ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২

বুকে জ্বালা আর ঘুমের ব্যাঘাত? এই ৭টি সহজ পদ্ধতিতে পেয়ে যান স্থায়ী সমাধান

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ৩ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৫, ৩ আগস্ট ২০২৫

বুকে জ্বালা আর ঘুমের ব্যাঘাত? এই ৭টি সহজ পদ্ধতিতে পেয়ে যান স্থায়ী সমাধান

ছবি: সংগৃহীত।

ভালো খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ বুকে জ্বালাভাব? অথবা গভীর রাতে ঘুম ভেঙে দেখা গেল অ্যাসিড গলায় উঠে এসেছে? এই সমস্যায় ভোগেন বহু মানুষ। কিন্তু প্রতিবার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই-এই বার্তা দিচ্ছেন হার্ভার্ড ও এইমস প্রশিক্ষিত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সওরভ শেঠি। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, সামান্য কিছু অভ্যাস বদলেই অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা হর্টবার্ন (বুকে জ্বালাভাব) অনেকটাই কমানো সম্ভব। এসব পদ্ধতির অনেকগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রমাণও রয়েছে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক হৃদপিণ্ডে জ্বালাভাব কমানোর এমনই সাতটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপায়-

১. খাওয়ার পরে চিনি ছাড়া চাবিগাম চিবানো:

লন্ডনে ২০০৫ সালে করা একটি ছোট ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা যায়, খাওয়ার পরে ৩০ মিনিট চিনি ছাড়া চাবিগাম চিবালে খাদ্যনালিতে অ্যাসিড থাকার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। যেখানে স্বাভাবিকভাবে খাবার পর খাদ্যনালিতে অ্যাসিড মাত্রা প্রায় ৫.৭% সময় ধরে নিচু থাকে, সেখানে চাবিগাম চিবানোর ফলে তা কমে আসে ৩.৬%-এ। কারণ? চাবিগাম চিবালে লালা উৎপাদন বাড়ে এবং তা অ্যাসিডকে নিচে ঠেলে দেয় পাকস্থলীতে।

২. বাঁ পাশে শোয়ার অভ্যাস করুন:

অ্যামস্টারডাম ইউএমসি-তে ৫৮ জন GERD (গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ) রোগীর ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, ডান দিকে বা চিত হয়ে শোয়ার তুলনায় বাঁ দিকে শোয়া অ্যাসিড রিফ্লাক্স অনেক কমায়। বাঁ দিকে শুলে পাকস্থলী খাদ্যনালির নিচে অবস্থান করে, ফলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অ্যাসিডকে ওপরে উঠতে বাধা দেয়।

৩. মাথা উঁচু করে ঘুমানো:

রাতে ঘুমানোর সময় বালিশ বা বিছানার মাথা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উঁচু করেও অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমানো যায়। একাধিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, এই পদ্ধতিতে খাদ্যনালিতে অ্যাসিডের উপস্থিতি কমে এবং GERD রোগীদের ঘুমের মান উন্নত হয়।

৪. ছোট ছোট ভাগে খাবার খান:

বড় মাপের খাবার পাকস্থলীকে টেনে ধরে ও LES (লোয়ার ইসোফ্যাজিয়াল স্পিঙ্কটার)-এর চাপ কমিয়ে দেয়, যার ফলে অ্যাসিড উঠে আসে। গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ও ঘন ঘন খাবার খেলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স কম হয়, বিশেষ করে সোজা হয়ে বসে খেলে।

৫. রাতের খাবারের পরপর ঘুমানো এড়িয়ে চলুন:

ঘুমানোর ২–৩ ঘণ্টার মধ্যে খাবার খেলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের আশঙ্কা বেড়ে যায়। পাকস্থলীর খালি হওয়ার সময় না দিলে রাতে অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সময়মতো খাওয়া ও ঘুমের মাঝে ব্যবধান রাখলে রাতের হর্টবার্ন অনেকটাই কমে।

৬. ট্রিগার ফুড এড়িয়ে চলুন:

কফি, চকোলেট, মিন্ট, সাইট্রাস ফল, অ্যালকোহল ও ভাজা খাবার LES-কে দুর্বল করে বা অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। যাঁরা এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উপসর্গ কমেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

৭. খাওয়ার পরে সোজা হয়ে বসে থাকুন:

খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ সোজা হয়ে বসে থাকাটা অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমানোর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়গুলোর একটি। এমনকি ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা কেবল খাওয়ার পরে শুয়ে না থেকে সোজা থাকেন, তাঁদের মধ্যে ৭৫% মানুষ উপসর্গ থেকে স্বস্তি পান।

অর্থাৎ, ওষুধ নয়, জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনেই হৃদপিণ্ডে জ্বালাভাব বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডা. সওরভ শেঠির মতে, এভাবে জীবনযাপন করলে অ্যান্টাসিডের উপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই কমবে।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×