ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডালের সঙ্কটের শঙ্কা টিসিবির কার্যক্রম বাড়বে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও ভোগ্যপণ্যের দাম দেশে বাড়ছে

তিন পণ্য দ্রুত আমদানির পরামর্শ

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২১ জানুয়ারি ২০২২

তিন পণ্য দ্রুত আমদানির পরামর্শ

এম শাহজাহান ॥ আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান। ইফতারি খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ওই সময় ভোজ্যতেল, চিনি এবং মসুর ডালের মতো তিন ভোগ্যপণ্যের সঙ্কটের আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল। এ কারণে দ্রুত এই তিন পণ্যের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকার। রোজায় দ্রব্যমূল্য নাগালের মধ্যে রাখতে ১৫ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর এবং বেসরকারী খাতের উদ্যোগে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর দাবিতে অনড় রয়েছেন রিফাইনাররা। তবে ভোক্তাদের স্বার্থে রোজার আগে দাম বাড়াতে আগ্রহী নয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুযোগ নিতে দ্রুত ক্রুড সয়াবিন এবং চিনি আমদানির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঋণপত্র (এলসি) খোলা সহজীকরণ এবং বন্দরে পণ্য আসা মাত্র তা দ্রুত ছাড়করণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, রোজায় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম আরও বেগবান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওমিক্রন পরিস্থিতি বাড়লে ঘরে বসেই অনলাইনে টিসিবির পণ্য কিনতে পারবেন নগরবাসী। এর পাশাপাশি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে। সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের উদ্যোগে জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই ভোজ্যতেল, চিনি এবং মসুর ডালের দ্রুত আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সভা সূত্র জানিয়েছে, এখনই আমদানি না বাড়ালে রোজায় এই তিন পণ্যের সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর বাড়তি সুযোগ নিতে পারেন। রোজা আসলেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা শুরু হয়। পণ্যমূল্য বাড়াতে কারসাজির আশ্রয় নিয়ে থাকে। এতে করে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। তবে এবার অপর তিন পণ্য বিশেষ করে পেঁয়াজ, ছোলা এবং খেজুরের মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি ভাল অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, রোজায় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের। ওই সময় যেসব পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হবে তা আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য দ্রুত আনতে কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ আগে নিশ্চিত করা হবে। আশা করা হচ্ছে সরকারী- বেসরকারী খাতের উদ্যোগে রোজায় কোন পণ্যের দাম বাড়বে না। জানা গেছে, রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে ১৫ মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর এবং বেসরকারী খাত একযোগে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য, বিদ্যুত, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, ধর্ম, রেলপথ, নৌ-পরিবহন ও বিমান পরিবহন ও পর্যটন, কৃষি, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে একটি সমন্বিত কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর মূল্য লক্ষ্য রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে। গত কয়েক মাস ধরে চাল, ভোজ্যতেল, মুরগি, আটা ও মসুর ডালের দাম উর্ধমুখী। আগামীতে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মার্চ-এপ্রিল মাসের আগেই দেশীয় পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে আসবে। ইতোমধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ওই সময় শীতের সবজিও বাজারে থাকবে। এর পাশাপাশি ও ছোলা ও খেজুরের সারাবছর চাহিদা থাকায় আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতি ভাল অবস্থায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বড় সঙ্কট হতে পারে ভোজ্যতেল নিয়ে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ার পরও রিফাইনাররা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্র্যান্ড ভেদে প্রতিটি পাঁচ লিটারের ক্যান কিনতে ভোক্তাকে ৭৪০ থেকে ৭৯০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে এই দাম সর্বোচ্চ। প্রতিটি ১ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতিলিটার ১৪৫-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। দফায় দফায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ব্যবহার কমানো ছাড়া ভোক্তার কোন উপায় নেই। তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়বেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ভোজ্যতেলের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, রোজা সামনে রেখে এখনই সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। রোজায় চাহিদা বাড়ে ৬ পণ্যের ॥ রোজায় চাহিদা বাড়ায় এমন ছয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে। এই ছয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে- ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে সারা বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারাবছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজার সময়। সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অনু বিভাগ) এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, ১৭টি ভোগ্যপণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় মনে করা হলেও রোজা সামনে রেখে আপাতত ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, ছোলা ও খেজুরের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কাজ শুরু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি এবং মসুর ডালের ওপর। আমদানি না বাড়লে ভবিষ্যতে এই তিন পণ্যের সঙ্কট তৈরি হতে পারে। এ কারণে এই তিন পণ্যের আমদানি বাড়ানো হবে। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ সারাদেশের ভোগ্যপণ্য আমদানিকারদের প্রতিনিধির সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছরের মতো এবার আমদানিকারকদের নিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করে দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। বাজারে ন্যায্যমূল্যে ভোগ্যপণ্য বিক্রির বিষয়টি নিয়ে এই কমিটি কাজ করবে। এছাড়া আমদানি পরিস্থিতির বিষয়েও সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে এই কমিটি সহযোগিতা করবে। শুধু তাই নয়, অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দিকে এখন থেকে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের শাস্তি পেতেই হবে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে যারা কারসাজির আশ্রয় নিবে তাদের এবার আর ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা-টিসিবি এবারও দ্বিগুণ পরিমাণ নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করবে সারাদেশে। সংস্থাটির মূল লক্ষ্য, রোজায় স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে সস্তায় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ এবং খেজুরের মতো ভোগ্যপণ্য পৌঁছে দেয়া। পণ্য নিয়ে কারসাজি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রমজান মাসব্যাপী বাজার মনিটরিং করা হবে। রোজায় জেলা পর্যায়ে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করবেন জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে থানা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করবেন। এছাড়া খাদ্যে ভেজালরোধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের বিশেষ টিম বাজার মনিটরিং করবে। ন্যায্যমূল্য ও সঠিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা দেখভালে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বাজারে থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাজার তদারকি করবে র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ টিম। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কাজ শুরু করবে। তিন মাস আগে থেকে প্রস্তুতি ॥ শুধু রোজা সামনে রেখে ৩০-৩৫টি দেশ থেকে এবার প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হবে। আমদানিকৃত এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছোলা, তেল, দুধ, চিনি, খেজুর মটর, মসুরসহ বিভিন্ন ধরনের ডাল। সরকারী পরামর্শ গ্রহণ করে দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও বাজারজাতকারী জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ চাল, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, চিনি, গম, পেঁয়াজ, মসলাপাতি এবং খেজুর আমদানি করার প্রস্তুতি নিয়েছে। ভোগ্যপণ্যের জায়ান্ট গ্রুপ হিসেবে খ্যাত এস আলম গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপ, এমইবি গ্রুপ, পিএইচপি ফ্যামিলি ও আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ রোজা সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছে। পেঁয়াজের দাম কমেছে ॥ দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি রোজা সামনে রেখে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনও ভাল হয়েছে। ফলে কমে আসছে পেঁয়াজের দাম। খুচরা বাজারে বর্তমান প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা অনেক বাড়বে। তবে আমদানি কার্যক্রম চালু থাকায় এ পণ্যটি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে এনবিআরের উদ্যোগ থাকবে ॥ রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার জন্য আমদানি করা অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। রোজার মৌসুমে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। নিম্ন আয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্তের বাজারে হিসাবে টান লাগে। তাই সরকার আমদানি পর্যায়ে যাতে খরচ কমে যায়, সে জন্য অগ্রিম কর কমাতে পারে। এর পাশাপাশি চিনির দাম কমাতে অগ্রিম কর কমানো হয়েছে। বিশ্ব বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে ॥ গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এ ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অনেক দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ ও লকডাউনের মতো কর্মসূচী গ্রহণ করে। ফলে ভোগ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারের তেজিভাব কমে যায়। কমেছে দামও। করোনার প্রথম ঢেউ বিশ্বে আছড়ে পড়লে সেই সময় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজারে ধস নেমেছিল। তবে চাহিদা বেড়েছিল মেডিক্যাল পণ্যসামগ্রীর। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমান ক্রুড সয়াবিন তেলের দাম নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। ওমিক্রন পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভোজ্যতেলসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম আবার কমে আসার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ভোজ্যতেল, পরিশোধনকারী, পরিবেশক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তাই দাম বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ইনডেক্সমুন্ডি ডটকমের তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত জুনে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৫১৮ ডলার, জুলাইতে ১ হাজার ৪৬৮ ডলার, আগস্টে ১ হাজার ৪৩৩ ডলার, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৩৯৮ ডলার, অক্টোবরে ১ হাজার ৪৮৩ ডলার ও নবেম্বরে ১ হাজার ৪৩৯ ডলারে বিক্রি হয়। ট্রেডিং ইকোনমিকস ডটকমের তথ্যমতে, গত ৩ নবেম্বর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯৬৬ দশমিক ০৪ টাকায়। টনপ্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ যোগ করে প্রতি মণ পাম অয়েলের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৭৯ টাকা। এর এক সপ্তাহ পর, টনে ৭ হাজার ১০৭ দশমিক ৯৪ টাকা কমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১১ টাকায়। সেই সপ্তাহে মণপ্রতি পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩০৯ টাকা। কিন্তু দেশের বাজারে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো সেই সময় ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে-ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থির করার পাঁয়তারা করছে। আগামী এপ্রিল মাসে পবিত্র রমজান শুরু হবে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পণ্যের আমদানি বাড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় রমজান মাস টার্গেট করে তিন মাস আগে থেকেই দাম বাড়াতে ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রতিলিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিল মালিকরা।
×