ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

যে ৭টি কারণ অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ৩ আগস্ট ২০২৫

যে ৭টি কারণ অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে

ছবি: সংগৃহীত।

অটোইমিউন রোগ-একটি জটিল ও রহস্যজনক স্বাস্থ্যসমস্যা। হঠাৎ করেই শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজের শরীরকেই ‘শত্রু’ ভেবে আক্রমণ করতে শুরু করে। কখনও জয়েন্টে ব্যথা, কখনও ত্বকে ফুসকুড়ি, কখনও আবার হজমে সমস্যা-সবকিছু যেন অজানা কারণে এলোমেলো হয়ে যায়। কিন্তু এই বিপর্যয়ের পেছনে আসলে কী দায়ী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটোইমিউন রোগের নির্দিষ্ট একটি কারণ নেই। বরং ধীরে ধীরে একাধিক অভ্যাস, চাপ এবং পরিবেশগত উপাদান একত্রে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুলিয়ে দেয়। হঠাৎ বিস্ফোরণ নয়-এটা অনেকটা ধীরে সেদ্ধ হতে থাকা হাঁড়ির মতো, যা একসময় উথলে পড়ে।

সম্প্রতি ‘হেলথলাইন’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন ৭টি কারণ তুলে ধরা হয়েছে, যা অটোইমিউন রোগকে গোপনে সক্রিয় করে তুলতে পারে:

১. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
অতিরিক্ত স্ট্রেস শুধু মানসিক নয়, শারীরিকভাবেও ক্ষতিকর। ক্রমাগত মানসিক চাপ শরীরের হরমোন, ইনফ্ল্যামেশন এবং অন্ত্রে অস্থিরতা তৈরি করে। দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রেসে থাকলে শরীর একসময় প্রতিক্রিয়া দেখায়-অজানা উপসর্গের মাধ্যমে।

২. উপেক্ষিত অন্ত্রের স্বাস্থ্য
অন্ত্র কেবল হজমের জন্য নয়, এটি শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতিরিক্ত প্রসেসড খাবার, চিনি বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অন্ত্রের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে "লিকি গাট" তৈরি হয়। ফলে রক্তপ্রবাহে অনাকাঙ্ক্ষিত পদার্থ ঢুকে পড়ে এবং ইমিউন সিস্টেম বিভ্রান্ত হয়ে নিজের শরীরকেই আক্রমণ করে।

৩. শরীরে ঘাপটি মেরে থাকা ভাইরাস
কিছু ভাইরাস শরীর থেকে একেবারে যায় না। এরা ভিতরে লুকিয়ে থেকে মাঝে মাঝে ইমিউন সিস্টেমকে বিভ্রান্ত করে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসগুলো ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে ট্রিগার করে, যার ফলে শরীর নিজেকেই আক্রমণ করতে শুরু করে।

৪. পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থ
পেস্টিসাইড, প্লাস্টিক, বায়ু দূষণ, ভারী ধাতু-এইসব বিষাক্ত উপাদান শরীরে জমতে জমতে একসময় প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাপে ফেলে দেয়। লিভার-কিডনি যখন ডিটক্স করতে ব্যর্থ হয়, তখন ইমিউন সিস্টেম অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে, যার ফলে ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন দেখা দেয়।

৫. অজানা পুষ্টির ঘাটতি
ভিটামিন ডি, ওমেগা-৩, সেলেনিয়াম, জিংক বা আয়রনের অভাব সরাসরি ইমিউন সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। এই উপাদানগুলোর ঘাটতি হলে শরীর শত্রু-বন্ধুর পার্থক্য করতে ব্যর্থ হয় এবং নিজেকেই আক্রমণ শুরু করে।

৬. হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা
মহিলাদের মধ্যে অটোইমিউন রোগের হার বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো হরমোনজনিত সমস্যা। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন, কর্টিসল ও থাইরয়েড হরমোন ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, মেনোপজ, থাইরয়েড সমস্যা বা কঠোর ডায়েটের ফলে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ভুল করে বসে।

৭. দীর্ঘস্থায়ী ইনফ্ল্যামেশন
ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ শরীরের প্রতিরক্ষার অংশ, তবে যদি তা দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকে, তাহলে বিপদ ডেকে আনে। জাঙ্ক ফুড, ঘুমের অভাব, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কিংবা অতিরিক্ত মানসিক চাপ দীর্ঘস্থায়ী ইনফ্ল্যামেশন সৃষ্টি করে। তখন শরীর নিজের কোষ ও টিস্যুকেও ‘শত্রু’ ভেবে আক্রমণ করতে শুরু করে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শরীরের অজানা উপসর্গকে অবহেলা না করে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এবং জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই এই জটিল রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

মিরাজ খান

×