ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সখ্য গড়ে আপত্তিকর ছবি তুলে প্রতারণা করত ওরা

প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৪ জানুয়ারি ২০২২

সখ্য গড়ে আপত্তিকর ছবি তুলে প্রতারণা করত ওরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথমে বিভিন্ন জনের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলত। এর পর তাদের ডেকে এনে কৌশলে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিত তারা। ওরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের ভয়-ভীতিও দেখাত। এ রকমই একটি চক্রের হোতা ফুয়াদ আমিন ইশতিয়াক ওরফে সানি (২১) ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত অপর দুজন হচ্ছে- সাইমা শিকদার নিরা ওরফে আরজে নিরা (২৩) ও আব্দুল্লাহ আফিফ সাদমান ওরফে রিশু (১৯)। সম্প্রতি এরা রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে ট্রান্সজেন্ডার নারী ‘বিউটি ব্লগার’ সাদ মুআকে যৌন নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটায়। পরে র‌্যাব তদন্ত করে চক্রটিকে গ্রেফতার করে। রবিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ সব তথ্য জানান। তিনি জানান, রবিবার রাজধানীর ফার্মগেট ও মহাখালী এলাকায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-২ এর যৌথ অভিযানে এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ভিকটিমের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইল ফোনসহ অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, খেলনা পিস্তল, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আল মঈন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাদমান আফিফ ওরফে রিশুর সঙ্গে পরিচয় হয় ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগার সাদ মুআর। পরিচয় সূত্রে গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারায় একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। এর পর সারপ্রাইজ দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইশতিয়াকের ভাড়া বাসায় নিয়ে যান রিশু। সেখানে ইশতিয়াক, নিরা ও রিশু জোরপূর্বক ভিকটিমকে মারধর, শ্লীলতাহানি ও যৌন নিপীড়ন করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তারা ভিকটিমরে সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং এক লাখ টাকা দাবি করেন। এ ছাড়া তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দেন। ভিকটিমকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে রামপুরায় নামিয়ে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করা হয়, যার নম্বর ৩৫। ছায়াতদন্তের ধারাবাহিকতায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, সংঘবদ্ধ এ চক্রের মূলহোতা ইশতিয়াক। তারা প্রায় দুই বছর ধরে কৌশলে জিম্মি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। তারা সাধারণত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এর পর কৌশলে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের হেনস্তা ও প্রতারণা করতেন। এ ছাড়া তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ও দিতেন। গ্রেফতারকৃত ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে আগের দুটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় তিনি কারাভোগও করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আল মঈন। মামলায় যা বলা হয়েছে ॥ শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানায় ট্রান্সজেন্ডার নারী বিউটি ব্লগার সাদ মুআর করা মামলায় বলা হয়, তিনি একজন মেকআপ আর্টিস্ট। সে সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রাম এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ১০ জানুয়ারি বিকেলে ওই যুবকের সঙ্গে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন একটি রেস্টুরেন্টের সামনে তার দেখা হয়। ওই যুবক কথার একপর্যায়ে জানান, তার স্ত্রী ওই ট্রান্সজেন্ডার নারীর ভক্ত। স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য তাকে তার বাসায় যাওয়ার অনুরোধ করেন। এজাহারে ভুক্তভোগী জানান, তিনি ওই যুবকের কথা বিশ্বাস করে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৫ নম্বর সড়কের এক বাসার দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে যান। সেখানে যাওয়ার পর তিনি এক নারী ও আরেকজন পুরুষকে দেখতে পান। ওই তিনজন ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। এতে বাধা দিলে তিনজন তাকে মারধর শুরু করেন এবং বলতে থাকেন, এই ভিডিও তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। এ সময় তিনজন নিজেদের আইনের লোক পরিচয় দেন। তাদের কাছে অস্ত্র ও ওয়াকিটকি ছিল বলে জানান তিনি। মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, ভুক্তভোগীর কাছে থাকা মোবাইল ফোন, সোনার চেইন, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এর পর তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে বলা হয়, না দিলে মেরে পূর্বাচলে ফেলে দেয়া হবে। পরে প্রাণভিক্ষা চাইলে তাকে থানায় নিয়ে যাবে বলে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরিয়ে রাত ৮টার দিকে রামপুরা এলাকায় একটি হাসপাতালের সামনে ফেলে যায়।
×