ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের মাটিতে বসেই ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ড্রোন তৈরি করেছে ইসরায়েলের মোসাদ, ভিডিও প্রকাশ

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:০০, ১৪ জুন ২০২৫

ইরানের মাটিতে বসেই ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ড্রোন তৈরি করেছে ইসরায়েলের মোসাদ, ভিডিও প্রকাশ

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলে শুক্রবার ছিল উৎসবের দিন। কারণ অনেকের চোখে, দেশের বহুল আলোচিত গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ (Mossad) আবারও এক বিস্ময়কর সাফল্যের নজির গড়েছে।

প্রথমে ইসরায়েলের ২০০টি যুদ্ধবিমান ইরানের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এরপর দেশটির কর্মকর্তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়, মোসাদ এজেন্টরা ইরানের মাটিতে ঢুকে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক ড্রোন তৈরি করছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, তেহরানের কাছাকাছি জায়গায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত এই অস্ত্রগুলো।

ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই হামলার জন্য অস্ত্র ও ড্রোন আগেই ট্রাকের মাধ্যমে ইরানে পাচার করা হয়েছিল এবং একটি গোপন ড্রোন ঘাঁটি তৈরি করা হয় তেহরানের কাছাকাছি। এখান থেকেই ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়।

প্রায় ৮০ বছর ধরে মোসাদ যেভাবে গোপন অভিযান পরিচালনা করে আসছে, তার সঙ্গে এই প্রকাশ্য ভিডিও প্রকাশের ঘটনা অনেকটাই ব্যতিক্রম। কিন্তু এতে তাদের সাহসী, প্রযুক্তিনির্ভর ও প্রায় অলৌকিক গোয়েন্দা শক্তির ছাপ স্পষ্ট।

অতীত থেকে বর্তমান
এই সর্বশেষ অভিযানের আগে, মাত্র দশ মাস আগেই মোসাদ হিজবুল্লাহর লেবাননের কার্যক্রমে ব্যবহার করা হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকিটকি হ্যাক করে। এতে বিস্ফোরণে ৩৭ জন নিহত ও প্রায় ৩ হাজার আহত হয়। এরপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

মোসাদ দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভেতরে শক্তিশালী তথ্যসূত্র, এজেন্ট ও সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এর ফলেই ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে দূরনিয়ন্ত্রিত মেশিনগান দিয়ে হত্যা, পারমাণবিক প্রকল্পে ম্যালওয়্যার সংক্রমণ এবং গোপন নথি চুরি – এসব দুঃসাহসী অভিযান সম্ভব হয়েছে।

২০২৪ সালে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহকে তেহরানে একটি অতিথিশালায় বোমা হামলায় হত্যা করা হয় – যা মোসাদেরই কাজ বলে দাবি।

গোপন এজেন্ট, স্পষ্ট বার্তা
ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়োসি মেলমান বলেন, ভিডিওতে যারা ক্ষেপণাস্ত্র সেটআপ করছে তারা সম্ভবত ইরানিরাই। অর্থাৎ স্থানীয়দের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার এক নিখুঁত প্রক্রিয়া আছে মোসাদের। এটি শুধুই একটি হামলা নয়, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক বার্তাও।

“এই ভিডিওর মাধ্যমে মোসাদ ইরানকে জানাচ্ছে— আমরা তোমাদের সম্পর্কে সব জানি। যখন ইচ্ছা, তোমাদের বাড়ির ভেতর ঢুকতে পারি। আমরা এক সর্বব্যাপী শক্তি।” — বলেন মেলমান।

মোসাদের বদলে যাওয়া রূপ
একসময় এতটাই গোপনীয়তা ছিল যে, মোসাদের প্রাক্তন সদস্যদের নিজেদের পরিবারের কাছেও চাকরির পরিচয় দিতে নিষেধ ছিল। আজ সেই সংস্থার ওয়েবসাইট আছে, ভিডিও প্রকাশ করছে এবং সরাসরি প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছে।

মোসাদ শুধু গুপ্তচরবৃত্তি নয়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক গঠনের কাজেও অংশ নেয়। কিন্তু এর ইতিহাস শুধুই সাফল্য দিয়ে গড়া নয়।

১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের হত্যার পর পাল্টা প্রতিশোধে শুরু হয় মোসাদের "ব্যক্তিগত শিকার" অভিযান। যদিও একপর্যায়ে তারা ভুল করে নরওয়ের এক নিরীহ ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলে, এবং ধরা পড়ে যায়।

১৯৯৭ সালে হামাস নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করতে গিয়ে জর্ডানে ধরা পড়ে যায় মোসাদ এজেন্টরা। ২০১০ সালে দুবাইতে আরেকটি হত্যা অভিযানে তারা সিসিটিভি-তে ধরা পড়ে।

সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের আকস্মিক হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। এতে মোসাদের গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সর্বশেষ অভিযানের বার্তা
তবে ইরানে মোসাদের এই সর্বশেষ অভিযান ও ভিডিও প্রকাশ শুধু ইরান নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও এক শক্ত বার্তা। এটি শুধু একটি হামলা নয়, বরং নিজেদের সক্ষমতা ও মানসিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের একটি কৌশল।

ইসরায়েলি সমাজে এটি একধরনের মনোবল জোগায়— বিশেষ করে যখন তারা যুদ্ধ, নিরাপত্তা ও অস্তিত্বের হুমকির মুখে।

তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
 

মারিয়া

×