ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

একটি কুকুর বাঁচিয়েছিল পুরো শহরের মানুষের প্রাণ! 

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ১৮ মে ২০২৪

একটি কুকুর বাঁচিয়েছিল পুরো শহরের মানুষের প্রাণ! 

সাহসী কুকুর টোগো

কুকুরের প্রভুভক্তি সকলেরই জানা। তবে এমন এক কুকুর যার বীরত্বও কম নয়। তার জন্য পুরো একটি শহরের মানুষের প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল। কুকুরটির নাম টোগো। 

ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিমত্তা, দুরন্তপনা দিয়ে মুগ্ধ করে রাখত সবাইকে। বুদ্ধিমত্তার কারণেই স্লেজডগের দলনেতা হয়েছিল টোগো।

স্লেজ হচ্ছে আর্কটিকের বরফাচ্ছাদিত মেরু এলাকায় মালামাল পরিবহণের একমাত্র মাধ্যম। আধুনিক বরফে চলার উপযোগী ট্রাকগুলো আসার আগ পর্যন্ত। কুকুরটানা স্লেজগাড়ি একটা সময় সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল। ৬-১০টি কুকুরের একটি দল স্লেজগাড়ি টানত। স্লেজটানা দলের লিড ডগ বা দলনেতা কুকুরকে হতে হয় দলের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী, সেই সঙ্গে তীক্ষ্ণ বিচক্ষণতা সম্পন্ন।

ঘটনাটা ১৯২৫ সালের, হিমশীতল আলাস্কার ছোট্ট একটি শহর নম। হঠাৎ করে শহরে ডিপথেরিয়া রোগের মহামারি হানা দেয়। কয়েকটি শিশু মারা যায়, বাকিদের অবস্থাও অনেক খারাপ। 

শহরের একমাত্র হাসপাতালে ডিপথেরিয়া অ্যান্টিটক্সিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ৬৭৪ মাইল (১০৮৫ কিলোমিটার) দূরের শহর নুলাতো থেকে আনতে হবে সেরাম। সভ্যতা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই এলাকায় এক শহরের সঙ্গে আরেক শহরের যোগাযোগের একমাত্র উপায় হচ্ছে কুকুরচালিত স্লেজ।

এরই মধ্যে শুরু হয় ভয়াবহ তুষারঝড়। মাইনাসের নিচের তাপমাত্রা, সেই সঙ্গে তুষারঝড়, এমন বিরূপ আবহাওয়ায় বরফঢাকা পাহাড়, সাগর ডিঙ্গিয়ে সেরাম নিয়ে ফেরত আসে সেপলারের স্লেজ, যার লিডে ছিল টোগো। পুরো জার্নিটা ভাগ করে মোট ২০টা রিলে দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

তবে বাকি উনিশ দলের গড় জার্নি ছিল ৩১ মাইল, সেখানে টোগো তার দল নিয়ে একাই ৩ দিনে ২৬৪ মাইল দৌড়েছিল। এসময় সবচেয়ে ভয়ংকর বিপদসঙ্কুল রাস্তায় যেখানে আর্কটিক সাগরের জমে থাকা বরফের উপর দিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে! পথে ছিল ৫০০০ ফুট উচ্চতার বরফ ঢাকা পাহাড়। সেপলা্র পূর্বের রেকর্ড ছিল ৪ দিনে এই দূরত্ব অতিক্রম করা, সেখানে টোগোর বীরত্বে এবার প্রতিকূল আবহাওয়া সত্বেও ৩ দিনেই ফেরত আসতে পেরেছিল।

এই দুঃসাহসিক অভিযানের ফলে সেসময় নম শহরের অধিবাসীরা প্রাণে রক্ষা পায় বলে ঘটনাটি ইতিহাসে ১৯২৫ সালের সেরাম রান নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। সেই সঙ্গে বিখ্যাত হয়ে আছে এই অভিযানের নায়ক টোগো। এরপর যতদিন বেঁচেছিল টোগো, খ্যাতি নিয়েই বেঁচেছিল।

মৃত্যুর পরে তাকে স্টাফিং করে আলাস্কা মিউজিয়ামে রাখা হয়, হাড়গুলো আলাদাভাবে ইয়েল ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে স্থান পায়। ২০১১ সালে টাইম ম্যাগাজিন টোগোর এই অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। তাকে বিশ্বের সবচেয়ে হিরোইক অ্যানিম্যাল নামে আখ্যায়িত করে। টোগো থেকে ব্রিডিং করে যে জাত উদ্ভাবিত হয়, তার নামকরণ করা হয় সেপালা সাইবেরিয়ান স্লেজডগ নামে।

টোগোর এই বীরত্বপূর্ণ কীর্তির উপর ডিজনি সিনেমা তৈরি করেছে ২০১৯ সালে, একই নামে। মজার ব্যাপার হলো সিনেমাটিতে টোগো চরিত্রে অভিনয় করেছে টোগোর ১৪ পুরুষ পরের কুকুর ডিজেল। সিনেমাটিতে ডিজেলের অভিনয় একদম নিঁখুত ছিল যা দেখে সহজেই আপনি টোগো কেমন ছিল তা কল্পনা করতে পারবেন।

শিলা

×