
একটি হাস্যোজ্জ্বল সেলফি, একটি নতুন জীবনের সূচনা—কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ। ভারতের আহমেদাবাদে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন রাজস্থানের এক ডাক্তার দম্পতি ও তাদের তিন শিশুসন্তান। পরিবারটি যাচ্ছিল লন্ডনে, শুরু হতে যাচ্ছিল তাদের নতুন অধ্যায়। কিন্তু স্বপ্নভঙ্গ হলো আকাশেই।
বিমানবন্দরে ওঠার পর ডা. প্রতীক জোশি, তার স্ত্রী ডা. কোমি ভ্যাশ ও তিন সন্তানকে নিয়ে একটি সেলফি তোলেন। ছবিতে দুই পাশে হাসিমুখে বসে আছেন দম্পতি, আর সামনের সিটে বসে থাকা তাদের যমজ পুত্র নকুল ও প্রদ্যুত (বয়স ৫) এবং মেয়ে মিরায়া (বয়স ৮) ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে। এই ছবিই হয়ে উঠেছে তাদের জীবনের শেষ মুহূর্তের সাক্ষ্য।
উদয়পুরের প্যাসিফিক হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন ডা. কোমি। সদ্য চাকরি ছেড়ে স্বামীর কাছে লন্ডনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। ডা. প্রতীক ইতিমধ্যে লন্ডনে কর্মরত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানায়, প্রতীক মাত্র দুই দিন আগে রাজস্থানের বানসওয়ারায় এসেছিলেন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যেতে। আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ ফ্লাইটটি, যেখানে ছিল ২৪২ জন আরোহী। কিন্তু উড্ডয়নের মাত্র ৩২ সেকেন্ড পরেই বিমানটি হঠাৎ করে উচ্চতা হারাতে থাকে এবং মুহূর্তের মধ্যেই আকাশে বিস্ফোরণ ঘটে, তৈরি হয় অগ্নিগোলক।
বিমান বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইঞ্জিনে thrust সমস্যা বা lift না হওয়ায় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। সাবেক পাইলট ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর NDTV-কে বলেন, "গিয়ার ওঠানোর আগেই বিমানটি নিচে নামতে শুরু করে, যা সাধারণত তখনই হয় যখন ইঞ্জিনে thrust না থাকে বা lift তৈরি হয় না।"
ডা. প্রতীক জোশির বাবা একজন খ্যাতনামা রেডিওলজিস্ট এবং কোমির বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। কোমির ভাই প্রবুদ্ধ জানান, বিয়ের ১০ বছর পূর্ণ করেছিল দম্পতি। প্রতীকের এক বোন আছেন, যিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে এখন পর্যন্ত বেঁচে ফিরেছেন মাত্র একজন—৪০ বছর বয়সী বৃটিশ-ভারতীয় যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশ, যিনি যুক্তরাজ্যে ফিরছিলেন।
ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “আহমেদাবাদের এই ট্র্যাজেডি আমাদের স্তব্ধ ও শোকাহত করেছে। এই দুঃখজনক সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি।”
এই ট্র্যাজেডির স্মারক হয়ে রইল একটি হাস্যোজ্জ্বল সেলফি—যা আজ শুধু ব্যথার প্রতীক।
মিমিয়া