ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাল শপথ নেবেন মমতা

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৪ মে ২০২১

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাল শপথ নেবেন মমতা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আগামীকাল বুধবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই নিয়ে তৃতীয়বার শপথ নেবেন তিনি। তার সঙ্গে শপথ নেবেন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কিছু মন্ত্রীও। এদিকে নির্বাচনের পর বিজেপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছয় বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে। জেলায় জেলায় বিজেপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে বাড়িঘর। আর নন্দীগ্রামে ভোটে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা ব্যানার্জী। তিনি আদালতে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। নন্দীগ্রামের নির্বাচনী কর্মকর্তাকে ভোট পুনর্গণনা না করতে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন মমতা। খবর আনন্দবাজার ও এনডিটিভি অনলাইনের। আগামীকাল বুধবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে রাজভবনে শপথ নেবেন মমতা ব্যানার্জী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই নিয়ে তৃতীয়বার শপথ নেবেন তিনি। টুইট করে জানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সোমবার রাজ্যপাল ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেন মমতা। রাজ্যে নতুন সরকার গঠনের আগের প্রথা মেনেই এই পদত্যাগ করেন তিনি। রাজভবনে এসে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন। রাজ্যপাল ধনখড় সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেন। পরে টুইট করে রাজ্যপাল জানান, মুখ্যমন্ত্রী তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তা গৃহীতও হয়েছে। তবে পরবর্তী সরকার গঠন হওয়ার আগে পর্যন্ত তাকেই দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। ওই টুইটের সঙ্গে রাজভবনে মমতা এবং ধনখড়ের একটি ভিডিও শেয়ার করেন রাজ্যপাল। তাতে বেশ হাল্কা মেজাজেই কথা বলতে দেখা যায় দুজনকে। এর কিছুক্ষণ পরেই টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার শপথ নেয়ার দিনক্ষণের ঘোষণা রাজ্যপাল। মমতা সোমবার দুপুরেই জানিয়েছিলেন রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। তার জন্য সময়ও চেয়েছেন রাজ্যপালের কাছে। সাতটা নাগাদ দেখা করতে চান বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যপালকে। সন্ধ্যায় ঠিক ৬টা বেজে ৪৫ মিনিটে মমতা পৌঁছে যান রাজভবনে। রাজ্যপালের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে তার। জানা গেছে, আগামীকাল ৫ মে রাজভবনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বার শপথ গ্রহণ করবেন মমতা ব্যানার্জী। তার সঙ্গে শপথ নেবেন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কয়েকজন মন্ত্রীও। বাকিরা শপথ নেবেন বৃহস্পতিবার। সোমবার সন্ধ্যায় মমতা রাজভবনে ঢোকার ঠিক ৫ মিনিট আগে রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে সম্ভবত কিছু আলোচনা ছিল তারও। তবে মমতার রাজভবনে পৌঁছনোর আগেই আলোচনা সেরে বেরিয়ে আসেন পার্থ। উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির কারণে দ্রুত শপথের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা। এ ছাড়া সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরভাবে শপথ নেয়া হবে বলেও এর আগে ঘোষণা করেছেন মমতা। রাজভবনের বৈঠকে সে কথাও রাজ্যপালকে জানানো হয়। এর আগে নবনির্বাচিত বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। বৈঠকে তিনি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, কঠিন লড়াইয়ে জয় ছিনিয়ে এনে যোগ্য জবাব দিয়েছেন। পাশাপাশি সাবধানীও হওয়ার বার্তাও দিলেন তিনি। বিধায়কদের মনে করিয়ে দিলেন, ‘বিধায়ক হয়ে গেছি বলে অহঙ্কার করলে চলবে না। জিতেছেন মানে, দায়িত্ব বেড়েছে।’ তৃণমূলের জয়ের পর দেশের একাধিক বিজেপিবিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ মমতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই কথা স্মরণ করে মমতা বলেছেন, ‘আমাদের জয়ে সারাদেশের মানুষ খুশি হয়েছেন। দেশের বিরোধীরা খুশি হয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’ রবিবার তৃতীয় বারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবারই জয়ী বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মমতা। সেখানে ঠিক হয়েছে, বিধানসভার স্পীকারের চেয়ারে আবারও বসতে চলেছেন বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পীকার নির্বাচনের দিন প্রোটেম স্পীকারের দায়িত্ব পালন করবেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরিষদীয় দলের নেতা হিসেবে মমতার নাম ঠিক হওয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, দলনেত্রী ঠিক করবেন, কে কোন দফতরের দায়িত্ব সামলাবেন। সোমবারের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি সোমবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ৫ মে শপথ নেবেন মমতা। নন্দীগ্রামে ভোট গণনায় কারচুপি হয়েছে বলে রবিবার থেকেই অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল। এবার মমতা ব্যানার্জী জানালেন, প্রাণনাশের হুমকি রয়েছে বলে পুনর্গণনার নির্দেশ দিতে ভয় পাচ্ছেন নন্দীগ্রামের রিটার্নিং অফিসার। সোমবার কালীঘাটে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল নেত্রী। সেখানে রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির মেসেজ কথোপকথন তুলে ধরেন তিনি। যেখানে বলা রয়েছে, ‘বন্দুকের নলের মুখে কাজ করতে হচ্ছে। পুনর্গণনার নির্দেশ দিলে প্রাণে মেরে ফেলা হতে পারে আমাকে।’ ঠিক কার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের ওই কথা হয়েছে, তা যদিও খোলসা করেননি মমতা। তবে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাবেন তারা। ততক্ষণ পর্যন্ত ভিভিপ্যাট, ব্যালট এবং ইভিএম আলাদা আলাদা করে সরিয়ে রাখতে হবে। তদন্ত করে দেখা হবে, সেগুলোতে কোন বিকৃতি ঘটানো হয়েছে কিনা। নন্দীগ্রামে ইভিএম পাল্টে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন মমতা। শুধু তাই নয়, ভোট পর্বে পুলিশ প্রশাসনের একটা অংশ বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। ভোটপর্বে নির্বাচন কমিশনের আচরণও পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে মন্তব্য করেন মমতা। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে হামলা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সবাইকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান মমতা। মমতা বলেন, ‘হিংসা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকতে হবে। শান্ত থাকুন। অভিযোগ থাকলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব পুলিশের।’ ভোটের ফল প্রকাশের পরেই বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় রাজনৈতিক সহিংসতা। কাঁকুড়গাছিতে এক বিজেপি কর্মীকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, মৃত বিজেপি কর্মীর নাম অভিজিৎ সরকার। তার বাড়ি কাঁকুড়গাছির শীতলাতলা লেনে। তিনি বিজেপির ট্রেড ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, রবিবার ফল প্রকাশের পরেই গলায় তার পেঁচিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিতকে। সবার চোখের সামনেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পরিবার জানায়, হামলার সময় ফেসবুক লাইভ করছিলেন অভিজিৎ। তৃণমূল দুষ্কৃতকারীরা একের পর এক বিজেপি সমর্থকদের বাড়ি ভাংচুর করছিল। সেই সময় অভিজিৎ ফেসবুক লাইভে সব দেখানোর চেষ্টা করায় তার ওপর হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। অভিজিতের মা মাধবী সরকারকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মারধরের পর অভিজিতকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। অভিজিতের ভাই বিশ্বজিতের অভিযোগ, বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ভেঙ্গে দিয়েছে দুষ্কৃতরা। থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা। নির্বাচন কমিশনেরও তারা অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
×