
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ—এই দুইটি অভিন্ন মনে হলেও আসলে এক নয়। অনেকে বুঝতেই পারেন না, তারা স্ট্রেসে ভুগছেন, নাকি অ্যাংজাইটিতে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্রেস সাধারণত স্বল্পমেয়াদী ও চিহ্নিত কারণসংশ্লিষ্ট, অন্যদিকে অ্যাংজাইটি দীর্ঘস্থায়ী ও প্রায়ই কারণবিহীন হতে পারে।
স্ট্রেস বনাম অ্যাংজাইটি: কোথায় পার্থক্য?
দুটি অবস্থাই শরীরের প্রাকৃতিক 'ফাইট অর ফ্লাইট' প্রতিক্রিয়ার অংশ। কোনো হুমকি বা চাপে পড়লে শরীর অ্যাড্রেনালিনসহ নানা স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে, যার ফলে হার্টবিট ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। স্ট্রেস মূলত এই প্রতিক্রিয়ার শুরু, আর অ্যাংজাইটি সেই প্রতিক্রিয়ার মানসিক রূপ।
স্ট্রেসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে রাগ, বিষণ্নতা, একাকীত্ব, মাথা ঘোরা ও পেটের সমস্যা। অপরদিকে অ্যাংজাইটির লক্ষণ হতে পারে অজানা ভয়, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ঘাম, ঘুমের অসুবিধা ও স্নায়বিক উত্তেজনা।
বিশেষজ্ঞ মতামত
যুক্তরাষ্ট্রের লাইসেন্সধারী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. টিমোথি জে. লেগ বলেন, “স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা মানসিক রোগে পরিণত হতে পারে। তাই উপসর্গ দীর্ঘদিন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
ট্রিগার ও চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্বেগ ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন, যোগব্যায়াম, ধ্যান ও নিয়মিত ব্যায়াম উপকারী।
বিশেষ মনোচিকিৎসা যেমন ‘হ্যাবিট রিভার্সাল থেরাপি’ অ্যাংজাইটি-সম্পর্কিত টিকসের (involuntary movement or sound) চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে।
টিকস সম্পর্কে বলা হয়, এটি কোন আনুষ্ঠানিক রোগ নয়, বরং কিছু মানুষের ক্ষেত্রে উদ্বেগের প্রভাব হিসেবে দেখা দেয়। গবেষণা বলছে, দীর্ঘমেয়াদি টিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত অর্ধেকের বেশি তরুণই অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভোগেন।
কবে চিকিৎসা জরুরি?
চিকিৎসকরা বলছেন, যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটানো উদ্বেগ অনুভব করেন, ঘুম ও খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন আসে, অথবা আত্মনাশের চিন্তা মাথায় আসে, তাহলে অবিলম্বে পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যেহেতু অ্যাংজাইটি ও স্ট্রেস একমাত্র চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য নয়, তাই পরিবার ও বন্ধুদের সহানুভূতি এবং সামাজিক সচেতনতা বড় ভূমিকা রাখে।
স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি আমাদের সবার জীবনে কোনো না কোনো সময় আসে। তবে যখন তা সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখন তা আর উপকারী থাকে না, বরং মানসিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সময়মতো পার্থক্য বোঝা এবং যথাযথ সহায়তা নেওয়াই সুস্থতার প্রথম পদক্ষেপ।
Jahan