ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণের সর্বজনীন রূপ

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ৭ মার্চ ২০২২

৭ মার্চের ভাষণের সর্বজনীন রূপ

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে আলোচনার প্রারম্ভে কিছু কথা বলে নেয়া আবশ্যক। আজ এ কথা সর্বজনবিদিত যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বশক্তির উৎসমূলে রয়েছে তাঁর আশৈশব মানবপ্রেম, অসম সাহস, সর্বোচ্চ সততা ও অন্তহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা। স্কুল জীবনে মুষ্টিচাল উঠিয়ে দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের শিক্ষায় সহায়তাদান, তৎকালীন মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জে গেলে ছাত্রাবাস মেরামতের জন্য তাঁর কাছ থেকে সরকারী অনুদান আদায়, ১৯৪৩-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় ‘লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবায় ঝাঁপিয়ে’ পড়া, ১৯৪৬ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে উভয় সম্প্রদায়ের সহায়হীন মানুষের প্রাণ রক্ষায় আত্মনিয়োগ করা, সর্বোপরি ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদান থেকে আরম্ভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন- সবই বঙ্গবন্ধুর মানবপ্রেম, সাহস, সততা ও অন্তহীন ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। একই নেতৃত্বগুণে বলীয়ান হয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন। পাশাপাশি তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর মূল্যবান সব তথ্যবহুল গ্রন্থ, ইতিহাস ও দলিলপত্র সম্পাদনা ও প্রকাশনার গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ফলে বাঙালীর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস ও অমূল্য দলিল বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন, পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman এবং শেখ হাসিনার রচনাসমগ্র ১ ও ২ আর বিভিন্ন সময়ের ভাষণ-বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশের ইতিহাস পাঠে ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত সূচিত হয়েছে। রাষ্ট্রনায়ক-লেখক-সম্পাদক শেখ হাসিনা এসব গ্রন্থ বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এবং বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মূল চেতনাকে চিরজাগরূক করে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই কালজয়ী ভাষণের সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের বিষয়ে আলোকপাত করাই এই লেখার উদ্দেশ্য। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফার পক্ষে পূূূূর্ব বাংলার মানুষ বিশাল রায় দেয়, আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং বঙ্গবন্ধু বাংলার অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে অভিষিক্ত হন। এই বিপুল নির্বাচনী বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের অধিকারকে বানচাল করার লক্ষ্যে পাকিস্তানের সামরিকচক্র ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। ১৯৭১-এর ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পূর্ব পরিকল্পনামাফিক তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে ডাক দেন স্বাধীনতার। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের জীবন ও ২ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে নতুন দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তানের অন্ধকার কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাঙালী জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। তার পরের ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডের পর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটির প্রকাশ ও প্রচার অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সামরিক ছত্রছায়ায় স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির মাইক কেড়ে নেয়া, মারধর, গ্রেফতারসহ নানা নির্যাতন, বাধা-বিপত্তির মুখেও ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি সারাদেশে বাজিয়েছেন। প্রিয় নেতার ভাষণ শুনতে মানুষের সে কি আগ্রহ! তারা রাস্তায় থমকে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের ভাষণ শুনেছেন। অনেকে নীরবে চোখের জল ফেলেছেন। এ যেন মাইকেল মধুসূধন দত্তের কবিতার মতোন- ‘দাঁড়াও পথিকবর জন্ম যদি তব বঙ্গে’। বাংলাদেশের নতুন ও অনাগত প্রজন্মের জন্য একদিকে যেমন ১৯৭১-এর উত্তাল-অগ্নিঝরা মার্চ মাসের রাজনৈতিক ঘটনাবলী, বিশেষ করে পরাধীন, শোষিত ও নিষ্পেষিত বাঙালী জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পটভূমি, গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রয়োজন, তেমনি কিভাবে এই ভাষণ আজ সর্বজনীন ও বিশ^জনীন রূপ লাভ করেছে সেই ইতিহাস লিখে রাখাও একান্ত অপরিহার্য। তাই এই লেখায় ৭ মার্চের ভাষণের সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে শেখ হাসিনার অবদান উল্লেখ করা হলো। (১) ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রাস্ট’-এর সেমিনার : আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বজনের রক্তেভেজা দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের সংগঠিত করা, দল গোছানো, সামরিক শাসন-ত্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় পার করতে হয়। অতঃপর তাঁর অপার আগ্রহ ও উদ্যোগে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা। ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০০৪ সাল থেকে ৭ মার্চের ভাষণের ওপর প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথমার্ধে একটি করে সেমিনার আয়োজন করা হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেমিনারে একজন করে বিশিষ্ট লেখক-চিন্তাবিদ লিখিতভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং দু/তিনজন আলোচক লিখিত বা মৌাখিকভাবে আলোচনা করেন। অদ্যাবধি পঠিত ১৪টি মূল প্রবন্ধ, সভাপতির ভাষণ, স্বাগত বক্তব্য ও আলোচকদের আলোচনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ (২০২০) শীর্ষক একটি মূল্যবান গ্রন্থ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধ, বক্তব্য ও আলোচনা থেকে উৎসাহিত হয়ে দেশের অনেক লেখক-সাংবাদিক, ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রচিন্তক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি আরম্ভ করেন। ফলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এই ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা প্রসারিত হতে থাকে। (২) বাংলাদেশের সংবিধানে সংযোজন : জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাঙালীর রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ (২০১১ সালের ১৪ নং আইন)-এর ৫৫ ধারাবলে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পঞ্চম তফসিল দ্বারা ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপরন্তু সংবিধানের ৭ (খ) ধারা অনুযায়ী সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদকে একটি অপরিবর্তনযোগ্য বিধান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে পঞ্চম তফসিলে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি আমাদের সংবিধানের একটি অপরিহার্য ও অপরিবর্তনীয় অংশে পরিণত হয়েছে (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, এপ্রিল, ঢাকা ২০১৬, পৃ. ৭৪-৭৬)। (৩) স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি : বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সাল থেকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ’ কর্তৃক প্রথম শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনীসহ শিশুদের পাঠোপযোগী করে পাঠ্যসূচীতে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি অন্তর্ভুক্ত করেছে। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যপুস্তক সাহিত্যকণিকা এবং একাদশ, দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ইংরেজী পাঠ্যপুস্তক English for Today-তে সম্পূর্ণ ভাষণটির অনুবাদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয়, প্রায় দুই দশকের অধিককাল ধরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ৭ মার্চের যে ভাষণকে বাংলার মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দেয়ার চক্রান্ত ও অপচেষ্টা হয়েছে সেই ছন্দোবদ্ধ ভাষণটি আজ সকল শিশুর অন্তরে এতই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, ছোট্ট শিশুরাও বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে, টিভিতে-ইউটিউবে বঙ্গবন্ধু মুজিবের বেশে ও ভঙ্গিতে ৭ মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণ মুখস্থ পরিবেশন করে বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে উদ্দীপিত করে চলেছে। (৪) We Shall Fight On The Beaches : The Speeches That Inspired History গ্রন্থে সঙ্কলিত হওয়া : ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডন যান তখন তিনি মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামী নেতা হিসেবে সারা পৃথিবীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্থ হিথ বঙ্গবন্ধুকে বিরল সম্মান প্রদর্শন করেন। ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের কাছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের কালোত্তীর্ণ ভাষণের কথাও নিশ্চয়ই জানা ছিল। তদুপরি শেখ হাসিনার প্রবল আগ্রহে বাঙালী জাতির অমূল্য সম্পদ এই ভাষণটি একাধিক নবীন-প্রবীণ অনুবাদকের হাতে ইংরেজীতে অনূদিত হয়ে দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়। অনুমান করি, এসব সূত্রে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ড. জ্যাকব এফ. ফিল্ড কর্তৃক সম্পাদিত ও ২০১৩ সালে প্রকাশিত We Shall Fight On The Beaches : The Speeches That Inspired History গ্রন্থে সঙ্কলিত আড়াই হাজার বছরের ৪১টি ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ড. জ্যাকব ‘The Struggle this Time is the Struggle for Independence’ শিরোনামে ভাষণের মূল বক্তব্য ও মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত দিকনির্দেশনাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর আপোসহীন ভূমিকা তুলে ধরেন (Jacob F. Field (ed.), We Shall Fight On The Beaches : The Speeches That Inspired History, Michael Mara Books Limited, London, 2013, pp. 201-206)। উল্লেখ্য, এই গ্রন্থে খ্রিস্টপূর্বকালের দিগি¦জয়ী সমরনায়ক আলেকজান্ডার দি গ্রেট থেকে শুরু করে আধুনিককালের বিশ^বরেণ্য রাজনীতিক আব্রাহাম লিঙ্কন, ভøাদিমির লেনিন, উইস্টন চার্চিল, শার্ল দ্য গল, মাও সেতুং, হো চি মিন, সালভাদর আলেন্দে প্রমুখের কালজয়ী ভাষণের সঙ্গে বাঙালীর মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একদিকে বঙ্গবন্ধু মুজিব মহিমান্বিত হয়েছেন, অন্যদিকে জাতি হিসেবে আমরা গৌরবান্বিত হয়েছি। (৫) ইউনেস্কোর স্বীকৃতি : ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো তার ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এর হেরিটেজ ডকুমেন্ট অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপন করে। পরের বছর ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে ইউনেস্কো কর্তৃক ভাষণটিকে হেরিটেজ ডকুমেন্ট হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এর অন্তর্ভুক্ত করে বলা হয়- ‘The speech effectively declared the independence of Bangladesh. The speech constitutes faithful documentation of hwo the failure of post-colonial nation-states to develop inclusive, democratic society alienates their population belonging to different ethnic, cultural, linguistic or religious groups (UNESCO, Center on Research and Information. Retrieved March 18, 2018 from (https://bdun.org/2018/03/18/unesco-recognised-the-historic-7th-march-speech-of-bangabandhu-sheikh-mujibur-rahman.)’ আজ সারাবিশ্বে স্বাধীনতা অর্জনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রামাণিক দলিল হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক একমাত্র অলিখিতভাবে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণের ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ হেরিটেজ ডকুমেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান আমাদের জন্য পরম সম্মান ও গৌরবের। আরও আনন্দের খবর এই যে, প্যারিসস্থ ইউনেস্কো হেডকোয়র্টার্সে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন কর্তৃক জাতিসংঘের ছয়টি দাফতরিক ভাষায় (আরবি, চীনা, ইংরেজী, ফরাসী, রুশ ও স্প্যানিশ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে The Historic 7th March Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman: A World Documentary Heritage শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ইউনেস্কো তার ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ ৪২৯টি বিষয় বা হেরিটেজ ডকুমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করেছে, যার দুটি হচ্ছে কালজয়ী রাজনৈতিক ভাষণ। একটি বিষয় অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতেই হয় যে, এই তালিকায় সারা পৃথিবীর একটি মাত্র অলিখিত রাজনৈতিক ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, আর সেটি হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, যা হাজার বছরের পরাধীন বাঙালী জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আর অন্যটি হলো ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লন্ডনে প্রদত্ত ফরাসী জেনারেল শার্ল দ্য গল-এর ভাষণ: ‘অঢ়ঢ়বধষ ড়ভ ১৮ ঔঁহব ১৯৪০’- যে ভাষণে উদ্দীপিত হয়ে ফরাসী জাতি নাৎসি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও রাজনৈতিক নেতাদের একক ঘটনা হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ‘Criminal Case No. 253/1963 [State Versus N. Mandela and Others]’ মামলাটিও হেরিটেজ ডকুমেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কাজেই জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ ৭ মার্চের ভাষণের অন্তর্ভুক্তি বাঙালী জাতির জন্য এক অমলিন অহঙ্কার (Wikipedia Contributors [nd.] Memory of the World Programme. Retrieved February 15, 2022, from ). আমরা এ কথা কৃতজ্ঞচিত্তে উপলব্ধি করি যে, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনন্য অবদান বাঙালীর ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। লেখক : শিক্ষাবিদ-কবি; প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়
×