ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লকডাউনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে যাচ্ছে

কন্টেনার জটে চট্টগ্রাম বন্দর, উৎকণ্ঠা

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ২৫ জুলাই ২০২১

কন্টেনার জটে চট্টগ্রাম বন্দর, উৎকণ্ঠা

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কোরবানির ঈদের পর শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ। এবার পোশাক শিল্পসহ প্রায় সকল ধরনের কল কারখানাও বন্ধ। দুয়ে মিলে অনেক লম্বা ছুটি। কিন্তু বন্দর সচল রয়েছে, জাহাজ আগমন স্বাভাবিকের মতোই। ইয়ার্ডে নামছে আমদানির পণ্য কিন্তু ডেলিভারি নেই। ফলে প্রতিদিনই বড় হচ্ছে কন্টেনারের স্তূপ। বিশেষ করে পোশাক শিল্প বন্ধ থাকায় পণ্য ডেলিভারিতে বড় ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ এভাবে চললে কন্টেনার পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত বন্দর ব্যবহারকারীরা। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, ইয়ার্ডের কন্টেনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার টিইইউএস। শনিবার সকালে কন্টেনার ছিল ৪২ হাজারের বেশি। প্রতিদিনই নামছে অন্তত চার হাজার কন্টেনার। কিন্তু সেগুলো ইয়ার্ডেই পড়ে থাকছে। পণ্য আনলোডিংয়ের সঙ্গে ডেলিভারির সামঞ্জস্য না থাকলে বন্দরের ওপর চাপ পড়ে। কারণ, ইয়ার্ডের বেশিরভাগ জায়গা যদি কন্টেনারের দখলে চলে যায় তাহলে বিশেষায়িত যানবাহন ও যন্ত্রপাতির চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। লম্বা ছুটি বা দৈব দুর্বিপাকে পণ্য ডেলিভারি থেমে থাকলে কন্টেনার জট অনিবার্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছরই ঈদে জট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগে যায়। এবার ঈদের সঙ্গে কড়া বিধিনিষেধ বা লকডাউন যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে আরও ভয়াবহ, এমনই মনে করছেন বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, কোরবানির ঈদের দিন শুধুমাত্র সকালের শিফটে কাজ বন্ধ ছিল নামাজের কারণে। এরপর যথারীতি কাজ শুরু হয়ে গেছে, যেমনটি প্রতিবছরই হয়ে থাকে। শুক্রবার কন্টেনার ডেলিভারি হয়েছে মাত্র এক হাজার। অথচ, জাহাজ থেকে প্রতিদিনই নামছে তিন থেকে চার হাজার কন্টেনার। সাধারণত, গড়ে দৈনিক এই পরিমাণ কন্টেনার ডেলিভারি হয়ে থাকে। কিন্তু এখন আনলোডিংয়ের চেয়ে ডেলিভারি কম হওয়ায় জটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, শনিবার জেটিগুলোতে ছিল ১১টি কন্টেনার জাহাজ। বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা ছিল আরও ১০টি। এছাড়া কয়েকটি কার্গো ভেসেল রয়েছে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ। বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি স্বাভাবিক না হলে কেমন প্রভাব পড়তে পারে এ প্রশ্নের জবাবে বন্দর সচিব জানান, পণ্য লোডিং আনলোডিং এবং ডেলিভারির মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হয়। যে পরিমাণ পণ্য নামে সে পরিমাণ রফতানি যদি না হয় তাহলে জাহাজ খালি যায়। আবার ডেলিভারি না হলে ইয়ার্ডে কন্টেনার জমা হয়ে যায়। যেহেতু লকডাউনের কারণে পোশাক শিল্পসহ কারখানা বন্ধ রয়েছে সেহেতু কিছু প্রভাব তো পড়বেই। কারণ, আমদানির পণ্যের সবচেয়ে বড় অংশই পোশাক শিল্পের কাঁচামাল। আবার রফতানি পণ্যেরও অধিকাংশই তৈরি পোশাক। যেহেতু করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছাড়া উপায় ছিল না, সেহেতু সম্ভাব্য সঙ্কট মেনে নিতেই হবে। বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রস্তাব ছিল রফতানিমুখী শিল্প বিবেচনায় পোশাক শিল্প খোলা রাখার। কারণ এর সঙ্গে অনেকগুলো সেক্টর জড়িত। যথা সময়ে রফতানি পণ্য শিপমেন্ট করা ছাড়াও বন্দরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমদানি পণ্যের ডেলিভারি গ্রহণও থমকে আছে। কারখানা বন্ধ রেখে বন্দর ও কাস্টমস এবং পণ্যবাহী যানবাহন চালু রাখলেও এর সুফল তেমন পাওয়া যাবে না। এদিকে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ৩ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া দফতর। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং শুক্রবার থেকেই একপ্রকার বন্ধ আছে। বৃষ্টিপাত থাকায় জাহাজের হ্যাচ খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া প্রবল বাতাসের কারণে ছোট লাইটার জাহাজগুলোকে বড় জাহাজের পাশের স্থির রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে বহির্নোঙ্গরেও একপ্রকারের অচলাবস্থা। সব মিলিয়ে বন্দর বড় ধরনের একটি জট পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও এর সঙ্গে মিলিয়ে ছুটি ঘোষণা করেনি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। একেক কারখানা একেক ধরনের ছুটি দিয়েছে। ফলে লকডাউনের মধ্যেও অনেক শ্রমিক ফিরে এসেছেন নগরীতে। শনিবার তারা কারখানার গেটেও গেছেন। কিন্তু বন্ধ থাকায় তাদের ফিরে আসতে হয়। চট্টগ্রাম ইপিজেডে শনিবার দেখা গেছে এ অবস্থা। ইপিজেডের শ্রমিকদের অভিযোগ, লকডাউনের মধ্যে ছুটি ঘোষণা না করায় তারা অনেক দুর্ভোগ করে ছুটে এসেছেন চাকরি রক্ষা করতে। কিন্তু শনিবার সকালে ইপিজেড গেটে গিয়ে তাদের থামতে হয়। গেট বন্ধ থাকায় কেউ ঢুকতে পারেনি। আবার কতদিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সেটাও পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। ইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলছে, পোশাক শিল্প খোলা থাকবে কিনা এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ছিল। বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটি দেরিতে হওয়ায় অনেক শ্রমিক তা জানতে পারেনি। সরকার ঘোষিত কড়া বিধিনিষেধের নির্দেশনা মেনে কারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
×