ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বিনা ধূমপানেও যে ৫ কারণে বাড়ছে ফুসফুসে ক্যান্সার!

প্রকাশিত: ২০:১২, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:১৫, ২৯ জুলাই ২০২৫

বিনা ধূমপানেও যে ৫ কারণে বাড়ছে ফুসফুসে ক্যান্সার!

ধূমপানকে ফুসফুসে ক্যান্সারের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে, বহু ধূমপান ন করেও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট ফুসফুস ক্যান্সার রোগীর মধ্যে ১০ থেকে ৩০ ভাগ রোগী এমন যাঁরা কখনোই সিগারেট কিংবা অন্য কোনো তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করেনি। এই তথ্য অনেকের কাছে অবাক করা হলেও উদ্বেগজনকভাবেই হতাশাজনক।

এখন জানা গেছে, ধূমপান না করেও কয়েকটি পারিপার্শ্বিক কারণ ও শরীরগত কারণে ফুসফুস ক্যান্সার হতে পারে। নীচে আলোচনা করা হলো পাঁচটি সম্ভাব্য কারণ যেগুলো সচেতনতামূলক প্রতিকার ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

প্রথমত, র‍্যাডন গ্যাস। এটি দেখতে বা গন্ধে ধরা পড়ে না সোজা ভাষায় বলা যায়, দৃশ্যমান নয় ও অগন্ধযুক্ত গ্যাস যা মাটিতে থাকা ইউরেনিয়াম ক্ষয়ের ফলে তৈরি হয়। ঘরের পাথর বা মেঝের ফাটলের মাধ্যমে এটি ভিতরে ঢুকে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসনালীয় গ্যাসস্নান ফুসফুস কোষে ক্ষতি করে এবং ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ২১ হাজার ধূমপান না করার সত্ত্বেও র‍্যাডন গ্যাসের কারণেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

দ্বিতীয়ত, সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক বা পরোক্ষ ধোঁয়া। প্রতিবেশীদের অথবা পরিবারের কারো ধূমপান থেকে উত্পন্ন ধোঁয়া বারবার শ্বাস নিলে আপনার ফুসফুস বিপজ্জনক রাসায়নিক উপাদানে আক্রান্ত হয়। এসব ফাঁকা বা ঘন ঘন বন্ধ ঘর, গাড়ি ও অফিসে ধোঁয়ার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ে। সিগারেট ব্যবহারকারী পারিবারিক সদস্যের সঙ্গে বাস করলে কিংবা সময় কাটালে ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

তৃতীয়ত, দূষিত বাতাস বা পরিবেশগত দূষণ। যানবাহন, কলকারখানা ও জ্বালানিদাহ থেকে উদ্ভূত ক্ষুদ্র কণিকা ও গ্যাস ফুসফুসে প্রবেশ করে জৈব কোষে জটিলতা বা জিনগত ক্ষতি ডেকে আনে। বিশেষ করে দেশীয় রান্নায় কাঠ, কয়লা বা পচা গোবর জাতীয় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে বন্ধ ঘরে নিরাপদ ব্যবস্থা না থাকলে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস দুর্বল হয়ে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চতুর্থত, কর্মক্ষেত্র বা পারিপার্শ্বিক ক্যান্সারজেনের সংস্পর্শ। যারা অ্যাসবেস্টস ফাইবার, বেঞ্জিন, ডিজেল ধোঁয়া বা ভারী ধাতু ব্যবহৃত পরিবেশে কাজ করেন, তারা ফুসফুস ক্যানসারে বাধ্যৈবল্য বেশি। বারবার সংস্পর্শে থাকা এসব উপাদান ক্যান্সার ট্রিগার করতে পারে, এমনকি যারা কখনো ধূমপান করেননি, তবুও ফুসফুসে জটিলতা হতে পারে।

পঞ্চমত, জেনেটিক কারণ ও জিনগত পরিবর্তন। কিছু ক্ষেত্রে মানুষের শরীরের জিন প্রয়োজনে পরিবর্তিত হলে ফুসফুসে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হয় যা ক্যানসারে পরিণত হয়। বহু ধূমপান না করা রোগীর মধ্যে EGFR জিনের মিউটেশন দেখা গেছে, যা চিকিৎসায় লক্ষ্যনীয়। এই জিনগত পরিবর্তন বিশেষ করে নারী ও এশীয় বংশধরদের বেশি দেখা যায়। গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে, এই পরিবর্তন অনুযায়ী লক্ষ্যনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুরক্ষার জন্য কী করবেন
আপনি যদি ধূমপান না করেন, তবে ক্যানসার সংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। ঘরে র‍্যাডন গ্যাস পরিমাণ নির্ধারণে নিরীক্ষণ করা জরুরি। আপনার বসবাস বা কাজের স্থান স্পষ্টভাবে ধূমপানমুক্ত রাখতে হবে। দূষণের উচ্চতার সময় বাড়তি বাইরে অবস্থান এড়িয়ে চলা বা মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। রান্নায় পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করুন এবং ঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে রাখুন।  ফুসফুস ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস বা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।


ফুসফুস ক্যানসার ধূমপান ছাড়াও নানা প্রাকৃতিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে হতে পারে। তাছাড়া, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সতর্ক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঝুঁকি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। তাই শুধু নিজের স্বাস্থ্য নয়, পরিবারের ও আশেপাশের মানুষের সুরক্ষায় আজ থেকেই সচেতন হতে হবে।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/5h67yyer

আফরোজা

×