
ছবিঃ সংগৃহীত
আমাদের লিভার আসলে শরীরের নীরব এক নায়ক। প্রতিদিন সে আমাদের রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ সরিয়ে নেয়, চর্বি ভেঙে দেয়, এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু যখন লিভারের কোষগুলোতে অতিরিক্ত চর্বি জমে, তখন সে ঠিকমত কাজ করতে পারে না। এই সমস্যাকেই বলে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, যা আজকাল অনেকেরই হয়ে উঠছে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য ঝামেলা।
কিন্তু চিন্তার কোনো কারণ নেই! বিশেষ কোনো ওষুধ নয়, কিছু সাধারণ খাবার আপনার লিভারের যত্ন নিতে পারে। প্রতিদিনের খাবারে কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন আপনার লিভারের জন্য বড় উপকার করবে।
গবেষণায় কী জানা গেছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ কিডনি ডিজিজেসের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রসুন খাওয়ার ফলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা অনেকাংশে কমে। এতে লিভারের চর্বি এবং ক্ষতিকর এনজাইমের মাত্রা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, কম মিষ্টি এবং বেশি ফাইবারযুক্ত ফল, শাকসবজি, পুরো শস্য, সঙ্গে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ, ফ্ল্যাক্সসিড ও জলপাই তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
তাই আসুন, জেনে নিই আমাদের লিভারের জন্য পাঁচটি সেরা খাবার:
১. সবুজ পাতা-জাতীয় শাকসবজি (পালং, মেথি, সরষে পাতা)
অনেক সময় আমরা এগুলোকে শুধু সাইড ডিশ হিসেবে দেখি। কিন্তু এই শাকগুলো লিভারের জন্য আসলে একটা বড় উপহার। এগুলো আপনার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, লিভারে জমে থাকা চর্বি কমায় আর শরীরের প্রদাহ হ্রাস করে।
২. হলুদ (হলুদের গুণ অমূল্য!)
রান্নায় শুধু রংই দেয় না, হলুদের গায়ে থাকা ‘কারকিউমিন’ নামের উপাদানটি লিভারের কোষকে সুস্থ রাখে, এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সামান্য হলুদের ছোঁয়া থাকুক আপনার খাবারে।
৩. আমলা (ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার)
টক মিষ্টি এই ছোট ফলটি লিভারের জন্য এক প্রকৃতি চিকিৎসক। এটি লিভারের চর্বি কমায়, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। সরাসরি খেতে পারেন, কিংবা রসে মিশিয়ে সকালে পান করতে পারেন।
৪. রসুন (রান্নার মশলা নয়, স্বাস্থ্যকর উপাদান)
রসুন শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। এটি লিভারের কাজকে সহজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রান্নায় তড়কা হিসেবে ব্যবহার করুন, বা সেদ্ধ রসুন কয়েক কোয়া খেয়ে ফেলুন।
৫. ফ্ল্যাক্সসিড
ফ্ল্যাক্সসিডে আছে প্রচুর ফাইবার ও ওমেগা-৩, যা লিভারের প্রদাহ কমায় এবং চর্বি হ্রাসে সাহায্য করে। স্ন্যাকস, স্মুদি, বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
সহজ কথায়,
আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় একটু সচেতনতা, আর এই সহজ-লভ্য খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করলেই লিভার অনেক ভালো থাকবে। তাই লিভারের সুস্থতা বজায় রাখতে আজ থেকেই শুরু করে দিন এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো।
মারিয়া