(বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্যমোদীদের কাছে মার্কিন কবি এ্যালান গিন্সবার্গ একটা পরিচিত নাম। বেশি জনপ্রিয় হয়ে আছেন তাঁর বিখ্যাত ‘ঝবঢ়ঃবসনবৎ ড়হ ঔবংংড়ৎব জড়ধফ’ কবিতার জন্য। দরাজ গলার প্রতিবাদী কবি এ্যালান গিন্সবার্গ (জুন ৩, ১৯২৬- এপ্রিল ৫, ১৯৯৭) স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও প্রকৃতির সুরক্ষায়। ঐড়সব ড়িৎশ (বাসার কাজ) তাঁর অন্যতম বিখ্যাত কবিতা। এই কবিতায় সমস্ত জল ও ভূভাগ থেকে অনিয়ম দূর করার কথা বলেছেন। শিল্পকারখানা থেকে যে বর্জ্য গ্যাস সালফার ও নাইট্রেট নির্গত হয় তা মেঘের বাষ্পের সঙ্গে মিশে শক্তিশালী এসিড হয়। বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। এই এসিড রেইন ক্ষতি করে স্ফিংস, পিরামিড ও তাজমহলের। ক্ষতি করে গ্রীকের পার্থনেন শহরের মতো অনেক শহরের পুরাকীর্তির। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় একটা রাসায়নিক গ্যাস মার্কিন সেনারা ব্যবহার করত। নাম এজেন্ট অরেঞ্জ। এটা দিয়ে গাছপালা মেরে শূন্য করা হতো বন জঙ্গল যেন শত্রু সৈন্য লুকায়ে থাকতে না পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তিনি দুটো স্থানের নাম উল্লেখ করেছেন কবিতায় যেখানে পারমাণবিক স্থাপনা আছে। জায়গাগুলোর নাম রকি ফ্লাটস ও লস এলামস। তিনি সোচ্চার ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রিয়পাত্র ছিলেন প্যাট্রিক গ্রে। তিনি ছিলেন এফবিআইয়ের প্রধান। অন্যরা তাকে ঠাট্টা করে নাম দিয়েছিল ঞধঃঃষবঃধরষ এৎধু, ঞধঃঃষবঃধষব মানে হলো বিশ্বাসঘাতক।
কবি এ্যালান গিন্সবার্গ তাঁর এই কবিতাটা উৎসর্গ করেছিলেন মার্কিন কবি, নাট্যকার ও প্রফেসর কেনেথ কোচ (ফেব্রুয়ারি ২৭, ১৯২৫-জুলাই ৬, ২০০২) কে। কবিতাটা লেখা ২৬ এপ্রিল, ১৯৮০ তে। এটা প্রকাশিত হয় তাঁর ঈড়ষষবপঃবফ চড়বসং, ১৯৪৭-১৯৮০ এ।)
লন্ড্রি করার সময় মনে হয় আমার ময়লা ইরানকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে পারতাম
লন্ড্রি মেশিনে আমার যুক্তরাষ্ট্রকে ঢুকিয়ে দিতাম,
ঢেলে দিতাম আইভরি সাবান, ঘষে মেজে দিতাম আফ্রিকা,
সব পাখি আর হাতিদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতাম জঙ্গলে।
আমি আমাজন নদীটাকে পরিচ্ছন্ন করে দিতাম,
পরিষ্কার করে দিতাম তেল ভাসা ক্যারিবিয়ান ও গালফ উপসাগর,
উত্তর মেরু থেকে মুছে দিতাম ধোঁয়াশা, মুছে দিতাম আলাস্কার পাইপলাইন,
‘রাব এ ডাব ডাব’ গান গেয়ে ধুয়ে দিতাম রকি ফ্লাটস আর লস আলামস
নিষ্কাশন করে দিতাম লাভ ক্যানাল থেকে জ্বলজ্বলে তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম
পার্থেনন ও স্ফিংস থেকে মুছে দিতাম এসিড-বৃষ্টি
সমস্ত আবর্জনা সরিয়ে নীলে ভরে দিতাম ভূমধ্যসাগরের অববাহিকা
কিছু নীল ফিরিয়ে দিতাম আকাশে রাইন নদীর উপর,
বিরঞ্জিত করে দিতাম মেঘ যেন বরফ নেমে আসে বরফের মতো সাদা হয়ে।
পরিশোধন করে দিতাম হাডসন, টেমস ও নেকার নদী সমূহ
সরিয়ে দিতাম গাদ ইরি হ্রদ থেকে
তারপর এশিয়াকে বড় দলা করে কাপড় ধোয়ার মেশিনে ছুড়ে দিয়ে
ধুয়ে দিতাম রক্ত ও অরেঞ্জ বোমার দাগ
রাশিয়া ও চীনের জগাখিচুড়ি কাজ ঝেড়ে ফেলে নিংড়ে নিয়ে আসতাম,
চেপে নিংড়ে বের করে আনতাম যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসঘাতক গ্রের মধ্য আমেরিকার পুলিশি রাজ্য,
আর গ্রহটাকে কাপড় শুকানোর যন্ত্রে দিয়ে বসে থাকতাম ঠাঁয় বিশ মিনিট অথবা অনন্তকাল যতক্ষণ না পরিষ্কার হয়ে বের হয়ে আসে।