ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অল্প বয়সীরাই বেশি হেনস্তার শিকার

প্রকাশিত: ০১:০৯, ২৫ নভেম্বর ২০২২

অল্প বয়সীরাই বেশি হেনস্তার শিকার

.

নারী নিপীড়ন শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে তার প্রচন্ড ক্ষতদাহ এক অসহনীয় যন্ত্রণা। আর উন্নয়নশীল দেশের এগিয়ে যাওয়া হরেক রকম কর্ম প্রকল্পে তা যেন আরও গভীরভাবে প্রোথিত। যে কোনো সমাজ কাঠামোর সার্বিক অবয়ব নির্ণীত হয় সেই সমাজের আলোকে। সেখানে প্রচলিত সংস্কার, বিধিবদ্ধ রীতিনীতি, আচারনিষ্ঠতা, জীবনাচরণ সব মিলিয়ে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবন চালিত হওয়া সেও যেন এক ঐতিহাসিক নিয়ম। আর শ্রেণি বিভক্ত সমাজে শুধু বিত্ত কিংবা মর্যাদার ফারাক নয় তার চেয়েও বেশি দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান হয় নারী পুরুষের অভেদ্য প্রভেদ।

অপেক্ষাকৃত দুর্বল এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের দুর্ভোগের ইতিবৃত্ত সমাজ সংস্কারেই অলিখিত বিধি। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় শুধু শারীরিক নিপীড়নের নয় তার চেয়ে জঘন্যভাবে দৃশ্যমান হয়। মহামূল্যবান সম্ভ্রম হারানোর অভিশাপও। প্রত্যেক বালিকা তার জীবনের স্পর্শকাতর সময় পার করতে যে মাত্রায় শরীর ও মনের নতুন অনুভূতিতে সম্মোহিত হওয়ার ব্যাপারে বিভোর হতেও ভাবতে হয় না। বয়োসন্ধিকালের এই দোলাচলের অসময়ে পাপ পুণ্যের ধারণাও বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ভালো-মন্দের বোধও ক্রমশ হারিয়ে যায়। ফলে বীভৎস কিছু নিপীড়নের শিকার হওয়াও এক অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক তথ্য উপাত্তে উঠে আসে মূলত ১৪ থেকে ১৮ বয়সের তরুণীরা সম্ভ্রমহানিতার সমস্যায় ক্ষতবিক্ষত হয়। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত ২০২১ সালের নিপীড়ন ঘটনা পরম্পরা থেকে উঠে আসা এমন তথ্যে নারী ও শিশুর ৫ ধারার নির্যাতনকে তুলে আনে। আমরা জানি আজ কোথাও নারী নিরাপদ নয়। নির্জন, নিরিবিলি স্থান থেকেও শুরু করে গণপরিবহন এমনকি কোথাও বেড়াতে গেলে সর্বসমক্ষে তাকে হেনস্থা করতে পাষ- পেশিশক্তি মোটেও ভাবে না। আর নিজ পরিবারে নারী ও শিশু নির্যাতন নাকি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তির দিকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর কর্মস্থল? অপেক্ষাকৃত রুচিসম্মত এবং সহনীয় পরিবেশে নারীরা যে মাত্রায় উত্ত্যক্তের শিকার তেমন বর্ণনাও লোমহর্ষক। যারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন সিংহভাগই বয়োসন্ধিকালের স্পর্শকাতর সময়ের নির্মম শিকার। আর দুর্ধর্ষতার ন্যক্কারজনক খলনায়করা উঠতি বয়সের উদীয়মান তরুণ। তবে সবাই সমান নয়। কেউ কেউ যুবক, প্রৌঢ়ত্বের পর্যায়েও নারীকে বিভিন্নভাবে অত্যাচার করতে মুখিয়ে থাকে। শুধু শ্লীলতাহানি নয়, কয়েকজন মিলে নারী হেনস্থাকারীর পরিসংখ্যানও আশাব্যঞ্জক নয়।

এছাড়া আছে যৌন হয়রানির মতো বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর দুর্ঘটনা। আর যৌতুকের দাবিতে নৃশংস পাশবিকতা তো পত্রিকার নিত্য দুঃসংবাদ। এই সামাজিক জরিপে আরও উঠে আসে এমন নৃশংস নির্যাতন থেকে দুই বছরের কন্যা শিশুও রক্ষা পায়নি। শুধু কি তাই? ৭৫ বছরের বৃদ্ধাও এমন অসহনীয় কোপানল থেকে বের হয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। উন্নয়ন প্রকল্পে হরেক রকম পেশিশক্তির অদম্য মাথাচাড়া দেওয়া পরিস্থিতির অনিবার্য পালাক্রম। সেখানে কিশোর অপরাধীদের মাত্রাতিরিক্ত দাপট যেন সময়ের এক বিশেষ মরণ কামড়। এসব নির্যাতনের মধ্যে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশিই বলে প্রতিবেদনে স্পষ্ট। গৃহবধূরাও এখান থেকে মুক্ত নয়। আর কর্মজীবী নারীদের বেলায় পুরুষ সহকর্মীর অশুভ আচরণ আর উত্ত্যক্তের সীমা-পরিসীমা যেন টানাও যায় না। বর্তমানে দেশে ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং যে মাত্রায় দাপটে, তা-বে মাতিয়ে বেড়াচ্ছে তারও তো কোনো কূল কিনারা হচ্ছে না।

 

×