ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ২ ডিসেম্বর ২০২০

মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমলেও মূলধন সংরক্ষণ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। সা¤প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ছাড়ের পরও চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ও বেসরকারি ১১ ব্যাংক মোট ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর আগে জুন প্রান্তিক শেষে ১০ ব্যাংকে ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। ব্যাপক ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ হিসাবায়নের শর্তে শিথিলতা আনাসহ নানা উপায়ে কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমানোর পরও মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং রীতি ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ন্যূনতম পরিমাণ হিসেবে মূলধন রাখতে হয়। এ শর্ত পূরণ করতে পারেনি ১১ ব্যাংক। অন্যদিকে ব্যাসেল নীতিমালার বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে প্রতিটি ব্যাংককে আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। গত ডিসেম্বর শেষে এ দুই হিসাবে প্রতিটি ব্যাংকের মূলধন হওয়ার কথা সাড়ে ১২ শতাংশ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯ ব্যাংকের মধ্যে ৪২টির মূলধন সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে আছে। ঘাটতিতে থাকা ১১ ব্যাংকসহ ১৭ ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণ এর কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। তবে আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এতে করে সব মিলিয়ে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত জুনে যা ছিল ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ছাড়ের কারণে খেলাপি ঋণের মতো মূলধন পরিস্থিতিরও প্রকৃত অবস্থা প্রতিফলিত হচ্ছে না। চলতি বছরে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংককে ২৬ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণে ছাড় দেওয়া হয়। এ অর্থ আগামী তিন বছরে রাখতে হবে। এর বাইরে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকও একই রকম ছাড় পেয়েছে। মূলধন সংরক্ষণে এসব ব্যাংকের বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকার পরও প্রতিবেদনে এর কোনো প্রতিফলন হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ব্যাপক ছাড়ের পরও রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি এখন ঘাটতিতে রয়েছে। এগুলোর ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। অবশ্য দীর্ঘমেয়াদে প্রভিশন রাখার সুযোগ দেওয়ার আগে গত ডিসেম্বরে এসব ব্যাংকের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল। সেপ্টেম্বর শেষে তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে সোনালী ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। আগের প্রান্তিকে ঘাটতি থাকলেও এবার তালিকা থেকে বের হয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক। রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ২৭২ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে বেসিক ব্যাংকের। পর্যায়ক্রমে জনতার ঘাটতি ২৫৮ কোটি টাকা, রূপালীর ২১৩ কোটি ও সোনালী ব্যাংকের ১১৭ কোটি টাকা। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ১০ হাজার ৬০২ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এক হাজার ৩৮২ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে এক হাজার ৬১১ কোটি, বাংলাদেশ কমার্সের এক হাজার ৬৮ কোটি ও পদ্মা ব্যাংকের ২৫০ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। বিদেশি মালিকানার ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতির পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা। সাধারণভাবে খেলাপি ঋণ বাড়লে মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। তবে করোনার কারণে জানুয়ারি থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত কেউ কিস্তি না দিলেও তাকে খেলাপি দেখানো যাবে না। এ সুযোগের ফলে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ এক হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা কমে সেপ্টেম্বর শেষে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকায় নেমেছে। মোট ঋণের যা ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২১ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা কম।
×