
ছবি: সংগৃহীত
যুদ্ধ শেষ হলেও পর্দার আড়ালে শুরু হয়েছে আরো ভয়ঙ্কর এক লড়াইয়ের প্রস্তুতি। ইসরাইল যদি আবার আগ্রাসন চালায় তাহলে এবার আঘাত হবে তার হৃদপিণ্ডে। আর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি তা কখনোই থামবে না। এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান।
সম্প্রতি আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান জানান, ইরান আরেকটি যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তাদের সেনাবাহিনী ইসরাইলের গভীরে আবার আঘাত হানার জন্য তৈরি। ১২ দিনের রক্তাক্ত যুদ্ধ শেষে ২৪ জুন যে যুদ্ধবিরোতি কার্যকর হয় তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আশাবাদী নন পেজেশকিয়ান। তিনি জানান, তারা এই যুদ্ধবিরোতিতে ভরসা করছে না। কারণ ইসরাইল ইরানের ক্ষতি করেছে। ইরানও তাদের গভীরে আঘাত করেছে। যদিও ইসরাইল তাদের ক্ষতির কথা লুকিয়ে রাখছে।
এটা শুধু সামরিক লড়াই নয়, ছিল নেতৃত্ব ধ্বংসের অপচেষ্টা। পেজেশকিয়ান জানান, ইসরাইল ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী ও শীর্ষ সামরিক নেতাদের হত্যা করে নেতৃত্বে ফাটল ধরাতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।
পেজেশকিয়ানের কণ্ঠে ছিল অদম্য দৃঢ়তা। তিনি বলেন, তারা তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন—আন্তর্জাতিক আইন মেনেই তা হবে। এদিকে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র না বানায়। কিন্তু পেজেশকিয়ানের উত্তর স্পষ্ট: ইরান নিজেও পরমাণু অস্ত্রের বিরোধী। এটি তাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও কৌশলগত অবস্থান। তবে তাদের ক্ষমতা শুধু স্থাপনাগুলোতে নয়, তাদের বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কেই তা লুকানো আছে।
তিনি বলেন, কূটনীতি ইরানের পছন্দ। তবে তা হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। ইরান চুক্তির পথে যেতে চায়, কিন্তু কোনো হুমকি কিংবা চাপে নয়।
এছাড়াও এই সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান এক বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেন। ১৫ জুন তেহরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে তার উপর হামলা চালানো হয়। তিনি জানান, এটি ছিল ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেশকে অস্থির করার পরিকল্পনা। কিন্তু ইসরাইল ব্যর্থ হয়েছে।
তবে কাতারে অবস্থিত আমেরিকার আল উদাইদ ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে তিনি স্পষ্ট করেন: তারা কাতারকে নয়, কাতারে থাকা মার্কিন ঘাঁটিকে আক্রমণ করেছে। এছাড়াও তিনি জানান, তিনি সেদিনই কাতারের আমিরকে ফোনে বুঝিয়ে বলেছেন—তাদের কাতারের প্রতি কোনো শত্রুতা নেই।
এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানান, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। তারা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করেনি। ইরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি বিশ্লেষণ করছে এবং শিগগিরই আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জানাবে।
এদিকে আসছে শুক্রবার তুরস্কের ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইরানের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। এ যেন ইঙ্গিত—কূটনীতির পথ এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের বাতাসে শুধু ইতিহাস নয়, ভবিষ্যতের যুদ্ধের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাতে ইরান যেন আর পেছন ফিরে তাকাতে রাজি নয়। পেজেশকিয়ানের এই বার্তা শুধু ইসরাইল নয়, ওয়াশিংটন ও ইউরোপের দিকেও—আর তা হলো: ইরান আর চুপ থাকবে না।
শেখ ফরিদ