ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই আয়ারল্যান্ড কি একীভূত হবে

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১৮ মার্চ ২০২০

দুই আয়ারল্যান্ড কি একীভূত হবে

ব্রিটেন থেকে আয়ারল্যান্ড স্বাধীন হয় ১৯২১ সালের মে মাসে। তারপর থেকে এক শ’ বছরের মধ্যে বেশিরভাগ সময় দেশটি দুটি রাজনৈতিক দলের দ্বারা পালাক্রমে শাসিত হয়ে এসেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই ধারাটিও ভেঙ্গে পড়েছে। ওইদিন সাধারণ নির্বাচনে সর্বাধিক সংখ্যক ভোট পায় সিন সেইন। আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ)-এর সঙ্গে যুক্ত এই দলটি ১৯৭০ দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত বোমাবাজির দ্বারা তা-ব চালিয়ে ছিল। এবারের নির্বাচনে সেই সিন ফেইন তাদের বামপন্থী কর্মসূচীর জোরে জয়ী হয়েছে যার মধ্যে আছে স্বাস্থ্য ও আবাসন খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি। আরও অনেক উচ্চাভিলাষী একটি আকাক্সক্ষাও দলটি গোপন রাখেনি। দলের ইশতেহারে বলা হয়েছে ‘আমাদের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো দুই আয়ারল্যান্ডের একত্রীকরণ এবং সেই একত্রীকরণ অর্জনের একটা উপায় হলো এই প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠান।’ ব্রেক্সিটের পর থেকে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা সংবাদপত্রের শিরোনাম কেড়ে নিয়েছে। তবে এখন যুক্তরাজ্য থেকে আরেক ভিন্ন এক বিচ্ছিন্নতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনে সিন ফেইনের সাফল্য থেকে এমন মনে করার কারণ ঘটেছে যে এক দশকের মধ্যে একটা সংযুক্ত আওয়ারল্যান্ডের সম্ভাবনা বাস্তব এবং সেই সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ছে। সেই সম্ভাবনার তাৎপর্যটা আয়ারল্যান্ড দ্বীপটির বাইরেও বিস্তৃত। লন্ডনের ‘দি ইকোনমিস্ট’ সাময়িকীর সম্পাদকীয়তেও বলা হয়েছে যে বর্তমান সাধারণ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত একত্রিত আয়ারল্যান্ড একটা রিপাবলিকান ফ্যান্টাসির চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। কিন্তু সিন ফেইনের সাফল্য সেই ফ্যান্টাসির জায়গায় জোর সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে ক্রমবর্ধমান আস্থার একটা কারণ হলো ব্রেক্সিট এবং অন্য একটা কারণ জনমিতির পারিবর্তন। ইকোনমিস্ট মনে করে যে ২০২১ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডে রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যা প্রথমবারের মতো প্রটেস্ট্যান্টদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির এক মুখপাত্র বলেছেন, তার বিশ্বাস এক দশকের মধ্যে একটা একীভূত আয়ারল্যান্ড ও একটি স্বাধীন স্কটল্যান্ডের আবির্ভাব ঘটবে। কারণ জনমিতি ও তরুণদের ভোট সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে এবং এই দুটো দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে। তবে আয়ারল্যান্ডের একত্রীকরণের ব্যাপারে অনেক কিছুই করার আছে। দুটি অংশের প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একীভূত হবে কিনা, হলে কখন হবে, কিভাবে হবে এই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের রাজনীতিকদের সংলাপ শুরু করা দরকার বলে পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছেন। দুই দশক আগে সহিংসতা অবসানের মূল্য হিসেবে উত্তর আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন এবং রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড সম্মিলিতভাবে একটি একীভূত আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক পথ নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। এখন আইরিশ ভূখ-ের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ যদিও ওই পথ অনুসরণ করে তা হলে রাজনীতিকদেরও তা করা উচিত বলে পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য। উল্লেখ করা যেতে পারে যে আয়ারল্যান্ড উত্তর আটলান্টিকের একটি দ্বীপ, যা ৪৮৬ কিলোমিটার লম্বা ও ২৮৮ কিলোমিটার চওড়া। এর পূর্ব দিকে গ্রেট ব্রিটেন। আইরিশ সি এই দুই ভূখ-কে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। ১৮০১ সাল থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত গোটা আয়ারল্যান্ড ছিল ব্রিটেনের অংশ। ১৯১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯২১ সালে এক চুক্তি বলে আয়ারল্যান্ড যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯২১ সালে এক চুক্তি বলে আয়ারল্যান্ড দুটি অংশে খ-িত হয়ে একটি অংশ রিপাবলিক আর আয়ারল্যান্ড নামে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং আরেকটি অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ড ব্রিটেনের সঙ্গে যুক্ত থেকে যায়। স্বাধীন আয়ারল্যান্ড গোটা ভূখ-ের ৮৩ শতাংশ ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ১৭ শতাংশ। পরবর্তীকালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদীরা তথা প্রধানত রোমান ক্যাথলিকরা তাদের ভূখ-কে স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে একীভূত করার জন্য লড়াই শুরু করে। অন্যদিকে ইউনিয়নপন্থীরা তথা প্রোটেস্ট্যান্টরা চায় যে উত্তর আয়ারল্যান্ড ব্রিটেনের অংশ হিসেবেই থেকে যাক। এক পর্যায়ে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে আইরিশ রিপাবলিকান আর্মি (আইআরএ) এ তার রাজনৈতিক সংগঠন সিন ফেইনের আবির্ভাব ঘটে। সেই সিন ফেইনই এবারের নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পেয়ে ঐক্যবদ্ধ আয়ারল্যান্ডের সম্ভাবনাকে নতুনরূপে উজ্জীবিত করে তুলেছে। সূত্র : দি ইকোনমি
×