
ছবি: সংগৃহীত
মানুষের স্বভাবই হলো শরীর যেসব সতর্ক সংকেত দেয়, তা উপেক্ষা করা। ফলে অনেক সময় পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয় না। যদিও ব্যতিক্রম আছে, বেশিরভাগ মানুষই বলে বসেন, “সামান্য মাথাব্যথা, বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।” অথচ অনেক সময় এমন উপসর্গের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
পুরুষদের দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা নারীদের তুলনায় ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। যদিও অবহেলার মাত্রা প্রায় একই, পুরুষরা সাধারণত দেহে পরিবর্তনকে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যস্ততার ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করে পাশ কাটিয়ে যান। নিচে এমন ৬টি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো দেখা গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
১. হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া
অনেক পুরুষেরই পছন্দের জায়গা হলো জিমে সময় কাটানো। তবে ডায়েট বা ব্যায়ামে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই হঠাৎ ওজন দ্রুত কমে গেলে এবং এর পেছনে অন্য কোনো শারীরিক অসুস্থতা খুঁজে না পাওয়া গেলে তা হতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত।
থাইরয়েড হরমোন, ইনসুলিন ও কর্টিসল—এই হরমোনগুলো শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ও শক্তি ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হরমোনগুলো মাত্রাধিক কমে বা বেড়ে গেলে শরীর খুব দ্রুত ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলতে পারে (যেমন: হাইপারথাইরয়েডিজমে দেখা যায়), যার ফলে হঠাৎ ওজন কমে যেতে পারে।
২. অতিরিক্ত উদ্বেগ বা বিষণ্নতা অনুভব করা
সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়, নারীদের মাসিকচক্রে মুড সুইং বা মেজাজ পরিবর্তনের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। এটি সত্য হলেও পুরুষদের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একেবারে অগ্রাহ্য করা যায় না। যদি আপনি আগের তুলনায় বেশি বিরক্ত, উদ্বিগ্ন বা হতাশ বোধ করেন—তা হতে পারে শরীরের হরমোনজনিত সমস্যার কারণে।
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি বা থাইরয়েড হরমোনের সমস্যায় মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার বা স্নায়ুবাহী রাসায়নিকের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যার ফলে মেজাজ, মনোভাব ও মানসিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্টিসল হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. শারীরিক সম্পর্কের আগ্রহ হ্রাস পাওয়া
এই বিষয়ে কথা বলতে অনেক পুরুষই সংকোচবোধ করেন বা গুরুত্ব দেন না। তবে হঠাৎ করে যৌন আগ্রহ কমে গেলে এবং এর পেছনে সম্পর্কজনিত বা বাহ্যিক কোনো কারণ না থাকলে, তা হরমোনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।
টেস্টোস্টেরন পুরুষের প্রধান হরমোন এবং যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বয়স, দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা, মানসিক চাপ বা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যার কারণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে যৌন আগ্রহ ও সন্তুষ্টি উভয়ই হ্রাস পায়।
৪. সারাদিন ক্লান্তি ও অবসাদ অনুভব করা
যদি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেও ক্লান্তি না কাটে, কিংবা স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজ করতেও অসহ্য লাগে—তবে সেটি হতে পারে হরমোনজনিত সমস্যার লক্ষণ।
টেস্টোস্টেরনের স্বল্পতা, থাইরয়েড ডিসঅর্ডার বা কর্টিসলের অস্বাভাবিক মাত্রা শরীরের শক্তি উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করে, যার ফলে দেহ সর্বক্ষণ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
৫. অতিরিক্ত পিপাসা ও ঘন ঘন প্রস্রাব
প্রস্রাবের জন্য বারবার টয়লেটে যেতে হচ্ছে, বিশেষ করে রাতে? কিংবা বারবার পানি খাওয়ার পরও পিপাসা মিটছে না? এর সঙ্গে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে তা হতে পারে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া বা ইনসুলিন হরমোনের ভারসাম্য হারানোর লক্ষণ।
এছাড়া, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যাও কিডনির পানি ধরে রাখার সক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব ও অতিরিক্ত পিপাসা দেখা দেয়।
৬. ঘুমে সমস্যা হওয়া
সারাদিন পরিশ্রম করার পরও ঘুম আসছে না? নাকি সকালে উঠে ক্লান্ত লাগছে? আবার মাঝেমধ্যে ব্যাখ্যাতীত মাথাব্যথাও হচ্ছে? এসবই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত হতে পারে।
মেলাটোনিন হরমোন আমাদের ঘুম-জাগরণের ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে। এর পাশাপাশি কর্টিসল ও থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলেও ঘুমে বিঘ্ন ঘটে। ফলে অনিদ্রা বা খারাপ মানের ঘুম দেখা দিতে পারে।
আবির