ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় দ্রুত বুড়িয়ে যান, কেন? 

প্রকাশিত: ০৮:৫৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় দ্রুত বুড়িয়ে যান, কেন? 

দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় দ্রুত বুড়িয়ে যান

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে  দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা পশ্চিমা নারীদের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধ হচ্ছেন। দেখা গেছে, মেনোপজের সময়কাল এবং জৈবিক বার্ধক্যের মধ্যে গভীর সংযোগ রয়েছে,  রক্তে জেনেটিক বার্ধক্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে মেনোপজের প্রভাব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, যা দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের দ্রুত বার্ধক্যের একটি প্রধান কারণ।

দক্ষিণ এশিয়ার একজন নারী পাকিস্তানি সুমরিন কালিয়া। মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করেন এবং ২৫ বছর বয়সের মধ্যে তার চার সন্তান হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী মেনোপজের গড় বয়স ৪৫-৫৫ বছর। কিন্তু কালিয়া মাত্র ৩৭ বছর বয়সে অকস্মাৎ এই বাস্তবতার সম্মুখীন হন। আমি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ অনুভব করতে শুরু করি। চিকিৎসক বলেছিলেন আমি হয়তো মেনোপজের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, কালিয়া বলেন। কেউ আমাকে এটি সম্পর্কে বোঝায়নি।

আমেরিকার এক গবেষণা অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত নারীদের মেনোপজ ৪৮-৪৯ বছর বয়সে শুরু হয়।

অন্যদিকে, সাধারণ আমেরিকান নারীদের মেনোপজ শুরুর গড় বয়স ৫২ বছর। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিস্থিতি আরো চিন্তাজনক। ভারত ও পাকিস্তানে নারীরা ৪৬-৪৭ বছর বয়সে মেনোপজে প্রবেশ করেন। এর পূর্বেই তারা বিভিন্ন প্রাথমিক লক্ষণ অনুভব করেন। কৌতূহলের বিষয় হলো, পাকিস্তানে প্রতি নারীর সন্তান সংখ্যা ২০২৩ সালের ৩.৬১ থেকে ২০২৪ সালে ৩.১৯-এ নেমে এসেছে। ভারতে এই সংখ্যা ২.১৪ থেকে ২.১২ হয়েছে।

পাকিস্তানের হরমোন বিশেষজ্ঞ পলওয়াশা খান বলেন, মেনোপজের সময় একটি বংশগত বিষয়। মায়ের সময় অনুযায়ী মেয়েদের অবস্থা অনুমান করা যায়। দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক প্রত্যাশা নারীদের বিয়ের পর দ্রুত সন্তান নিতে বাধ্য করে। নারী স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা হয়, তাকে একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে দেখা হয় না, খান বলেন। 

হরমোন সংক্রান্ত সচেতনতা ন্যূনতম, এবং হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি বিরল। ১০ হাজার নারী থেকে দুজনকে খুঁজে পাওয়া যাবে যারা এই চিকিৎসা নিয়েছেন। ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সংগ্রামের গল্প করাচির সাবিনা কাজী তার মধ্য চল্লিশে মেনোপজের কারণে মানসিক এবং স্মৃতি ও চিন্তার সমস্যার সম্মুখীন হন। আমার স্বামী ও সন্তানরা আমার সঙ্গে কথা বলত, কথাগুলো মাথা থেকে বেরিয়ে যেত (মনে থাকত না)। আমি প্রমাণ করতে চাইতাম যে আমি বোকা নই। হিস্টেরেক্টমি অপারেশনের পর কাজী সর্বোচ্চ মানসিক চাপ অনুভব করেন।

চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, কেউ দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি সম্পর্কে ভাবেনি। আমার মনে হয়েছিল বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গড় পরিসংখ্যান কি আমাদের সত্যিকারের চিত্র দেখায়? দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের দ্রুত বার্ধক্য কি আসলেই একটি নতুন স্বাস্থ্য সংকট, নাকি নারী স্বাস্থ্য গবেষণায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা? বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা গবেষণায় শ্বেতাঙ্গ, পশ্চিমা নারীদের অভিজ্ঞতাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নারীদের বিভিন্নতাকে সমস্যা হিসেবে দেখার প্রবণতা রয়েছে।

মেনোপজনারীদের জীবনের একটি স্বাভাবিক পর্যায় হলেও এর অভিজ্ঞতা সবার জন্য একই রকম নয়। বিভিন্ন সংস্কৃতির নারীদের এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা বুঝতে হলে শ্রেণি, জাতি, জলবায়ু, বংশগতি এবং অন্যান্য বিষয়ের বহুমাত্রিক গবেষণা প্রয়োজন। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ, প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ এবং স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্যের কারণে তারা সাধারণত অন্যদের তুলনায় আগে মেনোপজ হয় এবং এর লক্ষণগুলো তাদের ক্ষেত্রে অধিক তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে যে কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক নারীরা পূর্বের ধারণার চেয়ে প্রায় ১.২ বছর আগে মেনোপজ -এ পৌঁছান। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ এবং সামাজিক অসমতার প্রভাবকে। কিন্তু বড় বড় স্বাস্থ্য গবেষণায় এই সমস্যাটি পুরোপুরি ধরা পড়েনা। কারণ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। যেসব নারীদের কম বয়সে মেনোপজ হয়েছে, তাদের অনেকেই এই গবেষণার আওতার বাইরে থেকে গেছেন। 

গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের অবহেলা নারীদের স্বাস্থ্যে প্রকৃত বর্ণগত বৈষম্যের চিত্রকে আড়াল করে দেয়। সময়োপযোগী পদক্ষেপের প্রয়োজন বিশেষজ্ঞরা এই সমস্যার পেছনে কমপক্ষে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন: জেনেটিক কারণ, দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা, চাপ এবং মানসিক সমস্যা। প্রতিটি কারণ অন্যগুলোকে প্রভাবিত করে। দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা অত্যধিক পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন, খান বলেন। 

মাজের চাপ, শ্বশুরবাড়ির চাপ। তারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, যা তাদের দ্রুত বৃদ্ধ করে তুলছে। এই চিহ্নিত কারণগুলোর বাইরেও রয়েছে পুরুষতান্ত্রিক চাপ এবং ব্যবস্থাগত অবহেলার ব্যাপক প্রভাব। গ্লোবাল সাউথের নারীদের অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে আমাদের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করা এবং নারীদের স্বাস্থ্যের রাজনৈতিক সূক্ষ্মতা বোঝা প্রয়োজন।

ডয়চে ভেলে

তাসমিম

আরো পড়ুন  

×