ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ৮ জুন ২০২৩

বায়ান্ন বাজার তপ্পিান্ন গলি

বৃহস্পতিবার ঢাকায় নামা সেই বৃষ্টির পানি সযতেœ ধারণ করে আছে কচুপাতা

অবশেষে বৃষ্টি নামল শহরে। খুব বেশি নয়। কয়েক ফোটা। তবুও তো বৃষ্টি। অসহনীয় গরমের পর বৃহস্পতিবার নেমে আসা বৃষ্টিতে শরীর ও মন জুড়িয়ে নিল রাজধানীবাসী। এদিন সকাল থেকেই ঢাকার আকাশ ছিল কালো। সূর্য এদিন তেমন পাত্তা পায়নি। বরং বৃষ্টি নামার প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল লম্বা সময় ধরে। ঘরে অবস্থান করা মানুষজন একটু পরপর বারান্দায় উঁকি দিয়ে বৃষ্টির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছিল। এরই এক পর্যায়ে সত্যি সত্যি নামে বৃষ্টি। তখন সে কী উচ্ছ্বাস! কেউ দৌড়ে ছাদে উঠে পড়েন ভিজতে। কেউবা হাত বাড়িয়ে দেন বারান্দা থেকেই। শীতল জল স্পর্শ করে নিজেকে শীতল করার চেষ্টা করেন ছেলে বুড়ো সকলেই।

ঢাকার রাস্তায়ও বৃষ্টি উদ্যাপনের নানা দৃশ্য চোখে পড়েছে। রিক্সায় বসে চালকদের ঘামে ভেজা পিঠ দেখার পরিবর্তে এদিন দেখা গেছে বৃষ্টিস্থান। অল্প বৃষ্টিতেই যতটা সম্ভব গা ভিজিয়ে নিয়েছেন রিক্সা চালকরা। যাত্রীরাও রিক্সার হুড খুব একটা তুলতে যাননি। পলিথিনে গা মুড়িয়ে নিতেও অনীহা ছিল। অনেকে মোবাইল ফোন মানিব্যাগ পকেটে পুরে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তরুণ-তরুণীদের হাত ধরাধরি করে ভিজতে দেখা গেছে। মানুষের মতো প্রকৃতিও যেন বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে ছিল।

রাস্তার ধারে ফুটপাতে কোনোরকমে টিকে থাকা গাছগাছালি বৃষ্টির জলে নতুন প্রাণ পেয়েছে। প্রতি পাতায় জমা হওয়া ধুলোবালিও মোটামুটি দূর হয়ে গেছে। একই সময় ভিজে নরম হয়েছে তপ্ত মাটি। অবশ্য প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃষ্টি না হওয়ায় হতাশও হয়েছেন অনেকে। কারও কারও মন্তব্য, ‘এটা কোনো বৃষ্টি হলো? এতদিনের রোদে সব তো পুড়ে গেছে। এখন দরকার টানা বৃষ্টি। ঝুম বৃষ্টি দরকার। তা না হলে এই গরম থেকে বাঁচা যাবে না।’ অবশ্য আবহাওয়া অফিস একেবারে নিরাশ করছে না। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় বৃষ্টি আরও হবে। হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর বৃষ্টি হলে কমে আসবে তাপমাত্রাও। আপাতত তাই সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। অবশ্য বর্ষারও বিশেষ বাকি নেই। আর কয়েক দিনের অপেক্ষা। এরপরই ১ আষাঢ়, অর্থাৎ, বর্ষার আনুষ্ঠানিক শুরু। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস নিশ্চয়ই গ্রীষ্মের চেয়ে ভালো কাটবে ঢাকাবাসীর। নতুন ঋতুর কাছে আমাদের তা-ই প্রত্যাশা। 
সত্যি হবে দুই লাখ গাছ ॥ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন ফুটপাত, সড়ক বিভাজক ও খালের পাড়ে দুই লাখ গাছ লাগানো হবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় মেয়র জানান, ক্লিনিং, গ্রিনিং এবং ফিডিং এ তিনটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গাছ লাগানো হচ্ছে। ফুটপাতে লাগানো হবে ছাতিম, বকুল ও কাঠবাদাম গাছ। বড় জায়গা পেলে কৃষ্ণচূড়া ও সোনালুগাছ লাগানো হতে পারে। এ ছাড়া সড়ক বিভাগকে কাঁটা মেহেদি, রঙ্গন, করবী, বাগানবিলাস, বামন জারুলের পাশাপাশি রসকাউ গাছের চারা রোপণ করা হবে।

আর খালের পাড়ে বিভিন্ন ধরনের ফলদ- আম, জাম, কাঁঠাল ও ঔষধি গাছ লাগানো হবে। নগর-পরিকল্পনাবিদ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শে এসব গাছ লাগানো হবে বলে জানান আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, নগরে আমরা কোনো পাখি দেখতে পাই না। তাই রসকাউ গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ গাছের ফল পাখিদের খুবই প্রিয়। গাছের পরিচর্যা করা কঠিন উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এ জন্য ঢাকা উত্তর সিটি ১০০ জন মালি নিয়োগ দিচ্ছে। প্রতি কিলোমিটার এলাকার দায়িত্বে থাকবেন একজন মালি। এর ভেতর যত গাছ থাকবে, তারা এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দেবেন। তবে পরের দিন বুধবার আনিসুল হক সড়কে লাগানো গাছ দেখতে গিয়ে কিছুটা হোঁচটই খেতে হয়েছে।

লক্ষ্য করে দেখা গেছে, সরু ফুটপাতের এক পাশে এসব গাছ লাগানো হয়েছে। এমনভাবে লাগানো হয়েছে যে, এখনই ফুটপাত ব্যবহার করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তাহলে গাছ এখানে কীভাবে টিকবে? তার চেয়ে বড় কথা, আবেগের বশবর্তী হয়ে যেখানে সেখানে গাছ লাগালে সংখ্যা বেশি হবে বটে, কাজের কাজ কিছু হবে না। আসলে কোনটি করতে চায় উত্তর সিটি? আগেভাগেই ঠিক করতে হবে। 
দেখে আসুন দ্বৈত রথ ॥ ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘দ্বৈত রথ’ শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। দুই শিল্পীর আঁকা প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে। শিল্পীদ্বয় হলেন শাহিনা ইসলাম ও মো. মাসুদুল হক। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে উপস্থিত থাকবেন দেশের বরেণ্য শিল্পী রফিকুননবী। তিনিই উদ্বোধন করবেন প্রদর্শনীর। সঙ্গে থাকবেন আরেক স্বনামধন্য শিল্পী ফরিদা জামান। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা প্রায় ৬০টি চিত্রকর্ম দেখার সুযোগ পাবেন শিল্পপ্রেমীরা। প্রদর্শনী চলবে ১৭ জুন পর্যন্ত। সময় করে ঘুরে আসুন। ভালো লাগবে।

×