
ইউরিক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থ, যা শরীরের কোষ ভাঙার সময় তৈরি হয়। সাধারণত এটি রক্তে দ্রবীভূত হয়ে কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীরে জমে গেলে তা গেঁটেবাত, জয়েন্টে ব্যথা ও প্রদাহের কারণ হতে পারে। এ সমস্যায় নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু মৌসুমি ফল রয়েছে যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।
গরমকালে শরীরের পানিশূন্যতা ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস অনেক সময় ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে জয়েন্টে ব্যথা, ফোলা, এমনকি গাউটের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত কিছু ফল খাওয়ার মাধ্যমেই আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে রাখতে পারেন।
আমেরিকান কলেজ অফ রিউমাটোলজি ও হার্ভার্ড হেলথ পাবোয় বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, নিচের এই সাতটি ফল নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহজ হবে।
১. চেরি
মিষ্টি বা টক সব ধরনের চেরিতেই রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সাহায্য করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চেরি বা চেরি জুস খেলে গাউট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
২. বেরি
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি ও রাসবেরির মতো বেরিগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। এগুলো প্রদাহ কমায় ও জয়েন্টের ব্যথা উপশম করে। গরমকালে ফলের সালাদে বা স্মুদি হিসেবে এগুলো রাখা যেতে পারে।
৩. কমলা-লেবু জাতীয় ফল
লেবু, কমলা, মাল্টা বা কিউই জাতীয় ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল ইউরিক অ্যাসিড কমাতে কার্যকর। 'আর্কাইভস অব ইন্টারনাল মেডিসিন'-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, ভিটামিন-সি রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের ঘনত্ব কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
৪. তরমুজ
এই গ্রীষ্মকালীন ফলটি শুধু শরীর ঠান্ডাই রাখে না, বরং এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির কার্যকারিতা বাড়িয়ে ইউরিক অ্যাসিড বের করে দিতে সাহায্য করে।
৫. আনারস
আনারসে রয়েছে ব্রোমেলেইন নামক একটি এনজাইম, যা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ কমায়। এটি ইউরিক অ্যাসিড সংক্রান্ত জয়েন্টে ব্যথা উপশমে সহায়ক।
৬. পেঁপে
পেঁপে হজমে সহায়ক হলেও অনেকে জানেন না, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, ফলে ইউরিক অ্যাসিড কমে আসে।
৭. আম
গ্রীষ্মের এই রাজকীয় ফলেও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার, যা শরীরের ইনফ্লেমেশন কমায়। তবে ডায়াবেটিস থাকলে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ইউরিক অ্যাসিডের উপসর্গ
আকস্মিক ও তীব্র জয়েন্টে ব্যথা (বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুলে),ফোলা ও স্পর্শে ব্যথা,গরম ভাব ও লালচে ত্বক,চলাচলে অসুবিধা,পুরনো গাউটের ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে সাদা রঙের গাঁট।
কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের কিছু খাবার ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে, সেগুলি এড়িয়ে চলা উচিত:অঙ্গপ্রত্যঙ্গজাত মাংস (লিভার, কিডনি),গরু, খাসি ও শুকরের মাংস,শুঁটকি, সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভিস জাতীয় মাছ,প্রসেসড মিট (সসেজ, বেকন),চিনিযুক্ত পানীয় ও ফ্রুকটোজ সমৃদ্ধ খাদ্য,অ্যালকোহল (বিশেষত বিয়ার ও হুইস্কি)।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে যা করবেন
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
নিয়মিত ৩০ মিনিটের হালকা ব্যায়াম করুন
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
প্রোটিনের উৎস হিসেবে মুরগি, ডাল বা টোফু বেছে নিন
গ্রিন টি পান করতে পারেন, এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে
যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। গরমকালে এই সাতটি ফল শুধু সুস্বাদু নয়, বরং ইউরিক অ্যাসিড কমাতেও কার্যকর প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর উপায় হতে পারে।প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এসব ফল যোগ করে সুস্থ ও ব্যথামুক্ত জীবন নিশ্চিত করুন।
সূত্র:https://tinyurl.com/5x5wexya
আফরোজা