
ছবিঃ সংগৃহীত
অনেক বছর ধরে প্রতীক্ষা ও নানা বাধা পেরিয়ে, অবশেষে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আধুনিক ও শক্তিশালী বিমান বাহিনী গড়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। যদি সব কিছু ঠিকঠাক চলে, তাহলে তুরস্কের হাতে থাকবে আমেরিকার তৈরি F-16 এবং F-35 স্টেলথ যুদ্ধবিমান, ইউরোপের ইউরোফাইটার টাইফুন, নিজস্ব তৈরি KAAN স্টেলথ জেট, আর একঝাঁক আধুনিক যুদ্ধ ড্রোন — যা এককথায় চোখে পড়ার মতো।
কিন্তু এই যাত্রাপথটা মোটেই সহজ নয়।
জার্মানির সম্মতিতে আটকে ইউরোফাইটার!
তুরস্ক অনেক দিন ধরেই ৪০টি ইউরোফাইটার টাইফুন যুদ্ধবিমান কেনার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হলো — এই যুদ্ধবিমান চারটি দেশ মিলে বানায়: জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি ও স্পেন। বিক্রির জন্য সবার সম্মতি লাগবে।
যেখানে ব্রিটেন, ইতালি আর স্পেন রফতানিতে আগ্রহী, সেখানে জার্মানি এতদিন মানবাধিকার ইস্যু দেখিয়ে বিরোধিতা করে আসছিল।
কিন্তু এবার যেন হাওয়া বদলাচ্ছে
জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ সম্প্রতি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইউরোফাইটার রফতানি নিয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। যদিও তুরস্কের নাম সরাসরি বলেননি, কিন্তু সবাই ধরে নিয়েছে ইঙ্গিতটা তাদের দিকেই।
F-35 ফিরে পাওয়ার লড়াই এখনও চলছে
এতদিন F-35 যুদ্ধবিমান পেত তুরস্ক, কিন্তু ২০১৯ সালে আমেরিকার রোষে পড়ে প্রজেক্ট থেকে বাদ পড়ে। কারণ তারা রাশিয়ার তৈরি S-400 ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছিল। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিল ঠান্ডা।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান নিজেই সম্প্রতি বলেছেন, “আমরা এখনও F-35 ছাড়িনি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
খবরে জানা যাচ্ছে, যদি তুরস্ক কোনোভাবে তাদের এস-৪০০ ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় বা সরিয়ে দিতে রাজি হয়, তাহলে আবারও আমেরিকা তাদের F-35 দিতে পারে।
F-16 আপগ্রেড আর দেশীয় KAAN যুদ্ধবিমান
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন ৪০টি F-16 কিনতে পেরেছে তুরস্ক। পুরনো ৭৯টি F-16 আপগ্রেডের জন্য যেসব কিট কেনার কথা ছিল, তা না নিয়ে তুরস্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজেরাই আপগ্রেড করবে।
এছাড়া দেশীয়ভাবে তৈরি অত্যাধুনিক KAAN যুদ্ধবিমান প্রথমবার আকাশে ওড়ানো হয়েছে। দুই ইঞ্জিনের এই বিমানটি ৫ম প্রজন্মের স্টেলথ জেট, যা ২০৩০ সালের শুরুতে তুর্কি বিমানবাহিনীতে যুক্ত হবে। এটি চালু হলে, তুরস্ক এমন একটি দেশের তালিকায় নাম লেখাবে, যারা নিজেরাই আধুনিক স্টেলথ ফাইটার বানাতে পারে।
ড্রোন প্রযুক্তিতে তুরস্ক এক বিপ্লবের নাম
যেখানে অনেক দেশ এখনো ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যস্ত, সেখানে তুরস্ক মাঠে নামিয়ে ফেলেছে একের পর এক কার্যকরী যুদ্ধ ড্রোন।
বায়রাকতার TB-2 ইতোমধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ ও আজারবাইজান-আর্মেনিয়া সংঘাতে দারুণ পারফর্ম করেছে।
এরপর এসেছে TB-2T AI — আরও স্মার্ট, আরও উন্নত
তুরস্ক তৈরি করেছে আকিন্সি, যা অনেকটা যুদ্ধবিমানের মতোই আকাশে দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকতে পারে।
আর সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো কিজিলেলমা — একটি সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধবিমানের মতো লড়াই করতে সক্ষম, আক্রমণাত্মক ড্রোন। এটি শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ধ্বংস করতে, ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে এবং কাছে থেকে যুদ্ধ করতে পারবে।
তুরস্কের সামরিক স্বপ্ন কতটা বাস্তব?
আজ থেকে কয়েক বছর আগেও তুরস্ক এতটা আধুনিক বিমান বাহিনী গড়তে পারবে — এমন ধারণা অনেকের কাছেই ছিল অবিশ্বাস্য।
কিন্তু এখন যেভাবে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা হচ্ছে, দেশীয় প্রযুক্তিতে বিমান তৈরি হচ্ছে এবং ড্রোনে বিশ্বে নেতৃত্ব নেওয়া হচ্ছে — তাতে করে একথা বলাই যায়:
- তুরস্ক খুব শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে আধুনিক বিমান শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে।
- আর সেটা শুধু তাদের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্য বদলে দিতে পারে।
মারিয়া