রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভারি নির্মাণসামগ্রী
মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনা দেখল রাজধানীবাসী। ব্যস্ত সড়কে চলন্ত গাড়ির ওপর আছড়ে পড়ল গার্ডার। ঘটনাস্থলেই পাঁচজনের করুণ মৃত্যু হলো। আহত হলেন দুজন। গত সোমবারের ঘটনা। বিকেলে উত্তরার জসীমউদ্দীন রোডে বিআরটি প্রকল্পের একটি ক্রেন কংক্রিটের বিশাল এবং ভারি গার্ডার বহন করছিল। নিচে উন্মুক্ত রাস্তা। সব ধরনের যান চলাচল করছে। এ অবস্থায় ওপর দিয়ে বহন করা হচ্ছিল গার্ডারটি। হঠাৎ ক্রেন ভারসাম্য হারালে ভয়ঙ্কর এ দুর্ঘটনা ঘটে। গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে প্রাইভেটকারের সামনের অংশ থেঁতলে যায়। একইভাবে গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় থেঁতলে যায় পাঁচ-পাঁচজন মানুষের দেহ। প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় ঘটে এই ঘটনা। খবরটি জেনে স্তম্ভিত হয়ে যায় সাধারণ মানুষ। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে নিজের চোখকে অনেকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু সত্যি সত্যি এ ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য ‘ঘটেছে’ না বলে ‘ঘটানো হয়েছে’ বলাই উচিত হবে এক্ষেত্রে। কারণ যারা এই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের গাফিলতি এরই মাঝে স্পষ্ট হয়েছে। বৃহস্পতিবার র্যাবের পক্ষ থেকে আরও কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। তথ্যগুলো নাগরিক উদ্বেগের নতুন কারণ হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী, মানে, হেল্পার। তার নাম রাকিব হোসেন। ক্রেন চালানোর কোন ধরনের প্রশিক্ষণ তার ছিল না। মাত্র তিন মাস আগে ক্রেনের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
ক্রেনের মূল চালক আল আমিনও ঘাটতি নিয়েই ক্রেন চালাতেন। হাল্কা গাড়ি চালানোর অনুমোদন ছিল তার। ভারি যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। ২০১৬ সালে ক্রেন চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে দু-তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। চলতি বছরের মে মাসে বিআরটি প্রকল্পে ক্রেন অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে যান তিনি। আরও জানা যাচ্ছে, ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন দিয়ে
সরানো হচ্ছিল ৭০ টনের গার্ডার! সব মিলিয়ে পিলে চমকে যাওয়ার মতো তথ্য। ঢাকার গণপরিবহনের বেলায় লাইসেন্সবিহীন চালক আমরা অনেক দেখেছি। আবার চালকের আসনে হেল্পারকেও বসতে দেখছি নিয়মিত। তাই বলে ক্রেন চালানোর বেলায়ও এমনটি ঘটবে! সাধারণ মানুষ এ মৃত্যুকে তাই হত্যাকান্ড হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন। ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা। বলছেন, ঢাকা শহরের প্রায় প্রতি প্রান্তেই উন্নয়মূলক কাজ হচ্ছে। এসব কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশাল বিশাল ক্রেন। এ অবস্থায় আরও যে দুর্ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কী? সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নিশ্চয়তা দাবি করছেন রাজধানীবাসী। অবশ্য আরেকটি অংশ সুযোগসন্ধানী। এ ঘটনাটিকেও রাজনীতির চোখে দেখছেন তারা। দুর্ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরোধিতা করছেন। এ অংশটি সম্পর্কেও সচেতন থাকা জরুরী বৈকি।
ভাদ্রের শুরুতেই অসহনীয় গরম ॥ রাজধানীতে গরমাগরম অবস্থা চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে ভাদ্রের শুরুতে সে গরম আরও যেন বেড়ে গেছে। বাংলা এ মাসের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গরম বাড়ারই কথা। তাই বলে মাসের একেবারে শুরুতেই এমন কড়া রোদ! বাসা থেকে বের হওয়া মাত্রই ঘামে গা ভিজে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবারের কথাই যদি বলি, রাস্তা দিয়ে হাঁটা যাচ্ছিল না। একটু ছায়া পেলে মানুষজন সেখানে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট তো দূর হওয়ার নয়। দুপুরের দিকে এক রিক্সায় চড়ে বিব্রতকর অবস্থায়ই পড়তে হলো। চালক কিছুক্ষণ পর পরই বলছিলেন, ‘গরমডা কী পড়ছে দেখছেন? টিকা যায় না। শইলে তো মনে অয় আগুন লাইগা গেছে।’ এ অবস্থায় তার রিক্সায় বসে থাকতে খারাপই লাগছিল। কিন্তু নেমে যাওয়াও তো সমাধান নয়। অগত্যা গন্তব্য পর্যন্ত আসতে হলো। হ্যাঁ, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তাকে কিছু টাকা বাড়তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বলা সম্ভব হয়নি, ছায়ায় বসে কিছু সময় জিরিয়ে নিন। কারণ জিরিয়ে নেয়ার মতো বিলাসিতা তার জন্য নয়!
গরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠও ॥ রাজনীতির মাঠও এখন বেশ গরম। বিএনপির ‘ঈদের পর আন্দোলন’ নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয়েছে। কিন্তু এ পর্যায়ে মনে হচ্ছে, মাঠে নামতেও পারে তারা। এমনিতে প্রতিদিনই কোন না কোন সভা সমাবেশ করছে দলটি। সামনে বড় কিছু ঘটবে এমন হুমকি ধামকিও দেয়া হচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে। সমমনারাও নানা নামে পরিচয়ে টেলিভিশনের সামনে দাঁড়াচ্ছেন। এভাবেই চলছিল। কিন্তু বুধবার অনেকটা হঠাৎ করেই মাঠে নেমে যায় আওয়ামী লীগ। সরকারী দল এদিন রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করে। কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে মাঠে থাকার ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। তার মানে, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতি জমে উঠতে বিশেষ বাকি নেই। রাজনীতি জমুক। কিন্তু সভা সমাবেশের নামে যেন জনদুর্ভোগ বাড়ানো না হয়, যেন ভাংচুর অগ্নিসংযোগের পুরনো সংস্কৃতি ফিরে না আসে- রাজধানীবাসী এমনটিই আশা করছেন।