এখন বিনোদনের পদ্ধতি পাল্টে যাচ্ছে। আগে মঞ্চে নাটক-থিয়েটার বিনোদনের উপায় ছিল। তারপর সিনেমা এসে নাটক-থিয়েটারের জায়গা দখল করে। বিনোদনের জন্য মানুষ আগেই টিকেট কিনে অপেক্ষা করত-ভাল সিনেমা হলে তো আর কথাই নেই। প্রিয় নায়ক-নায়িকার ছবি দেখতে সিনেমা হলগুলো সদা সর্বদাই পরিপূর্ণ থাকত। অনেক সময় টিকেট কিনতে গিয়ে ‘হাউজফুল দেখে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে আসতে হতো। এক সময় হিন্দী সিনেমা দেশের সিনেমা হলগুলো দখল করে নিয়েছিল। দিলীপ কুমার, মধুবালার অভিনীত ছবি দেখতে মানুষ সিনেমা হলে ভিড় জমাত। বাংলা সিনেমার জগতে উত্তম কুমার সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে ভীষণ ভিড় জমাত। একটি পূর্ণিমা হলে টিকেট না পেলে দূরের হলে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করত।
যখন ছাত্র ছিলাম- তখন বাংলা সিনেমা দেখার জন্য ঢাকা শহরের সব ক’টি সিনেমা হল ছুটে বেড়িয়েছি। মনে পড়ে ‘মহানগর’ সিনেমার টিকেট না পেয়ে ছাত্ররা বলাকা হল ভাংচুর করল। এমন দিন ছিল- তারপর ঘরে বসেই সিনেমা দেখতে শুরু করলাম। হিন্দী, বাংলা ছবি- আমরা ঘরে বসেই দেখতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে সিনেমা হলগুলো তাদের ঢোকার জৌলুস হারিয়ে ফেলল। শুরু হলো ভিসিআরে ছবি দেখা।
ভিসিআর আসার পর সিনেমা হলগুলোর অবস্থা আরও বেশি শোচনীয় হয়ে পড়ল। এখন বিনোদনের ধরন পাল্টেছে। টেলিভিশনের পর্দায় এখন আর বিনোদন সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইউটিউব আর ফেসবুকে বিনোদন স্থান করে নিয়েছে। একটি দেশের প্রজন্ম কৃষ্টি থাকা একান্ত প্রয়োজন। কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতার বাহন-ঘন ঘন কৃষ্টি, সংস্কৃতির পরিবর্তন দেশে বিরাজমান সভ্যতার পরিপন্থী। তাই দেশের কৃষ্টি ও সভ্যতাকে ধরে রাখাটা অতীব জরুরী।
একই ফুল থেকে মৌমাছি আহরণ করে মধু আর মাকড়সা আহরণ করে বিষ। বিনোদনের নামে খারাপ জিনিসটা বেছে নিলে ভবিষ্যত প্রজন্ম উচ্ছন্নে যাবে। তাই আমাদের উচিত বদলে যাওয়া বিনোদনের হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করা। দেশের গুণীজনদের উচিত এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে কিভাবে নতুন প্রজন্মকে এর বিষময় ফল থেকে রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে যথাযথ উপায় উদ্ভাবন করা। তা না হলে বদলে যাওয়া বিনোদন নব প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকার করে দেবে।
লেক সার্কাস, ঢাকা থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: