চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উৎসব

দেশের চলচ্চিত্রশিল্পের বিকাশে একনিষ্ঠভাবে কাজ করা দুই সংগঠন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন ও  ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ। সময়ের স্রোতধারায়  বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন পদার্পণ করেছে প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরে। অন্যদিকে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ পদার্পণ করেছে প্রতিষ্ঠার ৫০  বছরে।  জাতীয়ভাবে এই আনন্দঘন সময়কে উদযাপনের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন ও ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের ৬০ ও ৫০ বছর পূর্তি উৎসব। ব্যান্ডদল  জলের গানের সংগীত পরিবেশনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং বিশিষ্টজনদের কথনে সজ্জিত ছিল  উদ্বোধনী আয়োজন। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী আয়োজন। 

মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে সূচনা হওয়া অনুষ্ঠানে দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির উৎকর্ষ অর্জনে বিশেষ অবদানের জন্য শতাধিক চলচ্চিত্র সংসদের মধ্য থেকে নির্বাচিত ১৫টি চলচ্চিত্র সংসদকে  ‘ছয় দশকের  সেরা চলচ্চিত্র সংসদ সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসবর উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক মোরশেদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব  করেন ফিল্ম সোসাইটিজের সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার  স্বেমি। 

প্রদীপ প্রজ্বালনের পর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে জলের গানের শিল্পীরা। এরপর ব্যান্ডদলটি একে একে গেয়ে শোনায় ‘চলো আঁকি একটা ছবি’’ ও ‘ভাঙা ঘরে থাকবো ভাড়া চল’  ও ‘আগুন লতা ফাগুন লতা’ শিরোনামের গান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রদর্শিত হয় চলচ্চিত্র সংসদকর্মী নুরুল আলম আতিক নির্মিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।

মোরশেদুল ইসলাম বলেন, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও মননশীলতার আন্দোলন। চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ রস আস্বাদন করতে গেলে এর চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। এই চিন্তা  থেকেই বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের সিংহভাগ সফল নির্মাতারাই এই আন্দোলন থেকে বেড়ে উঠেছেন। এসময় চলচ্চিত্র সংসদগুলোর জন্য অনুদান প্রত্যাশা করে তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর কাছে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে  হাছান মাহমুদ বলেন, সমস্ত শিল্পের সম্মেলন ঘটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের সৃষ্টি। জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  দেশ গঠনেও চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা রেখেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের শতাধিক চলচ্চিত্র সংসদ থেকে নির্বাচিত ১৫টি সংসদকে সেরা চলচ্চিত্র সংসদ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। এর মাঝে ১টি তথা  ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ’কে হীরক সম্মাননা প্রদান করা হয়। বাকি  চোদ্দটি সংসদকে প্রদান করা হয় সুবর্ণ সম্মাননা।

আয়োজকরা জানান, বছরব্যাপী এ আয়োজনে গত ছয় দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্র থেকে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ জুন  থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত।  এ  উৎসব অনুষ্ঠিত হবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয়  চিত্রশালা মিলনায়তনে। এছাড়া  দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের নীতি ও পরিকল্পনার সংশোধন, সংযোজন ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপনের জন্য দুটি নীতিনির্ধারণী  সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।  সেমিনার দুটি চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের উৎসব চলাকালে অর্থাৎ ৮  থেকে ১৭ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রংপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও রাঙ্গামাটি জেলায় চলচ্চিত্র সংসদ ও চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মশালার  আয়োজন করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্মিত কাহিনীচলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচলচ্চিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রÑ এই তিন ক্যাটাগরিতে  শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বাছাই ও নির্বাচন করা হবে। প্রতিটি বিভাগে সর্বোচ্চ ১০টি করে চলচ্চিত্রকে বাছাই ও নির্বাচিত করে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র  সম্মাননা প্রদান করা হবে। ৩টি বিভাগে নির্বাচিত সর্বোচ্চ ৩০টি চলচ্চিত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত চলচ্চিত্র উৎসব । এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮  থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত।