ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাঁরা বোঝা নন ॥ পরম স্বজন

প্রকাশিত: ২১:০৪, ১৪ অক্টোবর ২০২১

তাঁরা বোঝা নন ॥ পরম স্বজন

আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ। বার্ধক্যের হাত থেকে বাঁচার কোন সাধ্য না থাকার পরও নিজের বার্ধক্য সম্পর্কে কেউ যেন জানতে চান না, মানতে চান না, ভাবতে চান না! পাশাপাশি, প্রবীণদের কেউ দেখতে চান না, বুঝতে চান না, কাছে যেতে চান না, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চান না।অথচ আজকের প্রবীণেরাই আমাদের জন্ম দিয়েছেন, প্রতিপালন করে বড় করেছেন আর গড়ে তুলেছেন এই আধুনিক সমাজ, নগর-সংস্কৃতি আর সভ্যতা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রবীণ ব্যক্তিরা ক্রমবর্ধমান হারে অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট লক্ষ করলে দেখা যায়, বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য পরিবার ও স্বজনদের থেকে আলাদা আবাস বা আশ্রয়ের নাম বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে। মূলত অসহায় ও গরিব বৃদ্ধদের প্রতি করুণা বোধ থেকেই বৃদ্ধাশ্রমের সৃষ্টি। ছোটবেলায় যে মা-বাবা ছিলেন সন্তানের সবচেয়ে বেশি আপন, যাদের ছাড়া সন্তান কিছুই করতে পারত না, যারা নিজেদের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে মানুষ করেছেন, সব দুঃখ-কষ্ট বুকে চেপে রেখে সন্তানের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য যে মা ব্যাকুল থাকতেন, সন্তান না খেলে যিনি খেতেন না, সন্তান না ঘুমালে যিনি ঘুমাতেন না, অসুস্থ হলে যিনি ঠাঁয় বসে থাকতেন সন্তানের শিয়রে, সেই মা-বাবার শেষ বয়সের ঠিকানা এখনকার বৃদ্ধাশ্রমগুলো। এ যেন মানবতার প্রতি এক চরম উপহাস। দুই দশক আগেও আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম তেমন একটা ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটা খুবই দুঃখজনক। এক সময় যারা আমাদের বাঁচার আস্থা ছিল তারা বৃদ্ধ হলেই আমরা আর তাদের দেখতে পারছি না। অথচ তারা শুধু শেষ বয়সটা নাতি-নাতনি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে কাটাতে চান। আমরা কেন বুঝতে পারি না, আজকের আমি কয়দিন পরেই বার্ধক্যে পা দেব। এটাই জীবনের স্বাভাবিক ধর্ম। আমরা যারা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে অবহেলা করছি, তাদের বোঝা মনে করছি, বৃদ্ধাশ্রমে তাদের ফেলে রাখছি, আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি আজ তারা বৃদ্ধ হতে পারেন, কিন্তু তারা তো বৃদ্ধ হয়ে পৃথিবীতে আসেননি। তারা তো পরিবারের বোঝা ছিলেন না, বরং সন্তানরাই তো তাদের কাছে বোঝা ছিল। তারা তো কখনও সন্তানদের বোঝা মনে করেননি। সন্তানদের বড় করে তোলার জন্য তারা বিন্দু পরিমাণ ত্রুটিও রাখেননি। কত যতœ করে বুকে আগলিয়ে সন্তান লালন-পালন করেছেন। মা প্রতিটি সন্তানের জন্য কতই না কষ্ট করেছেন। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত মা সন্তানদের জন্য যে কষ্ট করেছেন, তার ঋণ কোনদিনই শোধ হওয়ার নয়। এজন্যই বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্বে যেন কোন ত্রুটি না থাকে, তা প্রত্যেক মানুষের ভাবা উচিত। বাবা-মায়ের যেন সামান্য কষ্ট না হয়, তার সমস্ত বন্দোবস্ত করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। আর সব চেয়ে বড় কথা আপনি নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠিক যেভাবে আচরণ করবেন, আপনার কলিজার টুকরা আপনার সন্তানও আপনার কাছ থেকে সেরকম ব্যবহার করতে শিখবে। তাই নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও পরিবারের প্রবীণদের বোঝা ভাবা বন্ধ করুন। বাবা-মা বোঝা নন, সবচেয়ে আপনজন, সন্তানের নির্ভরতার স্থান। তাই কোন মা-বাবার ঠিকানা যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে
×