
ছবি: সংগৃহীত
ইরানের বিরুদ্ধে অতর্কিত সামরিক অভিযান চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে ফের অস্থিতিশীল করে তুলেছে ইসরায়েল। পারমাণবিক কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, শীর্ষ বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাদের নিহত হওয়া এবং ইরান সরকারের কড়া প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ এবার দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
তেহরান থেকে রেডিও তেহরানের সাংবাদিক নাসির মাহমুদ জানান, ইসরায়েলের হামলায় রাজধানী তেহরানের কিছু আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিশুরাও নিহত হয়েছে। তবে মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলো, যেমন নাতাঞ্জ ও ফরদু, তেহরানের বাইরে অবস্থিত এবং সেগুলো ভূগর্ভস্থ হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
তবে হামলায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে পরমাণু বিজ্ঞানীদের প্রাণহানির মাধ্যমে। এক জন গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর এবং আইআরজিসির (ইরানিয়ান রেভ্যুলুশনারি গার্ড) শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহত হয়েছেন। এসব হামলা সম্পূর্ণভাবে ইরানকে অপ্রস্তুত অবস্থায় করেছে। তখন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল না। বর্তমানে পুরো ইরানে সর্বোচ্চ সামরিক সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
প্রতিশোধের হুমকি ও যুদ্ধের আশঙ্কা
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন—নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের উত্তরসূরিরা ইসরায়েলের হামলার উপযুক্ত জবাব দেবেন এবং সে প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে পাল্টা হামলা চালানো হতে পারে।
নাসির মাহমুদ জানান, ‘ইসরায়েল বলেছে এটাই শেষ নয়, আরও হামলা হবে। অন্যদিকে, ইরানও যে চুপচাপ বসে থাকবে না, সেটা একেবারে পরিষ্কার।’
ভূরাজনৈতিক সংঘাত ও আমেরিকার ভূমিকা
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান ও আমেরিকার দীর্ঘদিনের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বই এই সংঘাতের মূল পটভূমি। ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আলোচনার পথ বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যেই ইরান অভিযোগ করে, তারা ইসরায়েলের লাখ লাখ পৃষ্ঠার গোপন গোয়েন্দা নথি হস্তগত করেছে, যা ইসরায়েলের জন্য অপমানজনক ও কৌশলগত বিপর্যয়। এই তথ্যফাঁসের প্রতিশোধ হিসেবেই ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আসছে প্রক্সি যুদ্ধ?
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠী রয়েছে—লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ইসরায়েলের চারপাশে এদের উপস্থিতি নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। যুদ্ধ শুধু সরাসরি ইরান-ইসরায়েল সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো অঞ্চলে প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
নাসির মাহমুদের ভাষায়, ‘এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রক্সি ফোর্সগুলো সক্রিয় হলে সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে এবং সেটি গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই অগ্নিগর্ভ করে তুলতে পারে।’
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=2Iuni2OBT1I
রাকিব