
ছবি: সংগৃহীত।
চোখের সামান্য কিছু পরিবর্তন-যেমন ফুলে থাকা, ঝাপসা দেখা বা রঙ দেখায় অসুবিধা-হয়তো কিডনি সমস্যার প্রাথমিক ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনি ও চোখ উভয়েরই কার্যকারিতা নির্ভর করে রক্তনালির স্বাভাবিক অবস্থার ওপর। ফলে শরীরে তরল ও রক্তপ্রবাহে ভারসাম্যহীনতা হলে দুটি অঙ্গেই প্রভাব পড়ে। তাই চোখের কিছু নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দিলে কেবল চোখ নয়, কিডনির দিকেও নজর দেওয়া জরুরি।
বিশেষত যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির জটিলতার পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাঁদের এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। নিচে চোখের এমন ৫টি সাধারণ লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলি কিডনি রোগের পূর্বাভাস হতে পারে।
১. চোখের আশেপাশে স্থায়ী ফোলাভাব।
ঘুম কম হওয়া বা অতিরিক্ত নোনতা খাবারের কারণে সকালে চোখ ফুলে ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি সেই ফোলাভাব সারা দিন স্থায়ী হয় এবং চোখের পাতার চারপাশে থাকে, তবে তা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
এটি হতে পারে প্রোটিনুরিয়া-র কারণে, যেখানে কিডনি দিয়ে প্রস্রাবে প্রোটিন বেরিয়ে যায়। এর ফলে শরীরের নরম টিস্যুতে তরল জমা হতে থাকে-যার প্রথম লক্ষণ হতে পারে চোখ ফোলা। এর সঙ্গে যদি প্রস্রাব ফেনায় ভরা বা বুদবুদযুক্ত হয়, তবে দ্রুত কিডনি পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
২. ঝাপসা দেখা বা ডাবল ভিশন।
হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখা, ফোকাস করতে সমস্যা হওয়া বা ডাবল ভিশনের অভিজ্ঞতা-এসব চোখের ছোটখাটো সমস্যা নয়। এর পেছনে থাকতে পারে হাইপারটেনসিভ বা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।
উচ্চ রক্তচাপ বা নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস-দুটিই দীর্ঘমেয়াদে কিডনি নষ্টের বড় কারণ এবং একইসঙ্গে চোখের রক্তনালিগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ক্ষতি থেকে চোখে তরল জমা, রেটিনায় ফোলাভাব এবং মারাত্মক ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থাকে। যারা এসব দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত, তাদের নিয়মিত চোখ ও কিডনি দুটোরই পর্যবেক্ষণ জরুরি।
৩. চোখে শুষ্কতা, চুলকানি বা জ্বালা।
চোখে দীর্ঘস্থায়ী শুষ্কতা বা চুলকানি কেবল অস্বস্তিকরই নয়, বরং তা কিডনি জটিলতার অপ্রত্যক্ষ লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা ডায়ালাইসিসে আছেন বা কিডনির শেষ পর্যায়ের রোগে ভুগছেন, তাঁদের মাঝে এই উপসর্গটি প্রায়শই দেখা যায়।
এর কারণ হতে পারে ক্যালসিয়াম-ফসফেটের ভারসাম্যহীনতা বা শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যাওয়ার ফলে চোখের অশ্রুগ্রন্থি ঠিকভাবে কাজ না করা। চোখে যদি কোনো পরিবেশগত কারণ ছাড়াই বারবার জ্বালা বা লালভাব অনুভব করেন, তবে একবার কিডনি ফাংশন টেস্ট করিয়ে নেওয়াই ভালো।
৪. চোখ লাল হওয়া বা রক্তচাপা ভাব।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া অনেক সময় সাধারণ এলার্জি, ক্লান্তি বা সংক্রমণের কারণে হতে পারে। তবে এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের পটভূমিতে, তবে তা কিডনির জটিলতার ইঙ্গিতও হতে পারে।
চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলো উচ্চচাপের কারণে ফেটে গিয়ে রক্তচাপা ভাব সৃষ্টি করতে পারে। আবার, লুপাস নেফ্রাইটিস-এর মতো অটোইমিউন কিডনি রোগেও চোখে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। চোখের লালভাবের সঙ্গে যদি গাঁটে ব্যথা, শরীর ফোলা বা চর্মরোগ থাকে, তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. রঙ দেখায় সমস্যা।
কিডনি দুর্বল হলে অনেকে লক্ষ্য করেন, নীল বা হলুদ রঙ আলাদা করে চেনা কঠিন হয়ে পড়ছে। এটি হতে পারে অপটিক নার্ভ বা রেটিনার ক্ষতির কারণে, যা দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস অথবা ইউরেমিক টক্সিন জমার কারণে হতে পারে।
এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং প্রথমদিকে তেমন বোঝা যায় না। তবে সময়ের সঙ্গে রঙ দেখার ক্ষমতা বা দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা কমে যেতে পারে।
কখন সতর্ক হবেন?
চোখে হালকা চুলকানি বা সামান্য ফোলাভাব সবসময় ভয়ের কারণ নয়। তবে যদি এসব উপসর্গ বারবার ফিরে আসে, দীর্ঘস্থায়ী হয়, অথবা এর সঙ্গে ক্লান্তি, পায়ে ফোলাভাব বা প্রস্রাবে পরিবর্তন থাকে-তবে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
চোখ ও কিডনি-দুটিই শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং দুটিই রক্তনালির সুস্থতার ওপর নির্ভরশীল। তাই একটির সমস্যায় অন্যটিতে প্রভাব পড়তে পারে। চোখের অস্বাভাবিক পরিবর্তন অনেক সময়ই কিডনি রোগের পূর্ব সংকেত দেয়।
সঠিক সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব, সেইসঙ্গে চোখের দৃষ্টিশক্তিও রক্ষা পাবে।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান