
ছবি: সংগৃহীত।
ফ্যাটি লিভার বা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) বিশ্বজুড়ে এক ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমে গিয়ে নানা জটিলতা তৈরি করতে পারে। কিন্তু এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ শুধুই পেটের ভেতর সীমাবদ্ধ নয়-চামড়াতেও দেখা দিতে পারে একাধিক সতর্ক সংকেত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন বা উপসর্গই ইঙ্গিত দিতে পারে লিভারের ক্ষয় বা কার্যকারিতা হ্রাসের দিকে। তাই সময়মতো চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করলেই ফ্যাটি লিভারজনিত জটিলতা কমানো সম্ভব।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, ত্বকে কী ধরনের উপসর্গে ফ্যাটি লিভারের আশঙ্কা থাকতে পারে:
১. জন্ডিস (চামড়া ও চোখে হলদে ভাব)
লিভারের কার্যকারিতা বিঘ্নিত হলে বিলিরুবিন নামক হলুদ রঞ্জক রক্তে জমতে থাকে। এর ফলেই চোখের সাদা অংশ ও ত্বক হলদেটে হয়ে ওঠে। জন্ডিস হলো লিভার সমস্যার অন্যতম প্রধান চামড়াজনিত লক্ষণ।
২. ত্বকের রঙে পরিবর্তন
ফ্যাটি লিভারজনিত সিরোসিসে দেখা দিতে পারে:
মুখে মলিন, ধূসর বা হলদে ছোপ
হাত ও পায়ে গাঢ় রঙের দাগ
রক্তকোষ থেকে লোহিত কণিকা ছড়িয়ে পড়ায় আয়রন জমে গায়ের রঙে অস্বাভাবিকতা
৩. সহজে ক্ষত বা রক্তপাত
লিভার রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করে। লিভার আক্রান্ত হলে সেই প্রোটিন কমে যায়, যার ফলে সামান্য আঘাতেও রক্তপাত হতে পারে বা দাগ পড়ে যেতে পারে।
৪. শরীরে ফোলা ভাব (অ্যাসাইটিস ও এডিমা)
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে তরল জমা হতে শুরু করে:
অ্যাসাইটিস: পেটে তরল জমা
এডিমা: পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় ফোলা ভাব
৫. এরাপটিভ জ্যান্থোমা (হলুদ রঙের ছোট গাঁট)
যখন লিভার চর্বি প্রসেস করতে পারে না, তখন রক্তে চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে ত্বকে ছোট ছোট হলুদ রঙের দানা বা গাঁট দেখা যায়, যাকে বলা হয় এরাপটিভ জ্যান্থোমা।
৬. প্রুরিটাস (চুলকানি)
লিভার সমস্যায় রক্তে পিত্ত পদার্থ জমে গিয়ে ত্বকে চুলকানি তৈরি করে। এছাড়াও, লিভারের প্রদাহজনিত রাসায়নিক পদার্থ চুলকানির জন্য দায়ী হতে পারে।
৭. স্পাইডার ভেইনস (মাকড়সার জালের মতো লাল শিরা)
ত্বকের নিচে ছোট ছোট লাল শিরার বিস্তার, বিশেষত শরীরের উপরের অংশে, দেখা যায় লিভার রোগীদের মধ্যে। এটি মূলত রক্তে ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে যাওয়ার ফল।
৮. জ্যান্থেলাজমা (চোখের আশেপাশে হলুদ ছোপ)
চোখের চারপাশে হলুদ রঙের চর্বিযুক্ত দাগ ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সাধারণত এটি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং লিভার অকার্যকারিতার ইঙ্গিত দেয়। মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
৯. পামার ইরিথিমা (লিভার পাম বা হাতের তালু লাল হয়ে যাওয়া)
হাতের তালু ও আঙুলের ডগায় লালচে ভাব দেখা দিলে তা হতে পারে লিভারজনিত সমস্যা। লিভার রোগে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও রক্তপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলেই এটি ঘটে।
ত্বকে এসব পরিবর্তন বা উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ফ্যাটি লিভার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রা বদলে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ত্বকের সংকেত কখনোই হালকা করে দেখবেন না-এগুলোই হতে পারে লিভার ক্ষয়ের প্রথম বার্তা।
মিরাজ খান