ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের পুরনো ভ্রূণ থেকে জীবন্ত সন্তানের আগমন

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৪ আগস্ট ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের পুরনো ভ্রূণ থেকে জীবন্ত সন্তানের আগমন

এটা যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার গল্প। কিন্তু বাস্তবেই এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়ো রাজ্যে। ১৯৯৪ সালে হিমায়িত করা একটি ভ্রূণ থেকে ২০২৫ সালে জন্ম নিয়েছে এক শিশু যার নাম রাখা হয়েছে থার্ডিয়াস ড্যানিয়েল পিয়ার্স। এর মধ্য দিয়ে গড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষিত ভ্রূণ থেকে জীবন্ত শিশু জন্মের নতুন রেকর্ড।

৩৫ বছর বয়সী লিনসে পিয়ার্স ও ৩৪ বছর বয়সী টিম পিয়ার্স দম্পতির কোলে আসা এই শিশু কেবল তাদের জন্যই নয়, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্যও এক মাইলফলক।

ঘটনাটির পেছনের কাহিনি

১৯৯৪ সালে লিন্ডা আর্চারড নামের এক নারী ও তার স্বামী আইভিএফ পদ্ধতিতে চারটি ভ্রূণ তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে একটি দিয়ে জন্ম নিয়েছিল একটি কন্যা সন্তান। কিন্তু বাকি তিনটি ভ্রূণ হিমায়িত অবস্থায় রয়ে যায় বছরের পর বছর। লিন্ডা পরবর্তীতে বিবাহবিচ্ছেদে যান, জীবন পরিবর্তিত হয়, কিন্তু তিনি সেই ভ্রূণগুলো নষ্ট করতে চাননি কিংবা গবেষণার জন্য দান করতেও রাজি হননি।

তার বিশ্বাস ছিল, প্রতিটি ভ্রূণের মধ্যেই প্রাণের সম্ভাবনা আছে। এ বিশ্বাস থেকেই তিনি যুক্ত হন একটি খ্রিস্টান ভ্রূণ দত্তক সংস্থা "নাইটলাইট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডপশনস"-এর "স্নোফ্লেক" প্রোগ্রামে।

দত্তক ও চিকিৎসা প্রক্রিয়া

লিন্ডা চেয়েছিলেন, তার ভ্রূণ যেন ককেশিয়ান, বিবাহিত খ্রিস্টান মার্কিন দম্পতির কাছে যায়। সেই পছন্দ থেকেই পরিচয় হয় লিনসে ও টিম পিয়ার্স দম্পতির সঙ্গে। সন্তানহীন এই দম্পতি ৭ বছর ধরে একটি সন্তানের আশায় ছিলেন। রেকর্ড গড়ার কোনো চিন্তা তাদের ছিল না, শুধু সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন।

টেনেসির ‘রিজয়েস ফার্টিলিটি ক্লিনিক’-এ দত্তক নেয়া ভ্রূণ স্থানান্তরের মাধ্যমে আইভিএফ পদ্ধতিতে শুরু হয় গর্ভধারণের প্রক্রিয়া। ক্লিনিকটির নীতিই হলো পুরনো যেকোনো ভ্রূণকে জীবিত করার চেষ্টা করা।

"এটা তো সিনেমা নয়!"  বাস্তবতায় বিস্মিত পরিবার

লিনসে জানান, “আমার পরিবার বিশ্বাসই করতে পারছিল না! প্রথমে সবাই বলছিল এটা যেন কোনো সাই-ফাই সিনেমা, কিন্তু এখন সে আমাদের বাস্তব জীবনের অংশ।”

লিন্ডা আর্চারড এখনো শিশুটিকে সামনে থেকে দেখেননি, তবে ছবিতে দেখতে পেয়েছেন নিজের ৩০ বছর আগের মেয়ের মুখের প্রতিচ্ছবি।

বিজ্ঞান, মানবতা আর স্বপ্নের জয়

এই শিশু জন্ম শুধু একটি পরিবারের জন্য আশার আলো নয় এটা এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত যেখানে বিজ্ঞান, মানবিকতা ও বিশ্বাসের সম্মিলনে লেখা হয়েছে নতুন ইতিহাস।

৩০ বছর হিমঘুম শেষে ‘থার্ডিয়াস’ যেন নিজেই এক বার্তা "জীবন থেমে থাকে না, শুধু অপেক্ষা করে সঠিক মুহূর্তের।"

এটা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানব জীবনের এক নতুন কবিতা। যেখানে সময়ের বাধা পেরিয়ে ভ্রূণ হয়ে ওঠে সন্তান, আর আশা হয়ে ওঠে বাস্তব।

Jahan

×