ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

জুলাই আতঙ্কে কাঁপছে জাপান

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ৯ জুলাই ২০২৫

জুলাই আতঙ্কে কাঁপছে জাপান

ছবি: সংগৃহীত

 নতুন সূর্য ওঠার আগেই যেন টোকিওর আলো ঝলমলে শহরে শোনা যাচ্ছে এক অদৃশ্য পদধ্বনি। এখনো রাস্তাঘাট স্বাভাবিক, মানুষ ঘুরছে কাজেকর্মে। কিন্তু দক্ষিণের আকাশে জমেছে এক চাপা আতঙ্ক।

কাগোশিমা প্রদেশের একটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ আকুসেকি গত ২১ জুন থেকে এখন পর্যন্ত কেঁপেছে প্রায় ১৬০০ বার। ভূমিকম্পের এই ঘন ঘন কম্পনে যেন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে একটি প্রশ্ন—এ কি কেবল ভূগর্ভের খেলা, নাকি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে ২৫ বছর আগে আঁকা এক মাঙ্গার ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী?

১৯৯৯ সালে প্রকাশিত জাপানি কমিক “দ্য ফিউচার আইসো”-তে শিল্পী রিউ তাৎসুকি আঁকেন এমন এক দৃশ্য, যেখানে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে জাপানে ঘটে ভয়াবহ বিপর্যয়। আজ সেই জুলাই মাসে, সেই ভূমিকম্পের দেশেই প্রকৃতি যেন নিঃশব্দে ধাক্কা দিচ্ছে সেই কল্পনার দরজায়।

রাতভর কাঁপছে আকুসেকি দ্বীপ, জেগে উঠছে ঘুমহীন মানুষ। গভীর সমুদ্রের নিচ থেকে উত্তপ্ত লাভার তাপ যেন উঁকি দিচ্ছে পাথরের স্তর ভেদ করে। মেয়র জ্ঞানী চির কুরু বলেন, “আমরা জানি না কবে থামবে এই কম্পন। জানি না সামনে কী অপেক্ষা করছে।”
৮৯ জনের দ্বীপ থেকে ইতোমধ্যেই সরে গেছেন ৪৪ জন বাসিন্দা। ফেরি ছাড়ার সময় কারো চোখে জল, কারো মুখে আতঙ্ক—“এ কি শুধুই ভূমিকম্প?”

জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সির ভূকম্প বিশেষজ্ঞ আয়াতাকা এবিতা স্বীকার করেছেন, “আমাদের বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা বলতে পারি না কখন, কোথায়, কত বড় কম্পন হবে। তথ্যে বিশ্বাস রাখুন, ভয় ছড়াবেন না।”
কিন্তু মানুষ কি শুধুই তথ্যে ভরসা রাখে?

সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে—একদিকে রিক্টার স্কেলের হিসাব, অন্যদিকে মাঙ্গার পাতা। অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন দুইয়ের মধ্যে রহস্যময় এক মিল।
হংকং থেকে জাপানে পর্যটক সংখ্যা কমেছে ১১ শতাংশ। বিমানবন্দরে দেখা যাচ্ছে ফাঁকা সিট। বুকিং বাতিলের হিড়িক।
জাপান প্রতিবছর হাজারের বেশি ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে যায়। তারা জানে কাঁপন সামাল দিতে। তবুও, এবারের জুলাই কিছুটা আলাদা।

বিজ্ঞান বলছে—সব স্বাভাবিক, বড় কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু প্রকৃতি তো সব সময় নিয়ম মেনে চলে না।
আর ঠিক তখনই প্রশ্ন জেগে ওঠে—কল্পনার মেঘে কি সত্যিই বজ্রপাত হতে চলেছে?

 

শেখ ফরিদ 

×