
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে সাম্প্রতিক হামলাটি ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক আঘাত, যা ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ। বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার জানিয়েছেন, এই হামলার মাত্রা, লক্ষ্যবস্তু এবং কৌশল আগের যেকোনো অভিযানের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাপক ও গভীর।
হামলার সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিমান প্রতিরক্ষা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো টার্গেট করে। ফলে ইরানের প্রতিশোধের সক্ষমতা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ গোপনে ইরানের ভেতর থেকে ড্রোন হামলাও পরিচালনা করে। এতে নিহত হয়েছেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)-এর প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং আইআরজিসি-এর বিমান ইউনিটের প্রধানসহ ছয়জন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিক ও শিশু রয়েছে। যদিও এই সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি।
হামলার মূল লক্ষ্য ছিল নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং আইআরজিসি-র ঘাঁটি। ইসরায়েলের মতে, তারা বহু বছর ধরে এই অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা কেবল শুরু। আরও অনেক লক্ষ্যবস্তু রয়েছে ইসরায়েলের তালিকায়, যদিও কিছু স্থাপনা মাটির অনেক গভীরে থাকায় সেগুলোতে আঘাত হানা কঠিন।
ইসরায়েল ও কিছু পশ্চিমা দেশ বহুদিন ধরেই সন্দেহ করে আসছে যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোচ্ছে। যদিও ইরান বারবার দাবি করে আসছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
ইরান আগে ২০১৫ সালের চুক্তি মেনে চললেও যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় তা থেকে সরে আসে। এরপর ইরানও চুক্তির শর্ত মানা বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা IAEA ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে নিরাপত্তা পরিষদে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ইসরায়েল মনে করছে, এটি হয়তো তাদের শেষ সুযোগ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করার। তাদের লক্ষ্য হলো ইরানের সক্ষমতাকে বছরের পর বছর পিছিয়ে দেওয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেছে যে তারা এই হামলায় অংশ নেয়নি। কিন্তু ইরান যদি এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি বা মিত্রদের উপর হামলা করে, তবে নতুন এক যুদ্ধ শুরু হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে।
এছাড়াও, সৌদি আরব, জর্ডান ও উপসাগরীয় দেশগুলো এখন উদ্বিগ্ন, কারণ তারা এই সংঘাত নিজেদের অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই হামলার ফলে ইরান হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করে দিতে পারে।
ইসরায়েল চায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি একেবারেই থেমে যাক বা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হোক যাতে তা বছরের পর বছর পিছিয়ে পড়ে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই হামলা উল্টো ইরানের কট্টরপন্থী নেতাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে আরও সাহসী করে তুলবে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ইরান টিকে যায় এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করে, তবে সৌদি আরব, তুরস্ক এমনকি মিসরও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইবে। ফলে শুরু হতে পারে ভয়াবহ একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা