ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের স্রষ্টা ভালো নেই

প্রকাশিত: ১৮:০৯, ১৯ জুলাই ২০২২

‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানের স্রষ্টা ভালো নেই

গানটির রচয়িতা হাশিম মাহমুদ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি আলোচিত ‘তুমি বন্ধু কালা পাখি আমি যেন কী... বসন্তকালে তোমায় বলতে পারিনি। সাদা সাদা কালা কালা, রঙ জমেছে সাদা কালা, হয়েছি আমি মন পাগলা বসন্তকালে...’ গানটির রচয়িতা হাশিম মাহমুদ। একই সঙ্গে সুরকার, গীতিকার, ছড়াকার, আবৃত্তিকার ও অভিনয়শিল্পীও তিনি।

গানটির রচয়িতা বর্তমানে ভালো নেই, ভুগছেন মানসিক সমস্যায়। তাকে দেখভাল করেন তার ছোট ভাই বেলাল আহমেদ (৪৫) ও বৃদ্ধা মা জমিলা আক্তার (৭৫)।

আবুল হাশিম ও জমিলা আক্তার দম্পতির সাত সন্তানের মধ্যে হাশিম মাহমুদ পঞ্চম। বর্তমানে মায়ের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তল্লার সবুজবাগ এলাকায় থাকেন তিনি। নিজের ঘরে লেখালিখি আর গান নিয়ে মত্ত থাকেন।

হাশিম মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা চত্বরে জীবন-যৌবন কাটিয়েছেন। সেখানে হাশিম ভাই নামেই ব্যাপক পরিচিত তিনি। সম্প্রতি মুক্তির অপেক্ষায় থাকা মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে তিনি ওই গানটির মতো আরও অন্তত ৯০টি গান রচনা করেছেন। এখনও গানের গলা বেশ ভালো তার। লালনগীতি ও নিজের গান করেন কোনো ধরনের বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই।

হাশিম মাহমুদকে দেখভাল করা তার ছোট ভাই বেলাল আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় বেশ জনপ্রিয় নাম হাশিম মাহমুদ। তিনি সব সময় গানের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করেন। বরাবরই নিজেকে আড়াল করে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। অনেকেই নিজেকে হাইলাইট করতে চান, কিন্তু তিনি এতে বিশ্বাসী নন। নারায়ণগঞ্জের শাপলা নামে একটি সংগঠন থেকে তার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদার্পণ। সেই থেকেই গান, ছড়া ও ছোট গল্প লেখা শুরু। 

তিনি বলেন, সাধারণত পড়াশোনা করে জাগতিক জীবনে তিনি বিশ্বাসী না। বাবা তাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি দিয়েছিলেন। তবে সেখানে তার মন টিকেনি বেশি দিন, ফিরেছেন সেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ছায়ানট থেকে রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীতের ওপর পড়াশোনা করেন। তৃতীয় বর্ষে গিয়ে তিনি আর তা চালিয়ে যাননি। বিএ অনার্স পরীক্ষা দেবে দেবে এমন অবস্থায় বাংলা একাডেমি থেকে ছড়ার বই বের করেন। বইটির নাম দেন ‘ধপাস’। পরে ঢাকায় বৈরাগী নামে একটি গানের দল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে চার থেকে পাঁচটি গানের প্রোগ্রাম করে বেশ আলোড়ন তুলে গানের দল বৈরাগী।

বেলাল আহমেদ আরও বলেন, অনেক সাংবাদিক এসে তার সঙ্গে কথা বললেও এই মানুষটাকে সুস্থ করার বিষয়ে কেউ বলেন না, খুব কষ্ট লাগে। তার একটু বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। তার এখনও দেশকে দেওয়ার মতো অনেক কিছুই আছে। তিনি নিজের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেন। অন্যের থেকে ধার বা চুরি করে তিনি সমৃদ্ধ নন। রাষ্ট্রের কাছে চাওয়া- যদি শিল্পীদের জন্য কোনো জায়গা থাকে, যেখানে স্বল্প ব্যয়ে মানসম্মত চিকিৎসার ব্যবস্থা যেন হয়। আমি ভাই হিসেবে এতুটুকুই চাই। 

তিনি বলেন, হাশিম ভাইয়ের গান বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে, কিন্তু তার কী হচ্ছে। ব্যক্তি হাশিম কি না খেয়ে থাকবে? রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে? যে মানুষটা গানগুলো সৃষ্টি করলেন তার যত্ন হলো না, তার গানের যত্ন হলো। আমি আসলে এমন শিল্পবোধে বিশ্বাসী না। তার চিকিৎসার দরকার। 

×