ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিজয় উৎসব শুরু

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিজয় উৎসব শুরু

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত বিজয় উৎসবে মঞ্চস্থ নিমজ্জন নাটকের দৃশ্য

আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে অভিশাপ দিচ্ছি/আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিল সেঁটে/মগজের কোষে কোষে যারা পুঁতেছিল/আমাদেরই আপন জনেরই লাশ দগ্ধ, রক্তাপ্লুুত/যারা গণহত্যা করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে খেত ও খামারে/আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু সেই সব পশুদের ...। শামসুর রাহমানের কবিতার এই পঙ্ক্তিমালাকে সঙ্গী করে ধিক্কার জানানো হলো একাত্তরের পাকবাহিনীর গণহত্যাকারীদের। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত বিজয় উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অভিশাপ দিচ্ছি শিরোনামের কবিতাটি আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম। শুক্রবার বিকেলে জাদুঘর মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস পালনের মাধ্যমে আট দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয়। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে বিশিষ্টজনদের কথনের সঙ্গে নাচ-গান ও আবৃত্তি পরিবেশনা, বিতর্ক, বাউল গান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও নাট্য মঞ্চায়নে সজ্জিত এ আয়োজন।

উৎসবের প্রথমদিন বিশ্বের সকল গণহত্যার শিকার ও নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং গণহত্যা নিরোধে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ দিবসে আলোচনা ও নাট্য-প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় একাত্তরে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের আহ্বান জানান বক্তারা। অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর মেমোরিয়াল মিউজিয়ামস ইন রিমেম্বারেন্স অব দ্য ভিকটিম অব পাবলিক ক্রাইমসের (আইসিএমইএমও) সাবেক চেয়ারপার্সন ওফেলিয়া লিয়ঁ। স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আরেকটি ট্রাস্টি গবেষক ও লেখক মফিদুল হক।
আলোচনায় ওফেলিয়া লিয়ঁ বলেন, বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অসংখ্য দেশেই গণহত্যা ঘটেছে। যেসব দেশে এই গণহত্যা ঘটেছে সেসব দেশের গণহত্যার স্মৃতি বা সাক্ষ্য সংরক্ষণ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশকেও গণহত্যা স্মৃতিসমূহ সংরক্ষণ করে সেগুলোকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিম-লে উপস্থাপন করে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। কারণ, এই স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়াটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে দীর্ঘ হয়। আর্মেনিয়ায় সংঘঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে শত বছরের বেশি সময় লেগেছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে একাত্তরের ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া প্রসঙ্গে ওফেলিয়া লিয়ঁ বলেন, এ ব্যাপারে পাকিস্তানের ইগো বা অহংকার পরিহার করে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এটা পাকিস্তানকেই উপলব্ধি করতে হবে। কারণ, জোর করে কাউকে ক্ষমা চাওয়ানো যায় না। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, একাত্তরে আমরা গণহত্যা প্রত্যক্ষ করেছি। তরুণরা সে অভিজ্ঞতার কথা শুনেছেন। আমরা এসব ঘটনার সাক্ষী। আমি যে শহরে বেড়ে ওঠেছি সেই শহরের পাশেই সৈয়দপুর বলে একটি শহর আছে। এই শহরটিতে বাঙালিদের পাশাপাশি অবাঙালিদের বাস ছিল। সেখানে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল সেটি ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব হবে না। সেখানে নারী-শিশুসহ সাড়ে তিন শ’ বাঙালিকে একটি ট্রেনে তুলে বলা হয়েছিল, তোমাদের নিরাপদে ভারত পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর ট্রেন থেকে একটি জায়গায় সবাইকে নামিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়।
আলোচনা শেষে মঞ্চস্থ বিশ্বব্যাপী সংঘটিত গণহত্যা ধারাভাষ্যময় নাটক নিমজ্জন। সেলিম আল দীনের রচনায় ঢাকা থিয়েটার প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। শিমুল ইউসুফের সুর ও সংগীতে বিচ্ছিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিলু চৌধুরী, আসাদুজ্জামান আমান, সিমরাজুল ইসলাম, মোস্তফা রতন, তরিকুল ইসলাম লিটনস, রনি হোসাইন, সাজ্জাদ রহমান, জয়শ্রী মজুমদার লতহা, পাহমিদা কামাল রিপা, হাবিবা আজিজ ও স্বৈরিন্দ্রী রেজা অগ্নি। আজ শনিবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল চারটায়। অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসের সভাপতিত্বে ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ধারণা একটি মিথ’ শীর্ষক প্রীতি বিতর্কে অংশগ্রহণ করবে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (আইইউবি) বনাম ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। বিতর্কের পর নৃত্য পরিবেশন করবে নৃত্যদল স্পন্দন এবং সাংস্কৃৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করবে অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ।
১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সকাল দশটায় পরিবেশিত হবে শিশু-কিশোর আনন্দ অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় থাকবে বাউল গান। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনের পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলে জলাদ্দখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে থাকবে পৃথক অনুষ্ঠানমালা।

 

 

 

 

×