ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীলফামারীতে সরিষার লাভেই উঠে আসছে বোরো চাষের খরচ

প্রকাশিত: ১৪:৪৬, ২১ জানুয়ারি ২০২২

নীলফামারীতে সরিষার লাভেই উঠে আসছে বোরো চাষের খরচ

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে সরিষার চাষ। বাজারে ভাল দাম থাকায় নীলফামারী জেলায় বাড়তি ফসল হিসেবে কৃষকদের কাছে এবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সরিষা। অল্প খরচেই লাভ মিলছে ভালো। এ সরিষা তুলেই চাষিরা রোপণ করবেন বোরো। সরিষা বিক্রির টাকাতেই উঠে আসবে বোরো চাষের খরচ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, কৃষি প্রধান এলাকা হলো নীলফামারী। আমন ধান উত্তোলনের পরে জমি ফেলে না রেখে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন তারা। সরিষা উঠার পর ওইজমিতে প্রচুর বোরোর আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তিবৃদ্ধি পায় ও বোরোর ফলন ভাল হয়।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জেলায় এ বছর সরিষার বা¤পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে স্থানীয় কৃষিবিভাগ। আর অর্জিত হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হেক্টর জমিতে বেশী ৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬০ মেট্রিকটন। এবার অধিক (উচ্চ) ফলনশীল আগাম জাতের সরিষার চাষ করেছে চাষিরা। এরমধ্যে বারি-১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ জাত চাষে কৃষক মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় দেড় হাজার কেজি (প্রায়সাড়ে ৩৭ মন)। তবে স্থানীয় জাত টরি-৭ ফলন কম হয়, উৎপাদনের সময়ও বেশীলাগে। এ জন্য চাষ কমিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। বারি জাত ছাড়াও বিনা-৪, ৯ও ১৭ জাতের সরিষারও ফলন ভাল হয়।এরপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা বীজউদ্ভাবন করায় বর্তমানে চাষের পরিমান বেড়েছে। এরমধ্যে বারি-১৪, ১৫,বিনা-৯/১৭, ৪ ও সোনালী সরিষা (এসএস-৭৫) উল্লেখযোগ্য। আজ শুক্রবার নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া, ডাঙ্গাপাড়া গ্রামেরকৃষক সফিউদ্দিন জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে (হাল, বীজ,সার) খরচ হয় দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তিনিবলেন, এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মন সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমন এক হাজার ৯০০ টাকা দরে আট মনের দাম দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২০০ টাকা। আরবিঘায় খরচ বাদে লাভ হয় ১২ হাজার ৭০০ টাকা।একই গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী জানান, আমন ও বোরো চাষেরমাঝখানে সরিষা চাষে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বোরো ধানের ফলনও বেশীহয়। এ ছাড়াও সরিষার গাছ শুকিয়ে জ্বালানী কাজে ব্যবহার হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় নিদৃষ্ট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশীহয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফলন পেতে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়েকৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, ভাল ফলন ও বাজারে ভাল দামপেলে কৃষক লাভবান হবেন। তিনি আরও জানান, আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও কীটনাশক দিচ্ছি। ভবিষ্যতে সরিষার চাষ আরও বাড়বে বলে মনে করছি। তিনি জানান,দেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা পরিমাণ ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত সরিষা থেকে আসে মাত্র পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। আমন ও বোরো আবাদের মাঝে দেশে আবাদযোগ্য প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমি পতিত থাকে। এতে সরিষার আবাদ করা গেলে ভোজ্যতেল আমদানি কমবে। পাশাপাশি সরিষার উপজাত খৈল থেকেও বাড়তি আয় হবে।
×