ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা, গ্রামেও ছড়াচ্ছে সংক্রমণ

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১৭ জুন ২০২১

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা, গ্রামেও ছড়াচ্ছে সংক্রমণ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছেন মানুষ। তবুও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উদাসীন সবাই। ফলে রাজশাহীতে কমছে না মৃত্যু ও সংক্রমণ। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও এখন দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ। এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন সময় তারা মারা যান। এদের মধ্যে ৭ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর ৮ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪ জন ও কুষ্টিয়ার ১ জন। এ নিয়ে চলতি মাসের ১৬ দিনে মারা গেলেন ১৬১ জন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পাঁচজনের পজিটিভ ছিল। বাকিরা শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। করোনা পজিটিভ মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে রাজশাহীর ৩ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২ জন। তিনি বলেন, মৃতদের মধ্যে ৩১-৪০ বছরে মধ্যে তিনজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন ও ৬১ বছর বয়সে বেশি বয়সী দুজন। শামীম ইয়াজদানী জানান, রোগীর চাপ বাড়ায় মঙ্গলবার এ হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে ২টি আইসিইউসহ ৩৮ বেড। এছাড়াও আরও ১৫ জন চিকিৎসক পাঠাতে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর সপ্তাহ খানেক আগে ১৫ জন চিকিৎসককে প্রেষণে এ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তিনি জানান, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২০টি আইসিইউসহ ৩০৯ বেডের বিপরিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩৪৪ জন। বাকিদের মেঝেসহ অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৮, নাটোরের ৭, নওগাঁর ৪, পাবনা ও কুষ্টিয়ার ১ জন। একই সময় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৩ জন। এদিকে টানা দুদিন কিছুটা কমার পর রাজশাহীতে ফের বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। মঙ্গলবার দুটি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৬২ জনের শরীরে করোনা পাওয়া গেছে। রাতে প্রকাশিত দুটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, আগের দিনের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার হয়েছে ৪৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। যা আগের দিন সোমবার ছিল ৩০ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগে গত শনিবার রাজশাহীতে শনাক্তের হার ছিল ৫৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং রবিবার ৪১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাজশাহীর দুটি ল্যাবে ৬৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ এসেছে ২২৯ জনের। সূত্রমতে, রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৩৩ নমুনা পরীক্ষা করে ৩২ জনের পজিটিভ আসে। এখানে শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। নাটোরের ১৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫ জনের পজিটিভ আসে। এখানে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রাজশাহী মেডিক্যালে করোনায় মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত বলে মনে করছেন রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী। মৃতদের বেশিরভাগই চিকিৎসাকালে অবস্থা খারাপ থাকছে। তাদের শারীরিক সমস্যা গত বছরের করোনার লক্ষণের চেয়ে আলাদা। এছাড়া শহরের চেয়ে এখন গ্রামের রোগী বাড়ছে বলে জানান তিনি। রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর ৪০ শতাংশই গ্রামাঞ্চলের। কারণ হিসেবে আমরা দেখছি গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি কম মানা, অবাধে সব জায়গায় চলাচল, মাস্ক না পরাসহ অন্য কারণে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে শনাক্তের হার আরও কমে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, এখন যে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, শারীরিক অন্যান্য সমস্যাও হঠাৎ করে বাড়ছে। শারীরিক অবস্থার নানান ধরনগুলো পরিবর্তন হয়েছে। চিকিৎসার সময় দিচ্ছে না এই ধরনগুলো! হঠাৎ করেই করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা বেশিমাত্রায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউ সাপোর্টের। চিকিৎসকরা জানান, গত ঈদে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে, ফলে সংক্রমণ বেড়েছে। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানলে ডেল্টা ধরন নয়- অন্য ধরনে আক্রান্তের হারও কমিয়ে আনা সম্ভব। এদিকে জেলার গ্রামগুলোতে প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করার তেমন উদ্যোগও নেই স্থানীয় প্রশাসনের। উপজেলা পর্যায়ের হাট-বাজারে জনগণের মধ্যেও করোনা নিয়ে তেমন কোন সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আর তাতেই দিনে দিনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে গ্রামের করোনা পরিস্থিতি। খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় ৯ মৃত্যু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকি চার জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান। করোনা পজিটিভ পাঁচ রোগীর একজন খুলনার ও বাকি চারজন বাগেরহাটের। এ নিয়ে করোনা হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৩১২ জন করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলো। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এখানে ১৩৯ জন ভর্তি রয়েছেন। এদিকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে আওতাধীন করোনা ডেডিকেটেড হাপতালে রোগীর চাপ অস্বাভিক বৃদ্ধি পেতে থাকায় খুলনা জেনারেল হাসপাতালকে করোনা হাসপাতালে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এখানে ৭০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চালু করা হবে বলে সংশ্ল্ষ্টি সূত্রে জানা গেছে। সাতক্ষীরায় আরও ১০০ আক্রান্ত ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০০ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। আক্রান্তের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন এবং একটি ক্লিনিকে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁয় আরও দুজনের মৃত্যু ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে দুজনই নিয়ামতপুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৬ জন। কুষ্টিয়ায় নতুন আক্রান্ত ৯৮ জন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, সীমান্তবর্তী জেলা কুষ্টিয়ায় হুহু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় সব রেকর্ড ছাড়িয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ জনে। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এ পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ১৩৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৩৪ জন। যশোরে ২০৫ জনের করোনা শনাক্ত ॥ জেলায় একদিনেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুশ’ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া মারা গেছেন পাঁচজন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ। মঙ্গলবার এ হার ছিল ৪৭ শতাংশ। বুধবার মারা গেছেন ৫ জন। ফুলবাড়ীতে একজনের মৃত্যু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর সীমান্তে বসবাসকারী এক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তির নাম আবেদ আলী (৫২)। তিনি সদর ইউনিয়নের নাখারজান এলাকার মৃত আলীমুদ্দিনের ছেলে।
×