
ছবি: সংগৃহীত।
চোখ বা ত্বকে হঠাৎ হলদেটে ভাব দেখা দিলে এটি হতে পারে ‘জন্ডিস’ বা পাণ্ডু রোগের লক্ষণ। এটি তখনই ঘটে যখন রক্তে বিলিরুবিন নামক একটি রঞ্জক পদার্থ অতিরিক্ত পরিমাণে জমে যায়। সাধারণত পুরনো রক্তকণিকা ভেঙে গেলে বিলিরুবিন তৈরি হয় এবং লিভার এই উপাদানকে শরীর থেকে বের করে দেয়। তবে যেকোনো কারণে যদি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, কিংবা পিত্তনালিতে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে বিলিরুবিন রক্তে জমে গিয়ে ত্বক ও চোখে হলুদ রঙের ছাপ ফেলতে পারে-যা জন্ডিস হিসেবে পরিচিত।
জন্ডিসে চোখ-ত্বক কেন হলুদ হয়ে যায়?
বিলিরুবিন হলুদাভ-কমলা রঙের এক ধরনের রঞ্জক যা চর্বি-সমৃদ্ধ টিস্যুতে জমে থাকে। ত্বকে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকার কারণে বিলিরুবিন সেখানে জমে হলুদ রঙ তৈরি করে। আবার চোখের সাদা অংশ (স্ক্লেরা) অপেক্ষাকৃত পাতলা হওয়ায় সেখানেও সহজেই হলুদ ছোপ দেখা দেয়। একে বলা হয় স্ক্লেরাল ইকটারাস, যা জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
জন্ডিসের তিনটি প্রধান ধরন:
বিশেষজ্ঞরা জন্ডিসকে তিনটি ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করেন-লিভারের আগে, লিভারে এবং লিভারের পরে।
১. প্রি-হেপাটিক জন্ডিস (লিভারের আগে):
এটি তখন হয় যখন শরীরে অতিরিক্ত রক্তকণিকা ভেঙে বিলিরুবিন উৎপাদনের মাত্রা বেড়ে যায়। লিভার তখন সুস্থ থাকলেও এই অতিরিক্ত বোঝা সামলাতে পারে না।
কারণ: হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, সিকল সেল রোগ,ম্যালেরিয়া।
২. হেপাটিক জন্ডিস (লিভারের ভেতর):
লিভার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিলিরুবিন প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যর্থ হয়। ফলে এটি রক্তে জমে গিয়ে জন্ডিস সৃষ্টি করে।
কারণ: হেপাটাইটিস (ভাইরাস বা অটোইমিউন), মদ্যপানের ফলে লিভার রোগ, লিভার সিরোসিস, ওষুধজনিত লিভার ক্ষতি।
৩. পোস্ট-হেপাটিক জন্ডিস (লিভারের পরে):
এটি তখন ঘটে যখন পিত্তনালিতে কোনো বাধা সৃষ্টি হয় এবং বিলিরুবিন শরীর থেকে বের হতে পারে না।
কারণ: গলস্টোন বা পিত্তকণ্ঠে পাথর, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার, পিত্তনালির টিউমার বা সংকোচন।
জন্ডিসের অন্যান্য উপসর্গ: গাঢ় হলুদ প্রস্রাব, ফ্যাকাশে বা ধূসর মল, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, খিদে কমে যাওয়া বা বমি বমি ভাব, ত্বকে চুলকানি (বাইল সল্ট জমার কারণে), পেটের ডান পাশে অস্বস্তি বা ব্যথা। এই উপসর্গগুলো জন্ডিসের কারণ ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
নবজাতকদের ক্ষেত্রে জন্ডিস অনেক সময় স্বাভাবিক হলেও, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে গুরুতর রোগের ইঙ্গিত। হঠাৎ চোখ-ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, তার সঙ্গে তীব্র পেট ব্যথা, জ্বর, বমি, খিদে কমে যাওয়া বা মানসিক বিভ্রান্তি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার বিলিরুবিন নির্ণয় ও চিকিৎসা না করলে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জন্ডিস শরীরের এক ধরনের সতর্ক সংকেত। এটি হতে পারে রক্তকণিকা ভাঙার সমস্যা, লিভারের অসুস্থতা, অথবা পিত্ত প্রবাহে বাধার কারণে। চোখ বা ত্বকের হালকা হলুদভাবকেও অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ দ্রুত চিকিৎসা না হলে এটি গুরুতর অবস্থায় পরিণত হতে পারে। সময়মতো কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসাই হল সুস্থতার চাবিকাঠি।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান