ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

১০ আগস্ট পর্যন্তই বিধিনিষেধ ১১ আগস্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে অল্পসংখ্যক গণপরিবহনও চলবে ভ্যাকসিন না নিয়ে রাস্তায় বের হলে শাস্তি

অফিস দোকান খুলছে

প্রকাশিত: ২২:১১, ৪ আগস্ট ২০২১

অফিস দোকান খুলছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরদিন ১১ আগস্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে অল্পসংখ্যক গণপরিবহন চালু করা হবে। ১১ আগস্ট থেকে মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভ্যাকসিন না নিয়ে বের হলে শাস্তির বিধান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময় সরকার দোকানপাট, অফিস আদালত খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে সভাটি শুরু হয়। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভার্চুয়ালি বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যুক্ত ছিলেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য কারখানা আমরা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট, যানবাহনও চলবে। তবে সকল যানবাহন একত্রে চলবে না। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুরোধ করব, সীমিত সংখ্যক যেন পর্যায়ক্রমে চলে। উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, মনে করেন গাজীপুর থেকে ১০০ গাড়ি আসে প্রতিদিন ঢাকায়। ১০০ না, ৩০টি আসুক বা ৫০টি আসুক। আজ এগুলো যাবে কাল অন্যগুলো যাবে। এ রকম তারা নির্ধারণ করে দেবে। শ্রমিক-পরিবহন নেতা এবং যারা পরিবহনের মালিক, তাদের সঙ্গে বসে। তিনি বলেন, লঞ্চ, স্টিমার আছে, রেল আছে, সেগুলোও চলবে। সব যে পরিমাণে অতীতে চলছিল, সে পরিমাণ না চলে সীমিত আকারে চলবে। কর্তৃপক্ষ সেগুলো নির্ধারণ করে জনগণকে অবহিত করবে। যেমন রেল হয়তো ১০টা চলত, এখন ৫টা চলবে। কোন্ কোন্ সময় কোন্টা ছাড়বে এবং কীভাবে যাবে, এগুলো নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জনগণকে অবহিত করবে, যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। মন্ত্রী বলেন, ১১ আগস্টের পর ১৮ বছরের উর্ধে কেউ ভ্যাকসিন ছাড়া চলাফেরা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। ১১ আগস্টের পর ভ্যাকসিন না নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারবে না। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, বাস, ট্রেনে চলাচল করতে পারবে না। তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিনেটেড হতে হবে। অন্যথায় তাদের বাইরে যাওয়া চলবে না। আমরা তো সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিচ্ছি, গ্রামে গ্রামে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিচ্ছি। বলার সুযোগ নেই ভ্যাকসিন পাইনি, ১৪ হাজারে কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ বেড়েছে। সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে সেই শর্তারোপ করা হয়েছে। অফিস-আদালত ১১ আগস্ট থেকে খুলবে। এই ক’দিন বাস্তবতা লক্ষ্য করব। টেস্ট কেস হিসেবে দু-চারদিন দেখব। প্রয়োজন হলে জরুরীভিত্তিতে বসে সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, অর্থনীতি সচল রাখাও দায়িত্ব। সেজন্য কিছু শিল্পকারখানা খোলা হয়েছে। যানবাহন সব চলবে না। রোটেশন অনুযায়ী চলবে। ১০০ গাড়ি থাকলে শ্রমিক নেতারা ঠিক করবেন, অল্পসংখ্যক চলবে। সীমিত আকারে গাড়ি চলবে। রেল ১০টার জায়গায় হয়তো পাঁচটা চলবে। এর আগে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হবে। বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারী-বেসরকারী অফিস বন্ধ। খাদ্যপণ্য উৎপাদন-প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পরিবহন-সংরক্ষণ ও ওষুধখাত ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিল্পকারখানা। ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। বন্ধ দোকানপাট ও শপিংমল। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়াও নিষেধ। টিকা না নিয়ে রাস্তায় বের হলেই শাস্তি ॥ আগামী ১১ আগস্ট থেকে মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া বের হলে শাস্তির বিধান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সের কোন মানুষ চলাফেরা করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। প্রয়োজনে সরকার অধ্যাদেশ জারি করে শাস্তি বিধান করবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাত দিনে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে। সুতরাং ভ্যাকসিন ছাড়া ১৮ বছরের উর্ধে কেউ রাস্তায় বের হলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এর আগে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ দেয় সরকার। সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার আবার নতুন করে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ বাড়ানো হলো। বিধিনিষেধ দেয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি করোনা সংক্রমণ। বরং দিনকে দিন অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। দোকানপাট খুলছে ১১ আগস্ট ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে ভ্যাকসিন নেয়ার শর্তে ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী বলেন, আগামী এক সপ্তাহে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। ওয়ার্ড-ইউনিয়নে ৫ থেকে ৭টা কেন্দ্র করে ১ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। মানুষকে ভ্যাকসিন নিতে দৌড়াতে হবে না, আমাদের লোকজনই তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ১৪ হাজার কেন্দ্রে একযোগে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সেখানে আমরা বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেব। কারণ বৃদ্ধ লোকদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি বলে মনে হয়েছে। একইসঙ্গে শ্রমিক, বাসের হেলপারসহ সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। ভ্যাকসিন ছাড়া কেউ কর্মস্থলে আসতে পারবেন না। ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ভ্যাকসিন দিলেই ওয়েবসাইটে চলে যাবে। সেগুলো চেক করা হবে। ভ্যাকসিন দেয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ওয়েবসাইটে দেব। ভ্যাকসিন নিয়েছে কি না সংশ্লিষ্টরা তা যাচাই করতে পারবে। ৭, ৮, ৯ তারিখ সুযোগ রাখা হয়েছে। যাতে তারা ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা কেন্দ্র খুলতে পারেন। সময় বাড়ানো হয়েছে, ১০ আগস্ট পর্যন্ত সুযোগ দেয়া হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে যাতে খুলতে পারে সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এই সময়ে মধ্যে এত বিপুল সংখ্যক লোককে ভ্যাকসিন দিতে পারবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রতি কেন্দ্রে ৭০০ লোককে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। কিন্তু প্রতিটি ভ্যাকসিন দিতে ৫ মিনিট করে সময় নিয়ে এ কাজে সময় লাগবে প্রায় ৫৯ ঘণ্টা। সে ক্ষেত্রে প্রতি কেন্দ্র কমপক্ষে ১০টি করে বুথ তৈরি করলে টানা প্রায় ৬ ঘণ্টা করে সময় লাগবে।
×