস্বস্তি বোধ করেন। মনে হয়, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, যদি ভুল করি? যদি কথায় আটকে যাই? যদি কেউ এমন প্রশ্ন করে যার উত্তর জানা নেই? এসব ভয় একদম স্বাভাবিক। কিন্তু ভয় পেয়ে থেমে গেলে চলবে না। প্রেজেন্টেশন একধরনের দক্ষতা, যেটা চর্চা করলে আয়ত্তে আনা সম্ভব। এই লেখায় আমরা জানব ৩টি মানসিক প্রস্তুতির কৌশল, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি নিজেকে অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে করবেন এবং প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ভয় অনেকটাই কমে যাবে।
প্রথম কৌশল হলো, মনে করুন আপনি যা বলবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময়েই আমরা নিজেকে ছোট ভাবি, ভাবি আমার কথা কেউ শুনবে না, আমার কথার মূল্য নেই। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। আপনি যখন প্রেজেন্টেশন দিতে যাচ্ছেন, তার মানে আপনি কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর কাজ করেছেন বা কিছু জানেন, যেটা অন্যরা এখন জানতে চায়। তাই প্রথমেই নিজের চিন্তা বদলান। ভাবুন, আপনি শ্রোতাদের উপকার করতে যাচ্ছেন। আপনি কিছু জানেন যা তারা জানতে চায়। এই মানসিক অবস্থান আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। মনে রাখবেন, শ্রোতারা আপনার শত্রু না। তারা চায় আপনি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন। তাই ভয় নয়, বরং নিজেকে সাহায্যকারী হিসেবে ভাবুন।
দ্বিতীয় কৌশল হলো, প্রেজেন্টেশনকে গল্প হিসেবে দেখুন। আমরা যখন গল্প বলি, তখন কিন্তু খুব সহজেই বলতে পারি। কারণ গল্পে আবেগ থাকে, যুক্তি থাকে, একটা ধারাবাহিকতা থাকে। আপনার প্রেজেন্টেশনটাকেও গল্পের মতো সাজান। মনে করুন, আপনি শ্রোতাদের একটা যাত্রায় নিয়ে যাচ্ছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি একটা বিষয় বোঝাচ্ছেন, যেন তারা একটা ছবি আঁকতে পারে মনে মনে। এইভাবে প্রেজেন্টেশন তৈরি করলে আপনি নিজেও বিষয়টা ভালো করে বুঝতে পারবেন এবং বলতেও সহজ লাগবে। প্রেজেন্টেশনের প্রতিটা পয়েন্ট মনে রাখার চেয়ে বিষয়টা বুঝে নিয়ে সহজ ভাষায় নিজের মতো করে বলার চেষ্টা করুন।
তৃতীয় কৌশলটি হলো, নেগেটিভ চিন্তা কমিয়ে পজিটিভ চিন্তা বাড়ানো। যখন প্রেজেন্টেশনের আগে ভাবেন "আমি পারব না", "সবাই হাসবে", তখন মস্তিষ্কে ভয় তৈরি হয়। এটা বন্ধ করতে হলে নিজেকে ইতিবাচক কথা বলুন। যেমন: "আমি প্রস্তুতি নিয়েছি", "আমি জানি আমি কী বলতে যাচ্ছি", "আমি শান্ত থাকব", "ভুল হলেও আমি সামলে নিতে পারব" — এমন সব বাক্য নিজেকে বলুন বারবার। আপনি চাইলে একটি ছোট ‘পজিটিভ মন্ত্র’ তৈরি করতে পারেন, যেমন "আমি প্রস্তুত, আমি পারব"। প্রতিবার প্রেজেন্টেশনের আগে নিজেকে এই কথাগুলো বললে ধীরে ধীরে মনের ভয় কমে যাবে।
এই তিনটি কৌশল — নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রেজেন্টেশনকে গল্প ভাবা, এবং ইতিবাচক চিন্তা চর্চা — যদি নিয়মিত চর্চা করেন, তাহলে প্রেজেন্টেশন দিতে ভয় পাওয়াটা অনেকটাই কমে যাবে। শুরুতে হয়তো একটু কষ্ট হবে, একটু ভয়ও থাকবে, কিন্তু ধীরে ধীরে আপনি দেখবেন, আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। মনে রাখবেন, ভয় থাকা দোষ নয়, কিন্তু ভয়কে জিতে যাওয়াই হলো আসল সাহস।
আপনি যদি সত্যিই প্রেজেন্টেশনে ভালো হতে চান, তাহলে শুধু মানসিক প্রস্তুতি নয়, নিয়মিত অনুশীলনও জরুরি। বন্ধুদের সামনে, আয়নায় দাঁড়িয়ে, বা ফোনে রেকর্ড করে প্র্যাকটিস করতে পারেন। আপনার আত্মবিশ্বাস যত বাড়বে, ভয় তত কমবে। নিজেকে ভালোবাসুন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। আপনি পারবেন।
এম.কে.