ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের F-35A এবং রাশিয়ার Su-57E যুদ্ধবিমান প্রস্তাব বাতিল করছে ভারত, এবার কেন নজর FGFA-ভিত্তিক স্টেলথ ফাইটারের দিকেই

প্রকাশিত: ১৮:০২, ৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৫, ৮ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের F-35A এবং রাশিয়ার Su-57E যুদ্ধবিমান প্রস্তাব বাতিল করছে ভারত, এবার কেন নজর FGFA-ভিত্তিক স্টেলথ ফাইটারের দিকেই

ছবিঃ সংগৃহীত

একটি অসমর্থিত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে—ভারত শিগগিরই কোনো মিত্র দেশের কাছ থেকে স্টেলথ ফাইটার (চতুর্থ বা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান) কিনতে পারে। যদিও খবরটির পক্ষে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই, তবুও এর মধ্যে যথেষ্ট যুক্তি আছে। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত অনেক সময়ই যুক্তির চেয়ে রাজনীতি ও কূটনৈতিক ইঙ্গিতেই চলে।

আন্তর্জাতিক চাপ ও ভারসাম্যের খেলা
ভারতের পরিস্থিতি অনেক জটিল। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, অন্যদিকে রাশিয়ার মতো পুরনো মিত্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।

এজন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে F‑35A যুদ্ধবিমান নেওয়ার আলোচনা চলেছে। কিন্তু, সেই বিমানের সঙ্গে বড় শর্ত জুড়ে দেওয়া হতে পারে—যেমন, রাশিয়ার তৈরি S‑400 মিসাইল সিস্টেম বাদ দিয়ে আমেরিকার THAAD সিস্টেম নিতে হবে।

এটা ভারতের জন্য কঠিন। কারণ THAAD সিস্টেম খুব ব্যয়বহুল, আর ভারতের সীমান্ত এত দীর্ঘ যে এত ব্যাটারি বসানো সম্ভব নয়। উপরন্তু, ভারত প্রতিরক্ষা বিষয়ে অঙ্গীকার করলে সেটা থেকে সহজে পিছিয়ে আসে না—যেমনটা একবার বলেছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান, বলিউডের এক ডায়লগ উদ্ধৃত করে:
“একবার যা কমিটমেন্ট করেছি, তারপর আমি নিজের কথাও শুনি না।”

তাহলে কি রাশিয়ার Su‑57 কেনা হবে?
অনেকে ভাবছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের F‑35 বাদ যায়, তবে কি রাশিয়ার Su‑57 কেনা হবে?

না, সরাসরি Su‑57 কিনে নেওয়া সম্ভবত হবে না। ভারতের চাহিদা একটু আলাদা—IAF (ভারতীয় বিমানবাহিনী) চাইছে এমন একটি বিমান যেটি:

  • স্টেলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন,
  • দুই-ইঞ্জিনবিশিষ্ট এবং
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—দুই সিটের।

Su‑57 বর্তমানে এক সিটের। তবে এই বিমানটির উপর ভিত্তি করেই ভারত ও রাশিয়া এক সময় মিলে FGFA (Fifth Generation Fighter Aircraft) তৈরি করার কথা ভাবছিল। সেই প্রকল্প ভারত ২০১৮ সালে ছেড়ে দেয়, কারণ সে সময় বিমানটি যথেষ্ট উন্নত ছিল না, এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা যেমন সুপারক্রুজ (সাউন্ডের চেয়ে দ্রুত গতিতে দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারা) ছিল না।

তবে ভারত প্রকল্প একেবারে বন্ধ করেনি। তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন—“আমরা এখন না বলেছি, কিন্তু ভবিষ্যতে আবার ফিরে আসতে পারি।”

Su‑57 এর নতুন দুই-সিট সংস্করণ—ভারতের জন্য আদর্শ?
গত কয়েক বছরে রাশিয়া Su‑57-এর অনেক উন্নতি করেছে। এখন এটি নতুন ইঞ্জিন ("Izdeliye 30")-এর পরীক্ষায় আছে, যা সুপারক্রুজে সক্ষম। এবং যুদ্ধক্ষেত্রে এটি ব্যবহারও করা হয়েছে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় খবর হলো—রাশিয়া এখন একটি দুই-সিটের Su‑57 তৈরি করছে, যার পেটেন্টও প্রকাশিত হয়েছে। এই সংস্করণই হতে পারে ভারতের জন্য সবচেয়ে যৌক্তিক পছন্দ।

কেন এই দুই-সিট Su‑57 ভারতের পক্ষে উপযুক্ত?
সহজ প্রশিক্ষণ:
দুই সিটের বিমানে এক পাইলট নতুন প্রযুক্তি শিখতে পারেন আরেকজনের সহায়তায়।

কমান্ড ও কন্ট্রোল:
একজন পাইলট উড়ান সামলান, অন্যজন মিশনের কৌশল বা ড্রোন পরিচালনা করেন।
Su‑57 ভবিষ্যতে ড্রোন ‘উইংম্যান’ (যেমন S-70 Okhotnik) নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম হতে পারে।

নেটওয়ার্ক-সেন্ট্রিক যুদ্ধ:
Su‑30MKI, Rafale, ভবিষ্যতের AMCA এবং ড্রোন—সব কিছুকে একসাথে লড়াইয়ে যুক্ত করতে পারে।

দীর্ঘ-পাল্লার হামলা:
দুই পাইলট থাকায়, আরও বেশি অস্ত্র বহন করে গভীর শত্রু-ভূমিতে হামলা চালাতে সক্ষম।

ভারতের প্রয়োজনীয়তা ও বর্তমান বাস্তবতা
ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান—AMCA—আসতে এখনও অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে।
অন্যদিকে, ১১৪টি মাল্টিরোল ফাইটার কেনার MRFA প্রকল্পও বিলম্বিত।

এই অবস্থায়, Su‑57-এর দুই সিটের একটি সীমিত সংখ্যক (ধরা যাক ১৮–২৪টি) বিমান ভারতের প্রয়োজন মেটাতে পারে।

রাশিয়া এয়ারক্রাফটের কিছু অংশ ভারতে তৈরি করার সুযোগও দিতে পারে—যেমন অ্যাসেম্বলি, মেইনটেনেন্স, কিংবা ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন।


সামগ্রিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, F‑35A নিয়ে কূটনৈতিক সুবিধা থাকলেও তার সঙ্গে অনেক কঠিন শর্ত জুড়ে রয়েছে। Su‑57 দুই-সিট সংস্করণে বরং ভারতে যেটা প্রয়োজন—সেটা পাওয়া যাচ্ছে।

এটা ভারতের জন্য শুধু মধ্যবর্তী সমাধান নয়—বরং ভবিষ্যতের যুদ্ধপদ্ধতির জন্য একটি শক্ত ভিত্তিও হতে পারে।
 

 
 
 

মারিয়া

×