ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

আফসোসের শহর নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৩ মে ২০২৪

আফসোসের শহর নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন

বৃহস্পতিবার মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ আফসোসের শহর নাটকের দৃশ্য

খণ্ড খণ্ড গল্পগুলো জুড়ে গেছে এক সূত্রে। সেই সুবাদে সামনে আসে পরাবাস্তব চিত্রকল্প। তাই গল্পের প্রধান তিনটি চরিত্র মৃত না জীবিতÑসে নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। এমনকি তারা পৃথক নাকি এক সত্তাÑ সেটাও বোঝা যায় না। শুরুতেই মঞ্চে হাজির হয় তিন মৃত ব্যক্তি। কিভাবে তারা মারা গেল এই বয়ান দেয় পরস্পরের কাছে।

শক্তিমান উর্দু কথাসাহিত্যিক ইনতেজার হুসেইনের এমনই গল্পকে রাজধানীর নাট্যমঞ্চে এনেছে নয়া নাট্যদল সৃজন-নাট। ‘আফসোসের শহর’ শিরোনামের সে নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নজরুল সৈয়দ। উর্দু থেকে সালেহ ফুয়াদ অনূদিত মূল গল্পটা রেখে এটিকে কাব্যনাট্যে রূপ দিয়েছেন তিনি। 
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক নজরুল সৈয়দ বলেন, যুদ্ধ আর ধর্ষণের রক্তস্নাত পৃথিবীতে মানুষ যখন নীরবতার সংস্কৃতিকে নির্ভর করে বালিতে মুখ গুঁজে ভালো থাকার অভিনয় করে, তখন নিজেকে যে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানো প্রয়োজন বলে সৃজন-নাট মনে করে, সেই প্রশ্নের নাটক আফসোসের শহর।

যে অলীক পৃথিবী মানুষের স্বপ্নের আঙিনায় এখন আর উঁকি দেয় না, সেই স্বপ্নের পৃথিবী সন্ধানের নাটক এটি। জাতি আর সম্প্রদায়গত এই সংঘাতের কালে মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই নির্দ্বিধায় হত্যা করে ফেলতে পারছে অপর মানুষকে, মেতে উঠতে পারছে অমানবিক পৈশাচিকতায়। তাই নাটকটি অপ্রাপ্তমনস্ক ও বিনোদনপ্রত্যাশীদের জন্য ক্ষতিকর।

নাটকে দেখা যায়, দ্বিতীয় ব্যক্তি তাড়া খেয়ে ভয়ে-আতঙ্কে পালিয়ে এক নির্জন শহরে গিয়ে পড়ে। সেখানে সর্বত্র ত্রাস বিরাজ করে। এ শহরে মানুষ আছে ঠিকই কিন্তু সবাই ঘরে বন্দি। শিশুরা ক্ষুধায় অস্থির। বড়দের ঠোঁটে জমাট ব্যথা। মায়েদের বুক শুকিয়ে কাঠ। তাদের সবুজ চেহারা ফুটা হয়ে গেছে। অপ্রাপ্তবয়স্করা হয়ে গেছে বুড়ো। জানা যায়, এ এক নৈরাশ্যের শহর। এখানে সবাই মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

সবার চেহারায় মৃত্যুর ছায়া। লোকটি জানতে পারে, বাসিন্দারা নিরাপদ ভেবেই এ শহরে এসে বসবাস শুরু করেছিল। তারপর এক সময় নিজেদেরকে জুলুমের শিকার আবিষ্কার করে সবাই। এ শহরেরই অন্য আরেকটি মাঠে বিজয়ের নাকারা শুনতে পায় যুবক। সেখানে পৌঁছলে তাকে কানে কানে বলে দেওয়া হয়, সময় এখন পতনের। সতর্ক হওয়া জরুরি। তারপর লোকটি দেখতে পায়, সম্মিলিতভাবে তার ওপর থুতু নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এটা আবিষ্কার করেই সে-ও মারা যায়।
গল্পটি ‘ইনতেজার হুসেইনের শ্রেষ্ঠগল্প’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। অনুবাদ করেছেন সালেহ ফুয়াদ। তিনি বলেন, উর্দু ছোটগল্পের শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক ইনতেজার হুসেইন। পৌরাণিক আখ্যান আর গভীর দর্শনে পাঠককে আঁকড়ে রাখেন তিনি। সোজাসাপ্টা গল্প না বলে প্রতীক সৃষ্টি করে কাহিনীর বিস্তার ঘটান। আফসোসের শহর মূলত তিন মুত বা জীবিত ব্যক্তির সংলাপধর্মী গল্প। এই তিন ব্যক্তিও প্রতীক।

হয়ত বা তারা মানুষ নয়; তিনটি শহর বা দেশ। সাতচল্লিশের আগে তারা একই ছিল। তার পর দিল্লি, লাহোর আর ঢাকায় বিভক্ত। এমনসব খ- খ- দৃশ্য আর দার্শনিক সংলাপ আছে এ নাটকে যে, অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দেয়। 
আফসোসের শহর তৈরি হয়েছে রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়।

অভিনয় করেছেন বন্ধন সাহা, পলক চক্রবর্তী, রিফাত আরা জুঁই, মিডিয়া আশাক্রা ও সুমন আহমেদ রানা। নির্দেশনায় সহযোগিতা করেছেন সমর কান্তি সিংহ। আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন অম্লান বিশ্বাস। মিডিয়া আশাক্রার পোশাক পরিকল্পনায় চলন ও দেহবিন্যাস পরিকল্পনায় ছিলেন বন্ধন সাহা।

×