ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

কালো বিড়াল কি অশুভ শক্তির ইঙ্গিত! ভুল ধারণা না রেখে, জানুন সত্যি ঘটনা

আবু সালেহ মোঃ হামিদুল্লাহ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২৪ জুলাই ২০২৫

কালো বিড়াল কি অশুভ শক্তির ইঙ্গিত! ভুল ধারণা না রেখে, জানুন সত্যি ঘটনা

বিড়াল একটি ঘরে পোষা নিরীহ ও শান্ত প্রাণী হিসেবে আমাদের কাছে সকলের অতি পরিচিত একটি প্রাণী। ছোট বেলায় ক্লাসে আমার পোষা বিড়াল রচনা লিখতে গিয়ে আমরা আরো জেনেছি বিড়ালের আকৃতি অনেকটা দেখতে বাঘের মতো। বিড়ালের আকৃতি দেখতে যেহেতু বাঘের মতো তাই একে বাঘের মাসি হিসেবেও বলতে শোনা যায়।

সত্যি বলতে কী বিড়াল একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সৌখিন প্রাণী হিসেবে গণ্য করার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিড়ালের বন্ধুসুলভ আচরণ সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে বর্তমান যুগের স্মার্ট তরুণীদের। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও আচারণে হিংস্রতা নেই বলেই তরুণীরা নিজদের একাকিত্ব দূর করার জন্যেই সঙ্গী হিসেবে ঘরে বিড়াল পোষার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এর প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেসব পরিবারে বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণী আছে তাদের পরিবারেই দেখা মেলে এক বা তার অধিক পোষা বিড়ালের অস্তিত্ব। 

বর্তমান যুগে শহরাঞ্চলে তরুণীদের মধ্যে বিড়াল পোষার প্রবণতা বেশি থাকলেও গ্রাম অঞ্চলের তরুণীদের মধ্যে বিড়াল পোষার প্রবণতাও দিনে দিনে সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে এই প্রাণী পোষার কারণ হিসেবে বলা যায়, বিড়াল সাধারণত কুকুর এর চেয়ে ছোট এবং তাদের দেখাশোনা করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। এছাড়া, অনেক তরুণী তাদের একাকীত্ব দূর করতে এবং বন্ধু হিসেবে বিড়ালকে বেছে নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে।

তবে বিড়াল পোষার ক্ষেত্রে সকলেই সাদা বিড়ালকেই পরমবন্ধু হিসেবে বেছে নেয়। কালো বিড়াল বলতে আরেকটি নিরীহ প্রাণী আছে মানুষ সহজেই তা মেনে নিতে চায়না। এক শ্রেণীর মানুষ ভেবেই নেয় কালো বিড়াল হিংস্র ও বণ্যপ্রাণী। মানুষের এই ভাবনাটা নতুন কিছু নয়, যুগ যুগ ধরে সাদা বিড়ালকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় কিন্তু কালো বিড়ালকে কেউ বন্ধু হিসেবে মেনে নেয়না কারণ, অনেকের‌ই ধারণা কালো বিড়াল হচ্ছে অলৌকিক, অশুভ কিংবা ভৌতিক জাতীয় কোনো প্রাণী। এই সব ধরনের অশুভ শক্তির সাথে কালো বিড়ালের যোগসূত্র রয়েছে! তবে এটা সত্যি কথা কালো বিড়াল অশুভ শক্তির কোনো ইঙ্গিত দেয় না। এটি একটি কুসংস্কার। সমাজে কালো বিড়ালকে অশুভ বা দুর্ভাগ্য বলে মনে করা হলেও, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটি একটি ভুল ধারণা, যা মূলত ইউরোপের বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসেছে। 

সেই বহুযুগ আগে থেকেই কালো বিড়ালকে অশুভ প্রাণী হিসেবে মানা হয়। আজও আশপাশে কালো বিড়াল দেখলে অনেকেই এড়িয়ে যান। বাড়িতে প্রবেশ করল আঘাত করে তাড়িয়ে দেয়। কালো বিড়াল রাস্তা পার হলে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে দেন চালক, পথচলতি মানুষও খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে পার হন রাস্তা! কিন্তু জানেন কি, কেন কালো বিড়ালকে অশুভ বলে মনে করা হয়? 

কালো বিড়াল অশুভ মানার পিছনে বহু কথিত বিশ্বাস রয়েছে। ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ইজিপ্সিয়ানরা বিশ্বাস করতেন, কালো বিড়ালের মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। তাই ওই সম্প্রদায়ের মানুষেরা কালো বিড়ালকে পুজো করতেন। পরবর্তীকালে ইউরোপে এর অর্থ বদলে যায়। ১৫৬০ সালে ইউরোপের বিভিন্ন উপকথায় কালো বিড়ালকে অশুভ হিসাবে দেখানোর চল শুরু হয়। ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মায়, সত্যিই হয়তো কালো বিড়ালের মধ্যে কোনও অশুভ শক্তি রয়েছে।

কালো বিড়াল নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। সমাজে এমন ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, কোনও শুভ কাজে যাত্রা করার সময় যাত্রাপথে কালো বিড়ালের দেখা পেলে তা অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এই বিশ্বাস এতটাই মানুষের মনে গেঁথে রয়েছে যে অনেকে রাস্তা দিয়ে বিড়াল পার হলে গন্তব্যস্থলে না গিয়ে বাড়ি ফিরে যান, অথবা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার যাত্রা শুরু করেন। এতে নাকি দোষ ‘কাটা’ যায়। আবার কেউ কেউ কালো বিড়ালকে প্রেতাত্মা যুগের প্রতিনিধি বলে মনে করেন। তবে কোরআন হাদিসের কোথাও বর্ণনা নেই যে কালো বিড়ালকে অশুভ প্রাণী হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। 

আসলে বিড়াল জাতীয় ছোট প্রাণীদের সাধারণত অন্য বড় প্রাণী বা মানুষ তাড়া করে। এর ফলে তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করে। তাই বিড়াল রাস্তা পার করার পর একটু দাঁড়িয়ে গেলে ওই প্রাণী বা মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা কমে যায়৷ সেখান থেকেই শুরু হয় বিড়াল রাস্তা পার করলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা। সর্বশেষে একথা বলতেই হয়, কালো বিড়ালকে অশুভ মনে করার সাপেক্ষে কোনও প্রমাণিত তথ্য নেই। তাই বিড়ালের কালো রং-এর সঙ্গে অশুভ কিংবা অপয়া হওয়ার কোনও যোগ নেই।

পরিশেষে একটি কথাই বলবো আল্লাহ তায়ালা তাঁর সকল সৃষ্টিকেই পরম যত্নে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রাণীকূলের সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে কিছু সাদা, কিছু কালো আরো অন্যান্য বর্ণের। তবে তিনি কোথাও বলেননি আমি আমার সৃষ্টির মধ্যে শুধু সাদা গুলোকেই বেশি ভালোবাসি আর অন্য বর্ণের প্রাণীদের ঘৃণিত হিসেবে অপছন্দ করি। তবে যুগে যুগে প্রমাণিত আল্লাহ সৃষ্টির মধ্যে সাদা ও কালোর মধ্যে কোনো বিভদ সৃষ্টি করেননি। সাদাকে সুন্দর বল সবাই প্রাধান্য দিতে পারে কিন্তু অন্যদিকে আল্লাহ মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কালোমানব হিসেবে খ্যাত হযরত বেলাল (রা:) ইসলামের শ্রেষ্ঠ গুণের ব্যক্তিত্ব হিসেবে গুণান্বিত করেছেন পৃথিবীর বুকে। তাই আসুন আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ এবং পশু পাখির ক্ষেত্রে সাদা-কালোর ভেদাভেদ না খুঁজে উভয়কে সমান দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করি। এবং আমাদের মানবীয় গুণাবলী ও ভালোবাসায় তাদের সিক্ত করে নিজেদেরকে মহৎ গুণে গুণান্বিত করার চেষ্টা করি।

Jahan

×