ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

সাঁওতাল বিদ্রোহ

টুটুল মাহফুজ

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

সাঁওতাল বিদ্রোহ

,

সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুলের সূচনা হয় ১৮৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুর জেলায়ইংরেজ আমলে স্থানীয় জমিদার, মহাজন ও ইংরেজ কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচারের শিকার হয়ে সাঁওতালরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেএটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রামতাদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় সিধু, কানু, চাঁদ, দৈব প্রমুখ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে তাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিলতাই সিপাহী বিদ্রোহের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরাই প্রথম সোচ্চার হয়েছিল১৮৫৫ সালে সাঁওতালরা সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল তাদের অধিকার আদায়ের জন্যতারা এ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল ইংরেজদের শাসন-শোষণ, সুদখোর, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে

এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ সৈন্য ও তাদের দোসর অস ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর ও মহাজনদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করাসান্তাল হুলের ইতিহাস হতে জানা যায় দামিন-ই কোহ ছিল সাঁওতালদের নিজস্ব গ্রাম, নিজস্ব দেশ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন যুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৮৫৬ সালের নবেম্বর মাসে তা শেষ হয়সাঁওতালরা তীর-ধনুক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেও ইংরেজ বাহিনীর হাতে ছিল বন্দুক ও কামানতারা ঘোড়া ও হাতি যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলএ যুদ্ধে ইংরেজ সৈন্যসহ প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল যোদ্ধা বীরগতি প্রাপ্ত হনসাঁওতাল বিদ্রোহের লেলিহান শিখা ব্রিটিশ সরকারের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলযুদ্ধে সিধু-কানু-চান্দ ও ভাইরব পর্যায়ক্রমে নিহত হলে ১৮৫৬ সালের নবেম্বর মাসে যুদ্ধ শেষ হয় ও বিদ্রোহের পরিসমাপ্তি ঘটে

সাঁওতাল জাতির ইতিহাসে সিধু-কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল যুদ্ধই ছিল সর্বাধিক বৃহত্তম এবং গৌরবের বিষয়তাদের এই বিদ্রোহই ভারতবর্ষে স্বাধীনতার বীজ বপন করে গিয়েছিলএই যুদ্ধের ফলাফল হলো এই যে, ইংরেজ সরকার সাঁওতালদের অভিযোগ সম্পর্কে তদন্তের ব্যবস্থা করলেনম্যাজিট্রেট এডন সাহেব সাঁওতালদের আবেদন শুনলেনযুদ্ধের পরে সাঁওতালদের সমস্যা বিবেচনা করে আদিবাসী সাঁওতালদের জন্য একটি জেলা বরাদ্দ করা হলো

এই জেলার নাম হলো ডুমকাএটাই সাঁওতাল পরগনা নামে পরিচিতএখানে সাঁওতাল মানঝি, পরানিক, পরগনা জেলার শাসন পরিচালনার জন্য দারোগা, পুলিশ ও বিভিন্ন সরকারী কমকর্তা-কর্মচারী ক্ষমতা প্রাপ্ত হলোসাঁওতালদের বিচার সালিশ তাদের আইনে করার জন্য সরকার ক্ষমতা প্রদান করলেনখাজনা, কর প্রভৃতি তাদের হাতে অর্পণ করা হলোতারা জেলা প্রশাসক বা ডিসির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতে থাক

×