এই ৫টি লক্ষণ শুরু হলে বুঝে নিন, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার আপনাকেও গ্রাস করছে!

অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার একটি জটিল রোগ, যেখানে অগ্ন্যাশয়ের টিস্যুতে ক্ষতিকর (ক্যানসারজনিত) কোষের জন্ম হয়। পেটের পেছনে অবস্থিত অগ্ন্যাশয় একটি গ্রন্থি, যা ইনসুলিনসহ বিভিন্ন হরমোন এবং হজমে সহায়ক এনজাইম তৈরি করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই রোগ সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হয় না এবং দেরিতে ধরা পড়লে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তাই সময় থাকতে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার শনাক্ত করা খুবই জরুরি, কারণ দেরিতে ধরা পড়লে এটি প্রায়ই মৃত্যুঝুঁড়িপূর্ণ হয়ে ওঠে। নিচে এমন পাঁচটি প্রাথমিক লক্ষণ দেওয়া হলো, যেগুলো বেশিরভাগ মানুষই অবহেলা করে থাকেন।

১. জন্ডিস

অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণগুলোর একটি হলো জন্ডিস। এতে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। এটি তখনই ঘটে, যখন টিউমার পিত্তনালী আটকে দেয়, ফলে লিভারের উৎপাদিত বিলিরুবিন নামক হলুদ পদার্থ শরীরে জমা হতে থাকে।

জন্ডিসের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন—

• প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে বাদামি দেখা দেওয়া

• মল ফ্যাকাশে বা তৈলাক্ত হয়ে ভেসে থাকা, যা ঠিকমতো চর্বি হজম না হওয়ার কারণে হয়

• ত্বকে চুলকানি, যা বিলিরুবিন জমে থাকার কারণে হয়

যেহেতু জন্ডিস অন্যান্য কারণেও হতে পারে, যেমন পিত্তপাথর বা লিভারের রোগ, তাই অনেকেই এটিকে ভুলভাবে অন্য রোগ মনে করেন। তবে চোখ বা ত্বকের হলদে ভাব দেখা গেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অন্য কারণে হলে জন্ডিস সাধারণত সহজেই চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়।

২. অজানা ও আকস্মিক ওজন হ্রাস

প্রায় সব ধরনের ক্যানসারে ওজন হ্রাস একটি সাধারণ লক্ষণ। হঠাৎ করে অজানা কারণে ওজন কমে গেলে সেটি শরীরে বড় কোনো সমস্যার সংকেত হতে পারে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ওজন কমার কারণ হলো টিউমারের কারণে হজমে সমস্যা তৈরি হওয়া বা ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেওয়া।

এই অবস্থায় দেখা দিতে পারে—

• হঠাৎ ক্ষুধা কমে যাওয়া বা খুব অল্প খাবারে পেট ভরে যাওয়া

• খাবার ভালোভাবে হজম না হওয়া, কারণ অগ্ন্যাশয় থেকে হজম এনজাইম কম উৎপন্ন হয়

তবে, স্ট্রেস, অন্যান্য রোগ বা জীবনযাপনের পরিবর্তনের কারণে ওজন কমা ও ক্ষুধামান্দ্য হওয়ায় অনেকেই এই লক্ষণগুলো অবহেলা করে থাকেন।

৩. পেট বা পিঠের ব্যথা

উপরের পেট বা পিঠের মাঝখানের ব্যথা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। তবে অনেক সময় এটাকে গ্যাস্ট্রিক, পেশী টান বা সাধারণ ব্যথা ভেবে ভুল করা হয়।

এই ব্যথা সাধারণত—

• কখনো কখনো আসে আবার চলে যায়, কখনও আবার নিয়মিত হয়

• হয় ধীরে ধীরে বাড়া ব্যথা, কিংবা ভারী অনুভূতি

• শোয়ার সময় বাড়তে পারে এবং সামনের দিকে ঝুঁকে বসলে কিছুটা উপশম হতে পারে

এই ধরনের পেট বা পিঠের ব্যথা খুবই সাধারণ বলে অনেকেই এটিকে অবহেলা করেন বা সামান্য ব্যথানাশক খেলেই এড়িয়ে যান। তবে এমন ব্যথা যদি বারবার হয় বা অন্য রকম মনে হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪. অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা

কোনো কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের আরেকটি লক্ষণ, যা সহজেই উপেক্ষা করা হয়। এই ক্লান্তি সাধারণ ক্লান্তির মতো নয়—এটি বিশ্রাম বা ঘুমের পরও দূর হয় না।

এর পেছনে কারণ হতে পারে—

• শরীরের ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া

• বিপাক প্রক্রিয়ার পরিবর্তন

• টিউমারের অন্যান্য প্রভাব

এছাড়া এই ক্লান্তির সঙ্গে ঘুমের সমস্যা বা মন খারাপও দেখা দিতে পারে। যেহেতু ক্লান্তি খুবই সাধারণ সমস্যা, তাই অনেকেই এটাকে কাজের চাপ, কম ঘুম বা শরীরচর্চার কারণে মনে করে ভুল করেন।

৫. হজমের সমস্যা

অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার হজম প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে, কারণ এটি হজমতন্ত্রের কিছু অংশ আটকে দিতে পারে অথবা হজম এনজাইমের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।

এতে দেখা দিতে পারে—

• খাওয়ার পর বমি বা বমিভাব

• অল্প খেলেও পেট ফুলে থাকা বা অস্বস্তি

• মলত্যাগের পরিবর্তন, যেমন ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য, বা কখনও কখনও দুটোই

• মল ফ্যাকাশে, তৈলাক্ত বা ভেসে থাকা, যা চর্বি ঠিকমতো হজম না হওয়ার কারণে হয়

এই লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ হজমের সমস্যা, যেমন অম্লতা বা আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) ভেবে ভুল করা হয়। কারণ এই লক্ষণগুলো সাধারণত হালকা হয় বা আসা-যাওয়া করে, তাই এগুলো সহজেই অবহেলা করা হয়। তবে এসব সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।