ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

নতুন যুগের সূচনা, আমেরিকার কাছ থেকে ১০টি F-35A স্টেলথ যুদ্ধবিমান কিনছে ডেনমার্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৫৬, ১০ জুলাই ২০২৫

নতুন যুগের সূচনা, আমেরিকার কাছ থেকে ১০টি F-35A স্টেলথ যুদ্ধবিমান কিনছে ডেনমার্ক

ছবিঃ সংগৃহীত

ডেনমার্ক সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্তত ১০টি অতিরিক্ত F-35A স্টেলথ যুদ্ধবিমান ক্রয় করতে চায়। ডেনিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ট্রোলস লুন্ড পউলসেন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এই নতুন কেনাকাটা অক্টোবরের আগেই সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন লাইনে এখন যে খালি সুযোগ রয়েছে, সেটি কাজে লাগানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ডেনমার্কের প্রতিনিধি দল—যার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মাইকেল হিলগার্ডও ছিলেন—এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বর্তমানে মার্কিন নির্মাতা লকহিড মার্টিনের উৎপাদন লাইন অপেক্ষাকৃত চাপমুক্ত থাকায়, এখনই অর্ডার দিলে ভবিষ্যতের বিলম্ব এড়ানো সম্ভব।

জাতীয় নিরাপত্তা ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া
নতুন F-35A যুদ্ধবিমানগুলো ডেনমার্কের Quick Reaction Alert (QRA) ব্যবস্থায় যুক্ত হবে, যা মূলত বিদেশি, বিশেষ করে রাশিয়ার সামরিক বিমান প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়। ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই দুটি ডেনিশ F-35 প্রথমবার এই ধরনের মিশনে অংশ নেয়, যখন তারা বাল্টিক সাগরের ওপর একটি রাশিয়ান বিমানকে বাধা দেয়।

মন্ত্রী পউলসেন বলেন, “আমরা প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ন্যাটোর নতুন লক্ষ্য পূরণ করতে চাই।” এই নতুন বিমানগুলো শুধু নিয়মিত আকাশ টহলেই নয়, বরং সংকট এবং যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিমানের সংখ্যা বাড়ছে
ডেনমার্ক আগে ২৭টি F-35A কিনেছিল। এখন নতুন ১০টি যোগ হলে মোট সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত ৩৭-এ। এর মধ্যে ১৫টি বিমান ইতিমধ্যে ডেনমার্কে এসেছে এবং আরও ছয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় লুক এয়ার ফোর্স বেসে অবস্থান করছে, যেখানে ডেনিশ পাইলটদের প্রশিক্ষণ চলছে।

প্রোগ্রামের ইতিহাস
ডেনমার্ক ২০০২ সালে F-35 প্রোগ্রামে অংশ নেয় এবং ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ২৭টি যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, যার আনুমানিক মূল্য ছিল ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রথম বিমানগুলো আসে ২০২৩ সালে। মাঝখানে TR-3 সফটওয়্যার আপগ্রেডের কারণে কিছুটা দেরি হলেও এখন সবকিছু আবার সময়মতো চলছে।

প্রযুক্তিগত সক্ষমতা
F-35A হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক স্টেলথ যুদ্ধবিমান। এটি ১,৯৬০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে উড়তে পারে এবং ১,০০০ কিমি’র বেশি যুদ্ধ রেঞ্জ রয়েছে। এতে রয়েছে আধুনিক সেন্সর সিস্টেম, যেমন AESA রাডার, DAS, এবং EOTS। এতে অভ্যন্তরীণভাবে প্রায় ২,৫৮৫ কেজি এবং সর্বমোট ৮,১৬৫ কেজি অস্ত্র বহনের ক্ষমতা আছে। এই যুদ্ধবিমান শুধু শক্তিশালী নয়, এটি মাল্টি-ডোমেইন অপারেশনের জন্য তৈরি, যার মানে এটি অন্যান্য বাহিনীর সাথেও সমন্বয় করে কাজ করতে পারে।

দেশীয় প্রস্তুতি ও অবকাঠামো
Fighter Wing Skrydstrup-এ নতুন অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, এবং উত্তর সাগরের উপর প্রশিক্ষণের জন্য আকাশসীমা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিমানগুলো ব্যবহার উপযোগী করার জন্য ২০১৭ সাল থেকেই বাজেট বরাদ্দ ছিল, যা চলবে ২০২৬ পর্যন্ত। এরই মধ্যে বিমানগুলো ন্যাটো অনুশীলনেও অংশ নিয়েছে।

শিল্প খাতের অবদান
ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান Terma এবং Systematic F-35 প্রোগ্রামের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং সফটওয়্যার সরবরাহ করে। ২০২৫ সাল থেকে, ইউরোপীয় F-35 বহরের জন্য Avionics Test Center Denmark চালু হয়েছে, যা তেরমা এবং Scandinavian Avionics-এর যৌথ উদ্যোগ।

প্রতিরক্ষা বাজেট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডেনমার্ক ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ৩% বরাদ্দ দিয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ২ বিলিয়ন ডলারের একটি উদ্যোগও অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি, ডেনমার্ক পুরনো F-16 যুদ্ধবিমানগুলো ইউক্রেনে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে তাদের প্রতিরক্ষাও জোরদার হয়।

সংক্ষেপে, ডেনমার্কের এই নতুন F-35A ক্রয় পরিকল্পনা কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং একটি বৃহত্তর কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের অংশ—যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা, ন্যাটো প্রতিশ্রুতি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
 

 
 

মারিয়া

×